৯ মাস পর চালু হলো নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস

২ সপ্তাহ আগে
আগুনে পুড়ে ধ্বংস হওয়ার দীর্ঘ নয় মাস পর অবশেষে সংস্কার কাজ শেষে নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস পুনরায় চালু হয়েছে। এতে দীর্ঘদিনের ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাচ্ছেন জেলার সাধারণ মানুষ।

রোববার (৪ মে) চালুর প্রথম দিনেই সেবা প্রত্যাশীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। অফিসের ভেতর ও বাইরে সেবা নিতে আসা মানুষের দীর্ঘ লাইন ছিল। সেবাপ্রার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যস্ততায় প্রাণচঞ্চল হয়ে ওঠে অফিস এলাকা। প্রায় তিন হাজার মানুষ সেবা নিতে আসেন প্রথম দিনেই।


পাসপোর্ট অফিস সূত্রে জানা যায়, অনলাইনে আবেদন ফর্ম, জাতীয় পরিচয়পত্র ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ সরাসরি অফিসে এলেই দ্রুত সময়ে পাসপোর্ট হাতে পাওয়া যাবে। এখন থেকে পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগবে না, ফলে পাসপোর্ট প্রক্রিয়া আরও দ্রুত ও সহজ হবে।


গত বছরের ১৮ জুলাই রাতে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান চলাকালে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ভুইগড় এলাকায় অবস্থিত আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়। তারা অফিসে অগ্নিসংযোগ করে, লুটপাট করে মূল্যবান সামগ্রী। আগুনে সার্ভার, গুরুত্বপূর্ণ ফাইল, যাবতীয় নথিপত্র ও গ্রাহকদের আট হাজার প্রস্তুতকৃত পাসপোর্ট পুড়ে যায়। অফিসটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। এতে আনুমানিক তিন কোটি টাকার ক্ষতি হয়।


ঘটনার পর অফিসের সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে নারায়ণগঞ্জবাসীদের কেরাণীগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও নরসিংদী আঞ্চলিক অফিসগুলোতে অঞ্চলভিত্তিক সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হলেও দূরত্ব ও অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ।


ভবনের পুড়ে যাওয়া অংশ পুনর্গঠনে উদ্যোগ নেয় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। সংস্কার কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয় জেলার গণপূর্ত বিভাগকে। বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম জানান, পাঁচতলা ভবনের অবকাঠামোগত সংস্কারে চার মাস সময় লেগেছে, ব্যয় হয়েছে ৮২ লাখ টাকা।


এছাড়া সার্ভার, আসবাবপত্র ও ডিজিটাল সিস্টেম পুনঃস্থাপনসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ করেছে পাসপোর্ট অধিদফতর। সংস্কার কাজ শেষে রোববার (৪ মে ২০২৫) সকাল থেকে পুনরায় গ্রাহক সেবা কার্যক্রম চালু করা হয়।


আরও পড়ুন: হয়রানি আর দালালের দৌরাত্ম্যের প্রতিভূ রাজশাহী বিভাগের পাসপোর্ট অফিস


নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপপরিচালক মো. জামাল হোসেন বলেন, আমরা শতভাগ সেবা নিশ্চিত করতে এবং দালালমুক্ত পরিবেশ বজায় রাখতে আন্তরিকভাবে কাজ করবো। কেউ যেন কোনো ভোগান্তিতে না পড়েন, আমরা সেই চেষ্টাই করব।


তিনি আরও বলেন, আপনারা কোনো মাধ্যম ধরবেন না। অনলাইনে আবেদন করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে সরাসরি আমাদের কাছে চলে আসুন। আমরা ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ছবি তুলে অল্প সময়ের মধ্যেই কাজ সম্পন্ন করব। নির্ধারিত তারিখে এসে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারবেন।


আগুনে পুড়ে যাওয়া ৮ হাজার পাসপোর্ট বিষয়ে জানতে চাইলে মো. জামাল হোসেন বলেন, আমরা আগারগাঁও অফিস থেকে ইতোমধ্যে ৭ হাজার পাসপোর্ট পুনরায় তৈরি করে গ্রাহকদের বুঝিয়ে দিয়েছি। বাকি ১ হাজার পাসপোর্ট আমাদের অফিসে রয়েছে, গ্রাহকরা যেকোনো সময় এসে নিয়ে যেতে পারবেন।


পাসপোর্ট অফিসের নতুন কার্যক্রম শুরুর দিন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা অফিস পরিদর্শন করেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এই অফিসে কোনো দালাল চক্রের স্থান হবে না। কেউ দালালের শরণাপন্ন হবেন না। পাসপোর্ট সেবাকে শতভাগ স্বচ্ছ ও হয়রানিমুক্ত রাখতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

তিনি আরও বলেন, দালাল চক্রের অস্তিত্ব বা কার্যক্রমের তথ্য পাওয়া মাত্র মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি, রোহিঙ্গা বা বাংলাদেশের নাগরিক নয় এমন কেউ যদি পাসপোর্ট নিতে আসে, তাহলেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন