কার্কি নেপালের ইতিহাসে প্রথম এবং একমাত্র নারী যিনি শীর্ষ বিচারিক পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
এই দ্বন্দ্ব একটি রায়কে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছিল। কার্কির বেঞ্চ জাতীয় পুলিশ প্রধানের সরকারের নিয়োগ বাতিল করে দিয়ে যুক্তি দিয়েছিল যে, সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে এই পদ দেয়া উচিত।
নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী কেন্দ্র), নেপালি কংগ্রেস এবং ছোট দলগুলোসহ ক্ষমতাসীন জোট কার্কিকে বরখাস্ত করার জন্য তোড়জোড় শুরু করে এবং বিচারিক ক্ষমতার অপব্যবহারের জন্য তার বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব দাখিল করে প্রতিক্রিয়া জানায়। কমপক্ষে ২৪৯ জন আইনপ্রণেতা প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেছেন, যা তদন্ত শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় সংসদের এক চতুর্থাংশেরও বেশি।
আরও পড়ুন:সুশীলা কার্কিকে নেপালের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা
নেপালি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, নিয়োগ নিয়ে জোটের মধ্যে মতবিরোধ উত্তেজনা আরও বাড়িয়েছে।
বিষয়টি তদন্ত করার জন্য একটি অভিশংসন কমিটি গঠন করা হয়েছিল, যা বিশ্বব্যাপী দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিল এবং রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল নেপালে কার্কিকে বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে তুলে ধরেছিল।
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও তার পক্ষে সাড়া দিয়েছে সেই সময়।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তৎকালীন এশিয়া পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস সেই সময় বলেছিলেন, ‘প্রধান বিচারপতি কার্কিকে অভিশংসনের জন্য ক্ষমতাসীন জোটের পদক্ষেপ বিচারিক সিদ্ধান্তকে অগ্রাহ্য করার প্রচেষ্টার চেয়ে কম কিছু নয়। এটি রাজনৈতিক শক্তির হস্তক্ষেপ ছাড়াই বিচার বিভাগকে কাজ করতে সক্ষম হওয়ার মৌলিক নীতি লঙ্ঘন করে।’
এদিকে, ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অফ জুরিস্টস সেন্টার ফর দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্স অফ জাজেস অ্যান্ড লয়ার্সের তৎকালীন প্রধান ম্যাট পোলার্ড বলেন, ‘নেপালের ইতিহাসে একজন বর্তমান প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে এই অভিশংসন প্রস্তাব, নেপালের সুপ্রিম কোর্টের স্বাধীনতা এবং দেশে ক্ষমতার পৃথকীকরণ সম্পর্কে অত্যন্ত গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করে।’
এমনকি সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলিও সরকারের এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন। অন্যদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষক লোক রাজ বড়াল আল জাজিরাকে বলেছেন, কার্কি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি কিছুটা আক্রমণাত্মক ছিলেন, যা রাজনীতিবিদদের বিরক্ত করেছিল।’
খবরে বলা হয়েছে, তৎকালীন নেপালের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিমলেন্দ্র নিধির হস্তক্ষেপ, প্রচণ্ডকে পিছু হটতে বাধ্য করেছিল।
সুপ্রিম কোর্ট সংসদকে অভিশংসন প্রস্তাব স্থগিত রাখার নির্দেশও দিয়েছিলেন। কার্কি ২০১৭ সালের জুন মাসে অবসর গ্রহণ করেন, আদালত তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে রায় দেন।
আরও পড়ুন:নেপালের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন সুশীলা কার্কি
সম্প্রতি দুর্নীতি ও সামাজিকমাধ্যমে সরকারি নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে ওঠে। জেন-জি সদস্যদের সাথে নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েকদিনের টানা সংঘর্ষে ১৯ জন নিহত হওয়ার পর বিক্ষোভ আরও জোরদার হয। এক পর্যায়ে কেপি শর্মার সরকারের পতন ঘটে এবং নতুন অন্তর্বর্তী সরকার হিসেবে কার্কিকে নিয়োগ দেয়া হয়।
সূত্র: এনডিটিভি
]]>