বিশ্বময় ঈদুল আজহার সম্ভ্যাব্য তারিখ

৪ ঘন্টা আগে
এ বছর তথা ২০২৫ সালে ঈদুল ফিতর সৌর হিসাব অনুযায়ী সমগ্র পৃথিবীতে ৩০ ও ৩১ মার্চ—দুই দিনে উদযাপিত হয়েছে। এখন অপেক্ষা ঈদুল আজহার। আর মাত্র কয়েকদিন পরেই আসছে ঈদুল আজহা, অর্থাৎ কোরবানির ঈদ। ঈদের আনন্দে ভাসছে সারা বিশ্বের মুসলমানরা। গ্রাম ও খামার থেকে খামারি ও গৃহস্থরা কোরবানির পশু নিয়ে আনন্দে শহরের পথে রওনা হচ্ছেন।

ঈদুল আজহা মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র জিলহজ মাসের ১০ তারিখে উদযাপিত হয়। তবে ২০২৫ সালে ঈদুল আজহা ইংরেজি ক্যালেন্ডারের কোন তারিখে এবং কোন (বারে) পড়বে—তা নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞজন ও জ্যোতির্বিদরা নিজ নিজ দেশের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করছেন। এ সংক্রান্ত তথ্য ইতোমধ্যে সময় নিউজসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।


সৌদি আরবের সম্ভাব্য তারিখ

 

জ্যোতির্বিদ্যার হিসাব অনুযায়ী এ বছর সৌদিতে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে আগামী ৬ জুন। ৫ জুন হবে আরাফার দিন। ঈদের চূড়ান্ত তারিখ নির্ধারণের জন্য মুসলিম প্রধান দেশগুলোর চাঁদ দেখা কমিটি জিলকদ মাসের ২৯তম তারিখে বৈঠকে বসবে। এদিন সন্ধ্যাঁয় জিলহজের চাঁদের সন্ধান করবে সৌদির চাঁদ দেখা কমিটিও।

 

আরও পড়ুন: পশু ‘লাইভ ওয়েট’ পদ্ধতিতে কিনে কোরবানি দিলে জায়েজ হবে?

 

কুয়েতের সম্ভাব্য তারিখ

 

কুয়েতের আল ওজাইরি সায়েন্টিফিক সেন্টার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, জিলহজ মাসের চাঁদ ২৭ মে ভোরে উদিত হবে। ওই দিন সূর্যাস্তের পর কুয়েতের আকাশে চাঁদটি ৪৩ মিনিট ধরে দৃশ্যমান থাকবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এই হিসেবে কুয়েতে ৬ জুন শুক্রবার ঈদুল আজহা হতে পারে।

 

আরব আমিরাতের সম্ভাব্য তারিখ

 

সংযুক্ত আরব আমিরাতের জ্যোতির্বিদ্যা সোসাইটির চেয়ারম্যান ইব্রাহিম আল জারওয়ান জানান, ২৭ মে সকাল ৭টা ০২ মিনিটে চাঁদ উঠবে এবং সূর্যাস্তের পর ৩৮ মিনিট আকাশে দৃশ্যমান থাকবে, যা চাঁদ দেখার জন্য পর্যাপ্ত সময়। তাহলে ৬ জুন ঈদুল আজহা পালিত হবে। তবে যদি ২৭ মে সন্ধ্যায় জিলহজের চাঁদ না দেখা যায় তাহলে ঈদ উদযাপিত হবে ৭ জুন।


তিনি আরও  বলেন, ইসলামি শরিয়াহ অনুযায়ী চাঁদ দেখার ওপর ভিত্তি করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষই ঈদের চূড়ান্ত তারিখ ঘোষণা করে থাকেন। অতএব, বাস্তবিক ঘোষণা আসবে পরে।

 

পাকিস্তানের সম্ভাব্য তারিখ

 

অন্যদিকে পাকিস্তানের জ্যোতির্বিদ ও সৌরবিজ্ঞানী ড. ফাহিম হাসমী জানিয়েছেন, ২৭ মে পাকিস্তানে নতুন চাঁদ দেখার সম্ভাবনা নেই। কারণ সে সময় চাঁদের বয়স হবে মাত্র ১১ ঘণ্টা। তবে ২৮ মে চাঁদের বয়স হবে ৩৫ ঘণ্টার বেশি। ফলে সেদিন চাঁদ দেখা যাবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন তিনি।
এই হিসাবে, ২৯ মে পাকিস্তানে জিলহজ মাস শুরু হলে ৭ জুন শনিবার ঈদুল আজহা উদযাপিত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।


আমাদের বাংলাদেশের অবস্থা

 

