অনূর্ধ্ব-১৯ খেলা ক্রিকেটার জামি কেন ডাকসুতে প্রার্থী হলেন?

১ সপ্তাহে আগে
বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় দলে খেলেছেন জহিন ফেরদৌস জামি। খেলছেন প্রথম বিভাগ ক্রিকেট। ব্যাট-বলের ব্যস্ততার মাঝেই হঠাৎ নতুন পথে পা বাড়িয়েছেন এই ক্রিকেটার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ক্রীড়া সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন। খেলার মাঠ থেকে রাজনীতির ময়দান, ডাকসুর লড়াই- সবকিছু নিয়ে সময় সংবাদের সঙ্গে কথা বলেছেন জামি।

সময় সংবাদ: পেশাদার ক্রিকেটে খেলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা, ডাকসুতে নির্বাচন... এই জার্নিটা সম্পর্কে বলুন


জামি: আমার বাড়ি বগুড়া। বাসার পাশেই স্টেডিয়াম ছিল (শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম)। ২০০৪ সালে বগুড়ায় সম্ভবত বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার একটা ম্যাচ ছিল ডে-নাইট। তখন বগুড়ার সবার মধ্যে একটা এক্সাইটমেন্ট ছিল। ওখান থেকেই ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহের শুরু। ২০১২ সালে ক্লাস ফাইভে পড়া অস্থায় বিকেএসপিতে ট্রায়াল দিতে যাই। খুব ভালো করতে পারিনি। পরবর্তীতে অনূর্ধ্ব-১৪ খেলি। ওই বছরই বিকেএসপিতে ক্যাম্প হয়। ৭ দিনের ক্যাম্পে সর্বোচ্চ রান করি। এরপর বিকেএসপিতে আসি। রাজশাহী থেকে ১৬ ডিভিশন খেলি। ১৬ এবং ১৮ ডিভিশন আমি একবার করে পেয়েছি। খুব দ্রুতই ডাক পাই অনূর্ধ্ব-১৯ এর ক্যাম্পে। ওয়াইসিএল (ইয়ুথ ক্রিকেট লিগ) খেললাম, স্কিল ক্যাম্প করলাম। সেসময় আমার এসএসসি পরীক্ষা ছিল। ভাবছিলাম একটা ম্যাচ খেলেছি, এখন আর এসএসসি পরীক্ষায় যাবো না। পরবর্তীতে আমার বাবা ম্যানেজারকে কল দেন। ফলে আর খেলা হয়নি। বিকেএসপি থেকে জানায়, পরীক্ষা না দিলে বহিষ্কার করে দিবে। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে বিকেএসপি দলে ছিলাম, যদিও শুধু পানিই টেনেছি (হাসি)। প্রথম ডিভিশনও খেললাম বিকেএসপির হয়ে। ওই বছর আমার বিকেএসপি লাইফ শেষ হলো। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এলাম। একদিন ফুটবল খেলতে গিয়ে চোট পাই। পরের দুই সিজন আর খেলা হয়নি। গত বছর আমি ফার্স্ট ডিভিশন খেলেছি।


সময় সংবাদ: পেশাদার ক্রিকেটের মাঠ আর রাজনীতির মাঠ- ফারাকটা কেমন দেখছেন?


জামি: পেশাদার ক্রিকেটে আপনাকে অনেক ডিসিপ্লিনড হতে হবে। ঘুম থেকে ওঠা লাগবে সময়মত, অনুশীলন, স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। পরিমিত বিশ্রাম নিতে হবে। আবার অনুশীলন, ঘুম, জিম-ফিটনেস সেশন। নির্বাচনের রাজনীতিতেও অনেক কাজ। ঘুম থেকে উঠে সবার সাথে পরিচিত হওয়া, নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে কানেকশন তৈরি, ভালোভাবে ওঠাবসা করা, অনেক বিষয় নেগোশিয়েট করা; এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় দৌড়ঝাঁপ করা। আগে অনুশীলনে যেই সময়টা ব্যয় করতাম এখন সেটা এসব কাজে ব্যয় করি। অনেক নতুন ধরনের অভিজ্ঞতা। কিন্তু আমি এনজয় করছি।


সময় সংবাদ: কোনটা কঠিন বেশি?


জামি: দুটোই অনেক কঠিন কিন্তু ইন্টারেস্টিং।


সময় সংবাদ: পেশাদার ক্রিকেটের চাপ সামলে ডাকসুতে যেতে চান কেন?


জামি: ঢাবিতে আসার আগে মনে করতাম ডাকসুর তেমন গুরুত্ব নেই, এটা শুধু নেতা হওয়ার মঞ্চ। দিন যত এগোতে থাকল বুঝতে শিখলাম যে, রাজনীতিতেও একটা চেক এবং ব্যালেন্স থাকা জরুরি। নয়তো নতুন করে আরেকটা আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগ তৈরি হয়ে যেতে পারে। এই জায়গা থেকে ডাকসু অনেক জরুরি।


আমি ডাকসুতে আসার কারণ, ক্রীড়ার এই সেক্টরটা সম্পর্কে অনেক বেশি জানি। এখানে কী কী করতে হবে আমার জানা আছে অনেকটাই। আর আমি এমন একটা ভয়েস হব যেটা একদমই রাজনৈতিকভাবে বায়াসড হবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়াঙ্গনে আমূল পরিবর্তন আনতে একজন মানুষ দরকার। আমার ধারণা আমি সেই ভিশনারি মানুষ। ক্রীড়াঙ্গনের আমার সতীর্থ, বড় ভাই ছোট ভাইরা আমাকে সেরকম জায়গায় দেখে। এ কারণেই ডাকসুতে আসা।

 

আরও পড়ুন: ডাকসু নির্বাচন: ১০ দফা ইশতেহার ঘোষণা ছাত্রদল প্যানেলের


সময় সংবাদ: কোনো প্যানেলে যাননি কেন?


জামি: দলীয় প্যানেলে থাকলে সেই দলের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে হতো। স্বতন্ত্র প্যানেলগুলো নামে স্বতন্ত্র হলেও একই বিষয়। তাদের নেতারাও কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের। আমি স্বতন্ত্র। কারণ, নির্বাচিত হলে আমাকে ওই প্যানেলের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে কিছু করতে হচ্ছে না। যারা আসলেই সাধারণ শিক্ষার্থী, তারা চায় তাদের মধ্য থেকে কেউ প্রতিনিধি হোক। তাই আমার প্যানেল শিক্ষার্থীদের নিয়ে। আসলে সব শিক্ষার্থীর সঙ্গে থাকতেই প্যানেলে যাইনি।


সময় সংবাদ: পেশাদার অনেক খেলোয়াড় আপনার সতীর্থ, তাদের মধ্যে কয়েকজন আবার ঢাবিরই (ডাকসু ভোটার)। আপনাকে নিয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া কী?


জামি: হৃদয় (তাওহীদ হৃদয়) ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয় ছোটবেলায়। বগুড়ায় একসঙ্গে বড় হয়েছি, খেলছি। অনেকগুলো টুর্নামেন্ট একসঙ্গে খেলা হয়েছে। তানজিম হাসান সাকিব আমার বিকেএসপির রুমমেট। আমরা একসঙ্গে বড় হয়েছি। একসঙ্গে অনেক অনেক জায়গায় খেলছি। নাবিলের (প্রান্তিক নওরোজ নাবিল) সঙ্গেও আমার লম্বা জার্নি। এখনও আমরা একসঙ্গে, একই ডিপার্টমেন্টে। বাকিরা যারা আছেন, তারা সবাই মনে করে আমি এই পদের জন্য সেরা ক্যান্ডিডেট। কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমি একাই দাঁড়িয়ে যাব সেটা তারা বিশ্বাস করে।


সময় সংবাদ: রাজনীতিতে এসে ক্রিকেট ক্যারিয়ারকে হুমকির মুখে ফেলছেন না?


জামি: ডাকসুতে এলে, নীতি-নির্ধারক পর্যায়ে গেলে এখানে একটু সময় দিতে হতে পারে। আমি যে সবসময় ক্রিকেট থেকে দূরে সরে যাব এমনটা না। ডেডিকেশন থাকলে দুটো একসঙ্গে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব। এখন নির্বাচনের এত ব্যস্ততার মধ্যেও আধা ঘন্টা বা এক ঘন্টা নিজের জন্য বের করি। জিমে যাই, ফিটনেস ধরে রাখার চেষ্টা করি। প্যাশন থাকলে সময় ম্যানেজ হয়েই যায়।

 

আরও পড়ুন: ছাত্রদলের সব সমর্থক একসঙ্গে হলে অনেকে বিভ্রান্ত হবেন, বলবেন ‌‘ছাত্রলীগ স্টাইলে রাজনীতি করছি’


সময় সংবাদ: ক্রীড়া সম্পাদক হিসেবে এলে কী করবেন?


জামি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খেলাটাকে সবাই বিনোদন হিসেবে নেয়। ক্যারিয়ার বা পেশা হিসেবে নেয়ার প্রবণতা নেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে। এখানে শর্টপিচ টুর্নামেন্ট হয়। ফুটসাল হয়। শুধু এক্সপোজারের জন্য। আমরা কি এটাকে একটু পেশাদার পর্যায়ে নিতে পারি? অবশ্যই পারি। আমাদের সেই সুযোগ-সুবিধা আছে। শুধু উদ্যোগের অভাব। আর আমার আরেকটা লক্ষ্য ক্রীড়াঙ্গন রাজনীতিমুক্ত রাখা। এখান থেকে পেশাদার খেলোয়াড় বের করা যায় বলে মনে করি আমি। বিশ্ববিদ্যালয়ের জুডো কারাটে সবসময় ভালো করে। সেই খেলোয়াড়দের কি আমরা ফেডারেশন পর্যন্ত নিতে পেরেছি? যদি খেলোয়াড়রা ওই সুবিধা পায় তাতে ওদের খেলার সুযোগও বাড়ছে, পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ভালো ফুটবলার ও অ্যাথলিটকে চিনি যারা সুযোগের অভাবে টিউশন করে খরচ চালায়। তারা দেশকেও প্রতিনিধিত্ব করতে প্রস্তুত, কিন্তু সুযোগ নেই। আমাদের এখানে অনেক ভালো খেলোয়াড় আছে৷ মেয়েদের মধ্যে অনেকে ভালো ব্যাডমিন্টন এবং টেবিল টেনিস খেলে। বিদেশে টুর্নামেন্ট খেলার সুযোগও পায়। কিন্তু নিয়মিত খেলা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। এসব সুযোগ করার ব্যবস্থা নিতেই আমার ডাকসুতে আসা।


অবকাঠামোর কথা যদি বলি। আমি দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নেব। আন্তর্জাতিক মাঠে দেখা যায় টানা দুই ঘণ্টা বৃষ্টির পর আধা ঘণ্টার মধ্যেই খেলা শুরু হয়। এখানে এক ঘন্টা বৃষ্টি হলে ৩ দিন খেলা বন্ধ থাকে। সো এই মাঠটায় তাহলে কি করা উচিত?  বিশ্ববিদ্যালয়ের যে পরিমাণ খেলার প্রতি বাজেট থাকে ওইটার খুব নগণ্য অংশ দিয়েই এসব করা যায়। জিমনেশিয়ামের পাশে একটা ইনডোর করার কথা ছিল। ভর্তি হওয়ার পর থেকে আমি দেখছি, সেটার খুবই বেহাল দশা। চাইলেই এটা আমরা মেয়েদের জন্য দিয়ে দিতে পারি। মেয়েরা সেখানে আর্চারি বা ইনডোর গেমস খেলতে পারবে। ভার্সিটিতে ক্রীড়া সপ্তাহ হয় না, এটাও চালু করার উদ্যোগ নিতে চাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিকেটারদের নিয়ে একটি ফ্র‍্যাঞ্চাইজি লিগের মতো করা যায় কিনা, সেটা নিয়েও ভাবছি।


সময় সংবাদ: তাওহীদ হৃদয়, তানজিম সাকিব, মাহমুদুল হাসান জয়, নাঈম হাসান, পারভেজ হোসেন ইমন এবং দিয়া সিদ্দিকির মতো তারকা ক্রীড়াবিদদের নিয়ে প্রচারণার ভিডিও বানিয়েছেন...


জামি: আমি তাদেরকে শুধু জিজ্ঞেস করেছি যদি নির্বাচনে দাঁড়াই সমর্থন পাবো কি না। তাদের অনেক ফলোয়ার আছে আর তারা তাদেরকে আদর্শ মানে। আর সেই জায়গা থেকেই ভিডিওটা বানানো। আমি শুধু গ্রুপে একটা মেসেজ করেছিলাম যে, নির্বাচন করছি, প্রচারণার জন্য ভিডিও লাগবে। অনেকেই নিজের থেকে রেসপন্স করেছে। সবারটা অ্যাড করা সম্ভব হয়নি। যেহেতু সবাই আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছে। আমিও সেটা রাখার চেষ্টা করব।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন