সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে মালিকানা ফেরত পেয়েছে মালিকপক্ষ। এতে পাটকলটি পুনরায় চালুর দাবি জানিয়েছেন শ্রমিকরা। আর মালিকপক্ষ বলছে, গত ১০ বছর ধরে পাটকলটি থেকে বিভিন্ন কয়েক কোটি টাকার যন্ত্রাংশ চুরি হয়েছে। মিলটি চালু করতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার দাবি তার।
বেসকারি পাট পণ্য উৎপাদনে এক সময়ে খুলনাঞ্চলে বেশ নাম ডাক ছিল খুলনার ফুলবাড়ীগেট এলাকায় স্থাপিত অ্যাজাক্স জুট মিলের। আলাদা শিফটে প্রতিদিন পাঁচ হাজারেরও বেশি শ্রমিক এ মিলে কাজ করতেন। এক সময়ে লোকে সরগরম থাকা অ্যাজাক্স জুট মিলের ভেতরটা প্রায় ১০ বছর ধরে এভাবেই পড়ে আছে।
মিলের মালিক কাউসার জামান বাবলার অভিযোগ, ভিন্ন মতাদর্শের রাজনৈতিক দলের নেতা হওয়ায় ২০২২ সালের পর থেকে এ মিল যাতে আমি না চালাতে পারি সেজন্য বিভিন্নভাবে আমার ওপর চাপ আসতে থাকে। এ এলাকার তৎকালীন সংসদ সদস্য বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের প্রভাবে আমার মিল থেকে সব ধরনের আর্থিক সহায়তা বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে ২০১৪ সালে মিলটি আমি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়।
আরও পড়ুন: এক সপ্তাহেই কেটে যাবে ভোজ্য তেলের অস্থিরতা: বাণিজ্য উপদেষ্টা
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ২০১৪ সালে মিলটি বন্ধ করে দেয়ায় পাঁচ থেকে ৬ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে যান। শ্রমিকদের পাওনাও পরিশোধ করতে ব্যর্থ হন মালিক। এ অবস্থায় ২০১৫ সালে আব্দুল মান্নান নামে একজনের কাছে বিভিন্ন শর্তে মিলটি লিজ দেন কাউসার জামান বাবলা। তবে মিলটি চালাতে ব্যর্থ হন তিনিও।
স্থানীয় শ্রমিক নেতাদের অভিযোগ, ২০১৫ সালের পর থেকে মিলটি দখল করে নেয় তৎকালীন সংসদ সদস্য ও শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান লিংকন এবং তাদের সহযোগীরা।
নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা শ্রমিকরা বলেন, মিলের মধ্যে অবৈধভাবে সারের ব্যবসা করেন তারা। মিলের দামি ও গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র চুরি ও লুট করে নিয়ে যায়।

আব্দুস সোবহান নামে একজন শ্রমিক বলেন, ‘২০১৬ সালের পর থেকে বিভিন্ন সময় মিলের গুরুত্বপূর্ণ মালামাল চুরি ও লুটপাট হয়েছে। মন্নুজান সুফিয়ানের ছেলে হিসেবে সবাই চিনতো লিংকনকে। সেই সঙ্গে প্রতিমন্ত্রীর ভাইও এসব চুরির সঙ্গে জড়িত। কিছুদিন পর পর মিলের মধ্যে বড় বড় ট্রাক নিয়ে প্রবেশ করতো, মিলের ভিতরে থাকা বিভিন্ন মোটর, অন্যান্য ইলেকট্রিক যন্ত্রাংশ চুরি করে নিয়ে যেত। এখন তো মিল এক প্রকার ধ্বংস হয়ে আছে।’
এদিকে ৫ আগস্টের পর মিলটি পুনরুদ্ধার করেছেন কাউসার জামান বাবলা। তার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসনের মিলে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞাও প্রত্যাহার হয়েছে। সম্প্রতি তিনি মিলে প্রবেশ করেছেন। এতে করে আবারও মিলটি চালুর ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে উঠছেন শ্রমিকরা।
মিলের শ্রমিক নিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘গত ১০ বছর ধরেই আমরা অসহায় হয়ে আছি। তেমন কোনো কাজ আমরা শিখেনি। জুট মিলে কাজ করেছি ৩০/৩৫ বছর। এটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরা অন্য কাজও করতে পারছিলাম না। মালিক মিল বুঝে পাওয়ায় আমরাও আশা করছি মিলটি তিনি চালু করবেন। আমরা আবারও এই মিলে উৎপাদন শুরু করবো।’
আরও পড়ুন: মাদারীপুরে বকেয়া ৫০ কোটি টাকার দাবিতে জুট মিল শ্রমিকদের মানববন্ধন
এ বিষয়ে মিলটির মালিক কাউসার জামান বাবলা বলেন, ‘আমি মিলটি পুনরায় চালু করতে চাই। কিন্তু গত ৭/৮ বছরে আমার মিলের শত কোটি টাকার যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে গেছে। এটি একদিনেই চালু করা সম্ভব না। এ জন্য আমার আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন। সরকার ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আমাকে সহায়তা করলে মিলটি আমি চালু করতে চাই। শ্রমিকরা আবারও কাজে ফিরবে, আবারও উৎপাদন করবে এটা আমি প্রত্যাশা করি।
এছাড়া মিলটির যন্ত্রাংশ যারা চুরি ও লুটপাট করেছে তাদের বিরুদ্ধে তিনি শত কোটি টাকা লুটপাটের মামলা করেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘যারা আমার চালু মিলটির এত ক্ষতি করলো, সেই মন্নুজান সুফিয়ান, তার ভাই শাহাব উদ্দিনসহ অন্য সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। আশা করছি আইনি প্রক্রিয়ায় আমি ক্ষতি পূরণ পাবো এবং যারা এসব চুরি ও অন্যায় করেছে তাদের বিচার হবে।’
]]>