নিজেদের অব্যবস্থাপনা আর ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগের কারণেই বিনিয়োগকৃত মূলধন হারিয়েছে দেশের ২৪টি ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, নতুন ব্যাংক খোলার সময় ন্যূনতম ৫০০ কোটি টাকা জমা দিতে হয়। পাশাপাশি তফসিলি ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম চালাতে ন্যূনতম রক্ষিত মূলধন (এমসিআর) ১০ শতাংশ এবং ক্যাপিটাল কনজারভেশন বাফার (সিসিবি) ২.৫ শতাংশ থাকা বাধ্যতামূলক। এই অনুপাত ঠিকভাবে বজায় রাখতে পারলেই ব্যাংক খাতকে সুস্থ ও নিরাপদ ধরা হয়।
তবে বাস্তবে দেখা গেছে, রিস্ক ওয়েটেড ক্যাপিটালের ভিত্তিতে সম্পদের নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা ক্যাপিটাল অ্যাডিকুয়েসি রেশিও ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে ২৪টি ব্যাংক। এর মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি ব্যাংক, দুটি বিশেষায়িত ব্যাংক এবং ১৮টি বেসরকারি ব্যাংক। এসব ব্যাংকের সম্মিলিত মূলধন ঘাটতি এরমধ্যে দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
আরও পড়ুন: সরকারি ব্যাংকে খেলাপি ঋণ দেড় লাখ কোটি টাকা, মূল্যায়নের পরিকল্পনা নিচ্ছে সরকার
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, লাগামহীন খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় বেশ কয়েকটি ব্যাংক মারাত্মক আর্থিক সংকটে পড়েছে। মূলত ব্যাংকগুলো এমন সব খাতে বিনিয়োগ করায় এই অবস্থা হয়েছে, যেখান থেকে ঋণের অর্থ ফেরত পাওয়া প্রায় অসম্ভব।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘ব্যাংকিং সেক্টরে সার্বিকভাবে খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। এর ফলে ক্যাপিটাল শর্টফল তৈরি হয়েছে, এবং এ রকম ব্যাংকের সংখ্যাও দ্রুত বাড়ছে। একটি ব্যাংক যদি দুর্বল মূলধন কাঠামোর ওপর দাঁড়িয়ে থাকে, তাহলে তার পক্ষে দীর্ঘদিন টিকে থাকা সম্ভব নয়। আবার শক্ত ভিত্তি ছাড়া ব্যাংকের ব্যাবসায়িক কার্যক্রমও স্থিতিশীলভাবে পরিচালনা করা যায় না।’
ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতির প্রভাব ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ বা ল্যান্ডিং ক্যাপাসিটি কমে যাবে। শেয়ার হোল্ডাররা লভ্যাংশ নিতে পারবেন না। প্রভাব পড়বে শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড দেবার বিষয়েও। এছাড়া বিদেশি ব্যাংকের সাথে লেনদেনেও হোঁচট খাবে ব্যাংকগুলো।
আরও পড়ুন: এবার একীভূত হবে দুর্বল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোও!
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও ইনস্যুরেন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শহীদুল জাহীদ বলেন, ‘বেসেল এককর্ডের সিগনেটরি হিসেবে ব্যাংকগুলোর ক্যাপিটাল এডিকুয়েসি রেশিও বা মূলধন সংরক্ষণের অনুপাত হওয়া উচিত ১২.৫ শতাংশ। অর্থাৎ, প্রতিটি ব্যাংকের অন্তত সাড়ে ১২ শতাংশ মূলধন সংরক্ষণ থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে দেখা যাচ্ছে, গড়ে ব্যাংকগুলো মাত্র ৩ থেকে ৪ শতাংশ মূলধন সংরক্ষণ করছে। কিছু ব্যাংকে এটি ৮ থেকে ১০ শতাংশের ঘরে আছে, আবার কোনো কোনো ব্যাংকের মূলধন শূন্য নয়ই, বরং মাইনাস বা নেগেটিভ অবস্থায় নেমে গেছে।’
এছাড়া, মূলধন ঘাটতির এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর শেয়ারহোল্ডাররা এরমধ্যেই তাদের বিনিয়োগকৃত মূলধনের বড় অংশ হারিয়েছেন। ফলে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়েছেন সাধারণ আমানতকারীরা। অধ্যাপক ড. শহীদুল জাহীদ বলেন, ‘যেহেতু অনেক ব্যাংকের মূলধন এখন ১-২ শতাংশ বা তারও কম, এমনকি মাইনাসে নেমে গেছে-এর মানে হচ্ছে, বর্তমানে ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ অর্থ ঋণ হিসেবে দিচ্ছে, তার পুরো অংশই আসছে আমানতকারীদের টাকায়। অর্থাৎ আমি যদি ১০০ টাকা ঋণ দিই, সেখানে মালিকপক্ষের কোনো বিনিয়োগ নেই। পুরো বিনিয়োগটাই হচ্ছে আমানতকারীদের অর্থ থেকে। সুতরাং এই অবস্থায় আমানতকারীরাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে পড়তে যাচ্ছেন।’
এর আগে ২০২৪ সালের শেষে ২০ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ছিল ১ লাখ ৭২ হাজার কোটি টাকা। তার আগের প্রান্তিকে ১৬ ব্যাংকে মূলধন ঘাটতি ছিলো ৫৩ হাজার কোটি টাকা।
]]>
৩ সপ্তাহ আগে
৫







Bengali (BD) ·
English (US) ·