২৬ মার্চ: ৫৪ বছরে কোথায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ?

৩ সপ্তাহ আগে
আলোচনার টেবিলে দরকষাকষি নয়, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ পেয়েছে স্বাধীনতা। মুক্তিযোদ্ধা আর বিশ্লেষকরা বলছেন, বঞ্চনা-বৈষম্য থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় এক জনযুদ্ধের মাধ্যমে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন দেশের। আর সে স্বাধীনতার পেছনে রয়েছে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের অবদান। তবে যে স্বপ্ন আর আকাঙ্ক্ষা নিয়ে লড়েছিল বাঙালি, সেটি এখনো অর্জিত হয়নি পুরোপুরি।

সাতচল্লিশে ধর্মের ভিত্তিতে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের পর থেকেই ধীরে ধীরে স্পষ্ট হতে থাকে দুই অঞ্চলের টানাপড়েন, অসম বিভাজন, শোষণ-বৈষম্য-বঞ্চনা। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ঘিরে উত্তপ্ত হয় পূর্ব বাংলার রাজনীতি, উন্মেষ ঘটে বাঙালির প্রতিবাদী আর জাতীয়তাবাদী চেতনার। চুয়ান্নর ঐতিহাসিক নির্বাচনে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের ভরাডুবি, আর হক-ভাসানী-সোহরাওয়ার্দীর যুক্তফ্রন্টের ভূমিধস বিজয় ছিল আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের ২১ দফা ইশতিহারের পক্ষে গণরায়।

 

সেই পথ ধরেই একে একে দানা বাধে অধিকার আদায়ের সংগ্রাম। সামরিক শাসক আইয়ুববিরোধী লড়াই, ৬২ ভাষা আন্দোলন, ৬৬'র ছয়দফার ধারাবাহিকতায় ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে প্রকাশ পায় স্বাধিকার আর মুক্তির আকাঙ্ক্ষা। সত্তরের নির্বাচনে শোষণের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ গণরায় দেয় বাঙালি, তবে তার প্রতিও অশ্রদ্ধা দেখাতে থাকে পাকিস্তানি শাসকরা।

 

আরও পড়ুন: দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলে কিছু নেই: মির্জা আব্বাস

 

একাত্তরের উত্তাল মার্চজুড়ে চলে অসহযোগ আন্দোলন। রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটতে থাকে একাত্তরের মার্চের ১ তারিখ থেকে। ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’, ‘জিন্নাহ মিয়ার পাকিস্তান, আজিমপুরের গোরস্তান’ সহ নানা স্লোগানে উত্তাল ছিল চারদিক। রিকশাওয়ালা, চায়ের দোকানদারসহ সকলের মনেই তখন পাকিস্তান ভেঙে ফেলার দাবি।

 

আলোচনার নামে কালক্ষেপণ করে অপারেশন সার্চলাইটের নীলনকশা সাজায় পাকিস্তানি শাসকরা। ২৫ মার্চ কালরাতে নিরস্ত্র, ঘুমন্ত বাঙালির ওপর গণহত্যা চালায় হানাদাররা। ২৬ মার্চ কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা আসে তখনকার মেজর জিয়াউর রহমানের কণ্ঠে। ভাষণে তিনি বলেন, ‘আই মেজর জিয়া ডু হিয়্যার বাই ডিক্লেয়ার্ড দ্য ইন্ডিপেনডেন্স অব বাংলাদেশ, অল আর্মি অফিসিয়ালস, ইপিআর, ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, আনসার, পুলিশ আর রিকোস্টেড টু অ্যাটেন্ড ইন কালুরঘাট ব্রিজ। সো ডেট উই ক্যান এসেম্বেল অ্যান্ড ফরোয়ার্ড ফ্রিডম ফাইট’।

 

১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের শপথের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক রূপ পায় মুক্তিযুদ্ধ। আপামর মানুষের অংশগ্রহণে যা রূপ নেয় জনযুদ্ধ। খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা বীর প্রতীক লে. কর্নেল (অব.) মোদাসসের হোসেন খান বলেন, হাতে গোনা কয়েকজন মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে গেলেও গোটা দেশ যুদ্ধের পক্ষে ছিল। কেউ সরাসরি অংশগ্রহণ করেছে, আবার কেউ পেছনে থেকে সমর্থন করেছে।

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, এসব মূল্যবোধ ছিল বলেই পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। সাধারণ মানুষ মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়েছে, খাবার দিয়েছে, সহযোগিতা করেছে। যে যেভাবে পেরেছে, সেভাবেই অংশগ্রহণ করেছে।

 

আরও পড়ুন: চব্বিশের অভ্যুত্থান একাত্তরের স্বাধীনতা রক্ষা করেছে: আসিফ মাহমুদ

 

৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির অদম্য সাহসের কাছে হার মানে হানাদাররা। ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করে ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সেনা। তবে স্বাধীনতার ৫৪ বছর পেরোলেও প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির মধ্যে রয়ে গেছে তফাত। বীর প্রতীক মোদাসসের হোসেন খান বলেন, দেশের শিক্ষার হার বেড়েছে, খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে। তবে যতটুকু আশা ছিল, তার খুবই অল্প অংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। ভোটের অধিকার, ভাতের অধিকার, বাকস্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি।

 

অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, যারা আগে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী ছিল, তারাই স্বাধীনতার পর ধারাবাহিকভাবে আরও শক্তিশালী হয়েছে।

 

তবে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির নানা হিসেব নিকেশ থাকলেও যে লাল-সবুজ পতাকায় রয়েছে ৩০ লাখ শহীদের রক্তদাগ, সে পতাকা বয়ে নিয়ে বাংলাদেশকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে এগিয়ে নেবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম, এমনটাই প্রত্যাশা সবার।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন