এলাকাবাসী জানান, ভারতীয় সীমান্তবর্তী এই নলকূপ শুধু ভাবেরমুড়া গ্রামের মানুষের নয়, আশপাশের পাঁচ-ছয়টি গ্রামের মানুষের পানির প্রধান ভরসা। এমনকি সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের ত্রিপুরা থেকেও অনেকে এখানে আসেন পানি সংগ্রহ করতে। কেউ পান করছেন খাবার পানি হিসেবে, কেউ করছেন ওযুতে ব্যবহার, আবার কেউ আসছেন বিশ্বাসের টানে।
স্থানীয় কামাল মিয়া সময় সংবাদকে বলেন, ‘এখানে দরবার শরীফ থাকায় প্রতি মাসে এবং বছরে মিলাদ মাহফিলে আয়োজন করা হয়। কুমিল্লা বিভিন্ন উপজেলা থেকে ভক্তরা মাজারে আসতেন, এই সময় তাদের ওজু করার বা পানি পান করার ভালো উৎস ছিল না। পরে এই নলকূপের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করলে তারা নলকূপটি স্থাপন করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আশ্চর্যের বিষয় হাতল ছাড়াই এই নলকূপ দিয়ে অনবরত দিনরাত পানি ঝরতে থাকে। এই নলকূপ থেকে আশপাশে পাঁচ-ছয়টি গ্রামের মানুষ বিশুদ্ধ খাবার পানি নিয়ে যায়। তা ছাড়া গোসল ওজু হাতমুখ ধোঁয়াসহ সব নিত্য প্রয়োজনীয় কাজ এই নলকূপের পানি দিয়ে করা হয়।’
আরও পড়ুন: নেত্রকোনার পাহাড়াঞ্চলে পানির কষ্ট দূর হবে কবে?
স্থানীয় হারুন মিয়া নামের আরেকজন সময় সংবাদকে বলেন, ‘মাজারের পাশে এই নলকূপ হওয়ার কারণে এবং হাতল ছাড়া অনবরত পানি ঝরায় মাজারে আসা ভক্তরা এই নলকূপের পানি ঝরা বিষয়টি অলৌকিকভাবে নিয়েছেন। অনেকে ভাবছেন এর পানি পান করলে আরোগ্য লাভ করা যায়। নিয়ত করে এই নলকূপের পানি পান করলে মনের আশা পূরণ হয় বলে অনেকে দাবি করছেন। এই নলকূপের পানি অনেকের কাছে বিশ্বাস ও আস্থার প্রতীক।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখানকার কৃষি জমিও এই পানির খালে সেচ পাচ্ছে। খরা মৌসুমে যখন অন্য এলাকায় মানুষ পানির জন্য হাহাকার করেন, তখন ভাবেরমুড়ার কৃষকরা নির্ভর করে এর পানির ওপর। ভক্তদের বিশ্বাস, এই পানিতে রয়েছে আরোগ্যদানের ক্ষমতা। তাই প্রতিদিনই এখানে ভিড় করছেন অসংখ্য মানুষ। স্থানীয়রা একে মনে করেন আল্লাহর বিশেষ আশীর্বাদ।’
হারুন মিয়া বলেন, ‘ভবের মোড়া এলাকাটি ভারতের সীমান্তবর্তী হওয়ার কারণে ত্রিপুরার নজরপুরা এলাকা থেকে প্রতিদিন অসংখ্য লোকজন আসেন বিশুদ্ধ পানি নিয়ে যাওয়ার জন্য। আবার অনেকে আসেন গোসল করার জন্য। ত্রিপুরা বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এখানে এসে পানি সংগ্রহ করেন।’
আরও পড়ুন: মানিকগঞ্জে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট, জনজীবনে ভোগান্তি
ভারতের ত্রিপুরা নজরপুর এলাকার থেকে আসা শরীফ নামে এক যুবক বলেন, এটি সত্যিই অলৌকিক ঘটনা, হাতল ছাড়া নলকূপ দিয়ে অনবরত পানি ঝরছে। আমরা প্রতিনিয়ত এখান থেকে পানি নিয়ে যাই। সাধারণত শীতকালে খাল-বিলের পানি, পুকুরে পানি অনেক ঠান্ডা থাকে কিন্তু এই নলকূপের পানি গরম থাকে। মানুষজন পুকুরে গোসল না করে এই নলকূপে গরম পানি দিয়ে গোসল করেন।’
স্থানীয় মাহফুজ বলেন, ‘এই নলকূপ থেকে দিনরাত ঝরছে পানি, সেই পানি খাল বিল পুকুরের মাধ্যমে আশপাশে কৃষি জমিতে পৌঁছে যাচ্ছে। স্থানীয় কৃষকরা কয়েক শত কৃষি জমিতে এই নলকূপের পানির মাধ্যমে সেচ দিচ্ছেন। বিশেষ করে খরা মৌসুমেও এখানকার কৃষকদের পানির সংকটে পড়তে হয় না। এই নলকূপের পানির মাধ্যমে খরা মৌসুমেও তারা কৃষি কাজ করতে পারেন।’
শুধু একটি লোহার নলকূপ কিন্তু তার ধারায় লুকিয়ে আছে অজানা রহস্য আর অসংখ্য মানুষের বিশ্বাস। ভাবেরমুড়ার গ্রামবাসীর কাছে এটি শুধু পানির উৎস নয়, বরং জীবনের এক অলৌকিক প্রতীকও।