এ হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েত, আরব আমিরাত, সৌদি আরব এবং পাকিস্তানের জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কথা। তরাও নিশ্চিত করে ঈদের তারিখ বলেননি; বরং এভাবে বলেছেন যে, চাঁদ দেখা যেতে পারে। অথবা প্রবল সম্ভবনা আছে। পক্ষান্তরে আমাদের বাংলাদেশের কিছু মানুষের অবস্থা হচ্ছে এই-

 

১. তারা লুনার ক্যালেন্ডার তথা হিজরী ক্যালেন্ডারের উপর এতটাই আস্থা পোষণ করেন যে, চাঁদ দেখা কে অবৈধ মনে করেন।আর বলেন- বর্তমানে যেহেতু সৌদি আরবের উম্মুল কুরা এর হিজরি ক্যালেন্ডার পাওয়া যাচ্ছে সেহেতু দেশে দেশে হেলাল দেখাকে বৈধ বলা যাবে না। অথচ হাদীস শরীফে চাঁদ দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশ কেয়ামত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে, ইনশাআল্লাহ।

 

২. আবার তাদের কেউ কেউ বলেন-এখন আর চর্ম চোখে নয়; জ্ঞানের চোখে চাঁদ দেখতে হবে।  আবার কারো কারো মুখের ভাষা এরূপ যে, নবীজির যুগে ওযর ও অপারগতার কারণে মানুষ চর্ম চোখে চাঁদ দেখতো। এখন আর সেই ওযর ও অপারগতা নেই। এখন চর্ম চোখে চাঁদ দেখতে যাওয়া মূর্খতা। অথচ সমগ্র বিশ্বের জ্ঞানীগুণী এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা চর্ম চোখে চাঁদ দেখে নিশ্চিত তারিখ ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছেন। আসলে আমাদের এ সকল ভাইদের উদ্দেশ্য হচ্ছে জ্যোতির্বিজ্ঞানের হিসাবের উপর নির্ভর করে বিশ্ববুকে নতুন এক ফেতনার দ্বার উন্মোচন করা।

 

৩. সৌদি আরবসহ পৃথিবীর কোন দেশের লোকেরাই উম্মুল কুরার তৈরিকৃত হিজরী ক্যালেন্ডারের হিসাবের উপর ভিত্তি করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন না। সবাই চাঁদ দেখার কথা বলছেন। তাহলে বাংলাদেশে বসে উক্ত ক্যালেন্ডারের প্রতি এত গুরুত্ব কেন দেওয়া হচ্ছে?

 

৪. যে সকল দেশ থেকে ঈদুল আজহার সম্ভাব্য তারিখ প্রচার করা হয়েছে তাদের কেউ সৌদির সাথে তাল মিলিয়ে ঈদ উদযাপন করার ঘোষণা দেননি। অথচ বাংলাদেশের একদল মানুষ সৌদির সাথে তাল মিলিয়ে ঈদ উদযাপন করে থাকেন। যা কোরআন সুন্নাহর সাথে সাথে বিজ্ঞান ও বাস্তবতা বিরোধীও বটে।

 

হিজরি ক্যালেন্ডার কিংবা জ্যোতির্বিজ্ঞানের হিসাবের উপর নির্ভর করে কিংবা অন্য কোন দেশের সাথে তাল মিলিয়ে রোজা, ঈদ ও কুরবানী পালন করা ইসলামের বিধান নয়। যদি তাই হতো তাহলে অন্যান্য মুসলিম দেশগুলো ঈদের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করতো না বরং  নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করতো। এতে পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে চাঁদ দেখাই ইসলামের বিধান এবং সমগ্র পৃথিবীর মানুষ এই বিধানের উপর এখনো অটল আছেন আলহামদুলিল্লাহ।

 

আরও পড়ুন: নবীজি যেসব পশু দ্বারা কোরবানি করেছেন

 

সাধারণ মুসলমান ভাই বোনদের কাছে অনুরোধ! আপনারা এই জাতীয় কথাবার্তায় বিভ্রান্ত হবেন না। হক্কানী ওলামায়ে কেরামের শরণাপন্ন হোন এবং ধর্মীয় বিষয়ে তাদের নির্দেশনা মোতাবেক আমল করার চেষ্টা করুন। অন্যথায় আমরা উভয় জগতে ক্ষতিগ্রস্ত হব। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে হেফাজত করুন, আমিন।

 

লেখক: শিক্ষক, জামিয়া কোরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগ ঢাকা, খতিব, আজিমপুর ছাপড়া মসজিদ,পরিচালক, দাওয়াতুস সুন্নাহ বাংলাদেশ,

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন