২৩ বছরে ৩০ আগুন, বার বার কেন পোড়ে সুন্দরবন?

৩ সপ্তাহ আগে
অসাধু বন কর্মকর্তা ও মৎস্যজীবীদের দৌরাত্ম্য, আইনের ফাঁকফোকর, তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন না হওয়াসহ নানা কারণে গত ২৩ বছরে ৩০ বার আগুন লেগেছে বিশ্ব ঐতিহ্যের সুন্দরবনে। এতে তিলে তিলে নিঃশেষ হচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষকে আগলে রাখা এই ম্যানগ্রোভ বন। তাই অগ্নিকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে আইন করে বনের মধ্যে চোরা শিকারিসহ মানুষের অবাধ যাতায়াত বন্ধের দাবি জানিয়েছেন পরিবেশবিদরা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের তাণ্ডব থেকে বিস্তীর্ণ উপকূলকে রক্ষা করে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন। তবে প্রায় প্রতিবছরই এই বনে লাগছে আগুন।


বনবিভাগের তথ্যমতে, গত ২৩ বছরে সুন্দরবনের পূর্ব বিভাগে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ৩০টি। এতে পুড়েছে একরের পর একর বনভূমি। এতে হুমকির মুখে বন্যপ্রাণী।


সবশেষ গত ২২ মার্চ থেকে পরপর কয়েক দফায় আগুনে পুড়েছে সুন্দরবনের বেশ কিছু এলাকা।


আরও পড়ুন: অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত সুন্দরবনের সাড়ে ৫ একর বনভূমি


স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিবারই বনে আগুন লাগলে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। করা হয় সুপারিশও। তবে তা আলোর মুখ দেখে না কখনো।


আরও অভিযোগ রয়েছে, মাছ শিকার করতে গহিন বনে প্রবেশ করে আগুন দেন অসাধু জেলেরা। মৎস্যজীবী ও মৌয়ালদের অসচেতনতার কারণেও আগুন লাগে কখনো কখনো।


এলাকাবাসী জানান, ‘ভাদ্র-আশ্বিন মাসে জেলেরা জাল পেতে মাছ ধরে। তারা কয়লায় আগুন জ্বালিয়ে মাগুর, কৈ, শিং মাছ ধরে।  শিকারিরা হরিণের ফাঁদ পাতে। এ ছাড়া জেলেরা নদীতে মাছ ধরতে জাল পাতে। রাতে আগুন জ্বালিয়ে তারা সেখানে অবস্থান করেন।’


 

দফায় দফায় আগুনে সুন্দরবনের বেশ কিছু এলাকা পুড়ে গেছে। ছবি: সময় সংবাদ


আরও পড়ুন: সুন্দরবনে ধোঁয়া দেখলেই দেয়া হবে পানি, পর্যবেক্ষণ হবে রাতেও


এলাকাবাসী আরও জানান, সুন্দরবনে হরিণ, বাঘ ও সাপসহ বহু বন্যপ্রাণী থাকে। বনে আগুন লাগলে ওই প্রাণীগুলো আটকা পড়ে মারা যায়। যারা এই অপরাধ করছে তাদের শনাক্ত করতে হবে। জাতীয় সম্পদ রক্ষায় অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা একান্ত দরকার।


খুলনা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক আবু বক্কর জামান বলেন, ‘বনের চারপাশে যে ছোট ছোট নদী বা খালগুলো আছে সেগুলো খনন করার দরকার, যেন ভাটার সময়ও পানি পাওয়া যায়। তাহলে সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে দ্রুত সময়ের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।  


অগ্নিকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে কঠোর আইন করে বনের মধ্যে চোরা শিকারিসহ মানুষের অবাধ যাতায়াত বন্ধের দাবি করেছেন সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম।


আরও পড়ুন: থেমে থেমে জ্বলছে সুন্দরবনের আগুন, আরও এক তদন্ত কমিটি


তিনি বলেন, ‘ড্রোনের মাধ্যমে আমাদের সতর্ক নজরদারী ও টহল বৃদ্ধি করতে হবে। বন বিভাগের যে টহল আছে সেটাও বাড়াতে হবে।’


সুন্দরবন রক্ষায় আমরা’র সমন্বয়কারী মো. নুর আলম বলেন, ‘মানব সৃষ্ট, পরিকল্পিত ও অসাধু বন কর্মকর্তা এবং এর সঙ্গে স্থানীয় অসৎ কিছু মাছ ব্যবসায়ী আছেন, যারা এটার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। এ বিষয়টা দেখার দরকার বলে আমি মনে করি।’


বনে আগুন লাগা ঠেকাতে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়ে পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. নুরুল করীম বলেন, ‘সুন্দরবনের তিনটি নদী খনন করতে হবে। আর অবশ্যই প্রকৃত দোষীদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ 


বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ অংশে সুন্দরবনের আয়তন প্রায় ছয় হাজার বর্গকিলোমিটার।
 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন