ভূ-প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে সমতল ভূমি কম, সড়কগুলো সরু। ফলে শহরের রাস্তায় বাস দাঁড়ালে তৈরি হয় তীব্র যানজট। এ সমস্যা সমাধানে ২০০১ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এ বাস টার্মিনাল নির্মাণ করে। কিন্তু নির্মাণের এত বছর পরও নানা কারণে এটি এখনও নিয়মিত ব্যবহারে আসেনি।
টার্মিনালের অভ্যন্তরে গিয়ে দেখা যায়, একটি অংশজুড়ে পার্কিং করা ট্রাক। অন্য পাশে কিছু বাস থাকলেও সেগুলোর সংখ্যা কম। ট্রাক থেকে আদায় করা হচ্ছে টোল— পিকআপ প্রতি ৫০ টাকা, কাঠবোঝাই ট্রাকের জন্য ১৫০ টাকা করে। এতে টার্মিনালটিকে দেখতে ট্রাক টার্মিনালের মতো মনে হয়।
খানা-খন্দ, আবর্জনা আর অচল কাঠামো সংস্কার না থাকায় পুরো টার্মিনালজুড়ে রয়েছে বড় বড় গর্ত। বর্ষায় জমে থাকে পানি। কোথাও নেই কার্যকর ড্রেনেজ ব্যবস্থা। যাত্রী ছাউনি ও টিকেট কাউন্টারগুলো বন্ধ। ছাউনির চেয়ারে বসার পরিবর্তে সেগুলো পড়ে রয়েছে কাউন্টারের ছাদে।
বাস চালক সিরাজ মিয়া বলেন, ‘গর্তে পড়ে বাসের চাকা আটকে যায়। অনেক সময় স্প্রিং ভেঙে যায়। টার্মিনালে লাইট নেই, রাতে এটা ভুতুড়ে জায়গায় পরিণত হয়। শৌচাগারে পানিরও ব্যবস্থা নেই।’
বাসের হেলপার রমিজ মিয়া বলেন, ‘আগে এখানে এসে গোসল করতে পারতাম, এখন পানির অভাবে তা পারি না। প্রায়ই যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে যায়। ঘুমানোর সময়ও চিন্তায় থাকতে হয়।’
স্থানীয়রা জানান, টিকিট কাউন্টার বন্ধ হয়ে টার্মিনাল এখন মাদকসেবীদের দখলে চলে গেছে।
আরও পড়ুন: জামালপুরে টার্মিনাল সংস্কার দাবিতে সড়ক অবরোধ, ৩ ঘণ্টা বাস বন্ধ
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রহিম বলেন, ‘এত টাকা খরচ করে টার্মিনাল বানিয়ে কী লাভ হলো? বাস তো আগের মতোই রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে। এতে শহরের যানজট যেমন কমেনি, বরং ওই এলাকা এখন মাদকসেবীদের আড্ডায় পরিণত হয়েছে।’
এমনকি বাস মালিক সমিতি জানে না কেন চালু হয়নি এতো টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাস টার্মিনাল!
বাস মালিক সমিতির নবনির্বাচিত কার্যকরী সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম শাকিল বলেন, ‘আমি ২৫ মে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছি। আগে কেন এটি চালু হয়নি, তা আমার বোধগম্য নয়। আমরা মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে বসে দ্রুত এই টার্মিনাল চালু করতে চাই।’
টার্মিনালের ইজারাদার মো. আব্দুল আজিজ বলেন, ‘টার্মিনাল চালুর পর থেকেই ট্রাক থেকে টোল আদায় হতো, তাই আমরাও করছি। মাত্র এক মাস আগে ইজারা পেয়েছি। ট্রাক ঢুকলে আয় হয়, তবে মনে করি টার্মিনাল সচল হওয়া উচিত।’
এ বিষয়ে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ বলেন, ‘আগে কী হয়েছে, সেটা বড় কথা নয়। আমি মালিক সমিতির সঙ্গে আলোচনা করেছি। তাদের অনুরোধ করেছি যেন দ্রুত টার্মিনাল ব্যবহার শুরু করে। প্রয়োজনে আইন প্রয়োগ করব— এই বার্তাও দেয়া হয়েছে।’
সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক উদ্যোগ ও সমন্বয় ছাড়া রাঙামাটি বাস টার্মিনালের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। শহরবাসী চান দ্রুত টার্মিনাল সচল হোক এবং যানজটমুক্ত হোক পার্বত্য এ শহরের সড়ক।