অনিশ্চয়তায় দেশের ৬ রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকল, টাস্কফোর্সের প্রস্তাবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘না’

২ দিন আগে
ঘোষণার ৯ মাস পার হলেও বন্ধ থাকা ৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকল চালু করা সম্ভব হয়নি। টাস্কফোর্স এসব মিল আধুনিকায়ন করে ধাপে ধাপে উৎপাদনে নেয়ার জন্য অর্থ বরাদ্দের সুপারিশ করলেও অর্থ মন্ত্রণালয় এগুলোকে লোকসানি প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে বরাদ্দ দিতে অসম্মতি জানিয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি স্থানীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে টেকসই পরিকল্পনার মাধ্যমে চিনিকলগুলো চালুর উদ্যোগ নেয়া জরুরি।

২০২০ সালে আওয়ামী সরকার লোকসানের কারণ দেখিয়ে দেশের ৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকল বন্ধ করে দেয়। এতে কয়েক হাজার শ্রমিক ও কর্মচারী বেকার হয়ে পড়েন। বন্ধ হওয়া চিনিকলগুলো হলো- শ্যামপুর সুগার মিল, সেতাবগঞ্জ সুগার মিল, পঞ্চগড় সুগার মিল, পাবনা চিনিকল, পঞ্চগড় সুগার মিল এবং কুষ্টিয়া চিনিকল।

 

তবে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে একটি চিঠির মাধ্যমে বন্ধ থাকা চিনিকলগুলো পুনরায় চালু করে লাভজনকভাবে পরিচালনার জন্য গঠিত টাস্কফোর্সের সুপারিশ ও মতামতের ভিত্তিতে এবং পর্যাপ্ত আখ প্রাপ্তি সাপেক্ষে বর্তমান সরকার প্রথম পর্যায়ে শ্যামপুর ও সেতাবগঞ্জ সুগার মিল, দ্বিতীয় পর্যায়ে পঞ্চগড় ও পাবনা চিনিকল এবং তৃতীয় পর্যায়ে রংপুর ও কুষ্টিয়া চিনিকলের মাড়াই কার্যক্রম পুনরায় চালু করার উদ্যোগ নেয়।

 

টাস্কফোর্সের সুপারিশ অনুযায়ী, প্রথম পর্যায়ে শ্যামপুর ও সেতাবগঞ্জ চিনিকল চালু করতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আখচাষি উন্নয়ন ও রোপণ সংক্রান্ত সম্ভাব্য ব্যয়ের প্রাক্কলন এবং ২০২৫-২৬ ও ২০২৬-২৭ অর্থ বছরের সম্ভাব্য ব্যয়ের প্রক্ষেপণ করা হয়। সেই অনুযায়ী শ্যামপুর ও সেতাবগঞ্জ চিনিকল চালু করার জন্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য যথাক্রমে ৫৩৭.১৬ লাখ ও ৮২৩.০১ লাখ টাকা অনুমোদন ও ছাড়করণের লক্ষ্যে চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ বিভাগে পত্র পাঠানো হয়।

 

আরও পড়ুন: নাটোর চিনিকলে ডাকাতি / যন্ত্রাংশ উদ্ধার না হওয়ায় অনিশ্চিত আখ মাড়াই, বাড়ছে লোকসানের শঙ্কা

 

পরবর্তীতে ২০২৪-২৫ ও ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের জন্য শ্যামপুর চিনিকলের জন্য ৫,১৭০.৫৩ লাখ টাকা এবং সেতাবগঞ্জ চিনিকলের জন্য ৬,৬১০.৭২ লাখ টাকা মঞ্জুর ও ছাড়করণের জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ বিভাগে পাঠানো হয়। তবে গত ৩০ জুলাই এক চিঠির মাধ্যমে অর্থ বরাদ্দের বিষয়ে অর্থ বিভাগ অসম্মতি জানায়। এতে কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, বিগত দুই দশকে পরিচালনার ঋণ বাবদ বিএসএফআইসিকে অর্থ প্রদান করা হচ্ছে এবং বিএসএফআইসি একটি লোকসানি প্রতিষ্ঠান। এর ফলে সরকারি বিপুল ভর্তুকি কমানোর উদ্দেশ্যে পূর্বে চিনিকলগুলো বন্ধ করা হয়েছিল, এজন্য বরাদ্দে অসম্মতি জানানো হয়েছে।

 

সেতাবগঞ্জ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল বাশার জানিয়েছেন, ‘আপাতত মিলগুলো চালুর কোনো সম্ভাবনা নেই। যেহেতু অর্থ বরাদ্দ মেলেনি, তাই চালু করাও সম্ভব হচ্ছে না। তবে অর্থ বরাদ্দ পেলে পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা যাবে।’

 

বন্ধ চিনিকল টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য আলতাফ হোসেন বলেন, ‘এটি খুবই হতাশাজনক। টাস্কফোর্সের সুপারিশে ছিলো কীভাবে মিলগুলো আধুনিকায়ন করে লাভজনক করা যায়। অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় আবারও মিলগুলোর কার্যক্রমে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তবে হাজার হাজার কোটি টাকার এসব সম্পদ কাজে লাগানো গেলে লোকসান নয়, লাভের মুখ দেখতে পারবে প্রতিষ্ঠানগুলো। চিনি উৎপাদনের পাশাপাশি ক্ষুদ্র শিল্প তৈরি করলে বাণিজ্যের পরিধি বাড়বে এবং কর্মসংস্থানও বাড়বে।’

 

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক উমর ফারুকের মতে, স্থানীয় অর্থনীতির বড় চালিকা শক্তি এসব ভারী শিল্প। এই শিল্পের সঙ্গে অসংখ্য মানুষের জীবন ও জীবিকা নির্ভরশীল। শিল্প বন্ধ কোনো সমাধান নয়; আধুনিকায়নের মাধ্যমে টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ করে বন্ধ চিনিকলগুলো চালুর উদ্যোগ নিতে হবে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন