১. সৌদি আরব: কাবা শরিফ ও পবিত্র হারামের ব্যবস্থাপনা ঐতিহ্য
কাবা হলো মুসলিমদের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র স্থান। সৌদি আরব এই কাবা শরীফকে ঘিরে আল-মাসজিদ আল-হারামকে পরিচালনা করে। এটি একটি বিশাল স্থাপত্যের উদাহরণ। প্রতি বছর কোটি কোটি মুসলিম হজ ও ওমরাহ করতে এখানে আসেন।
এই ঐতিহ্যটি শুধু একটি মসজিদ নয়। এটি সৌদি আরবের পুরো আইনি ও ধর্মীয় কাঠামোর কেন্দ্রবিন্দু। সৌদি সরকার শরিয়া আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে এই পবিত্র স্থানগুলোর সম্মান রক্ষা করে। ধর্মীয় শিক্ষাব্যবস্থাও এই পবিত্র স্থানের গুরুত্বের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে।
কাবা এবং মসজিদে নববীর (মদিনা) ব্যবস্থাপনা বিশ্বে ইসলামের ঐতিহ্যবাহী পরিচয়ের প্রতীক। এটি মুসলিমদের ঐক্যের প্রতীক। এই ঐতিহ্য সৌদি আরবের ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে হাজার বছর ধরে ধরে রেখেছে।
আরও পড়ুন: ১৪০০ বছর পরও নবীজির যে ৯ অভ্যাস বিজ্ঞানসম্মত বলে প্রমাণিত
২. পাকিস্তান: লাহোরের বাদশাহী মসজিদ
বাদশাহী মসজিদ পাকিস্তানের মুঘল-পরবর্তী ইসলামিক স্থাপত্যের এক চমৎকার উদাহরণ। এটি ১৭ শতকে তৈরি হয়েছিল। এর বিশালত্ব এবং লাল বেলে পাথরের ব্যবহার একে এক বিশেষ সৌন্দর্য দিয়েছে। এটি লাহোরের পুরনো শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত।
এটি পাকিস্তানের সুন্নি ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির একটি প্রতীক। এই মসজিদটি পাকিস্তানের জনগণের কাছে ধর্মীয় এবং ঐতিহাসিক দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশটির ইসলামি শিল্প ও ইতিহাসের ছাপ এই স্থাপত্যে স্পষ্টভাবে দেখা যায়।
মসজিদটি পাকিস্তানের মিশ্র আইনি ব্যবস্থায় ইসলামের শক্তিশালী প্রভাবের কথা মনে করিয়ে দেয়। এটি শুধু ইবাদতখানাই নয়। এটি দেশের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ইতিহাসের একটি অংশ হিসেবে টিকে আছে।
৩. মিশর: আল-আজহারের জ্ঞানচর্চা
আল-আজহার বিশ্বের প্রাচীনতম ও সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ইসলামিক শিক্ষা কেন্দ্র। এটি ৯৭০ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আল-আজহার হাজার বছর ধরে সুন্নি ইসলামিক জ্ঞান ও আইনের চর্চা করে আসছে। এখানকার আলেমদের ফতোয়া (ধর্মীয় নির্দেশনা) মিশরের আইনে প্রভাব ফেলে।
এটি মিশরের ইসলামিক পরিচয়ের মূল ভিত্তি। দেশটি শরিয়াকে আইনের প্রধান উৎস বলে ঘোষণা করলেও, আল-আজহার জ্ঞান ও যুক্তির মাধ্যমে ইসলামের ব্যাখ্যা দেয়। এখানে কুরআন, হাদিস এবং ফিকহ (আইনশাস্ত্র) শেখানো হয়।
আল-আজহারের এই ঐতিহ্য শুধু মিশরের নয়, পুরো সুন্নি বিশ্বের জ্ঞান-ঐতিহ্যের প্রতীক। এটি মিশরের ধর্মনিরপেক্ষ আইনের পাশে শরিয়া আইনের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানকে ধরে রেখেছে।
৪. আফগানিস্তান: ঐতিহাসিক নীল মসজিদ
মাজার-ই-শরীফের নীল মসজিদ (হযরত আলী রা. এর রওজা)। আফগানিস্তানের মাজার-ই-শরীফ শহরের এই মসজিদটি এর মনোমুগ্ধকর নীল টাইলসের কারুকার্যের জন্য বিখ্যাত। এটি প্রাচীন খোরাসান অঞ্চলের ইসলামিক স্থাপত্যের এক অন্যতম নিদর্শন। স্থানীয়ভাবে বিশ্বাস করা হয়, এখানে ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী (রা.)-কে দাফন করা হয়েছে।
তালেবানের অধীনে থাকা এই দেশে, এই প্রাচীন কাঠামোটি ইসলামের সাংস্কৃতিক গভীরতা প্রকাশ করে। মসজিদটি এখানকার হানবালি মাযহাবের অধীনে থাকা মানুষের জন্য আধ্যাত্মিক স্থান। এটি দেশটির ঐতিহাসিক গৌরবকে মনে করিয়ে দেয়। রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও এই নীল মসজিদ আফগান মুসলিমদের জন্য শান্তি ও ভক্তির প্রতীক। এটি আফগানিস্তানের হাজার বছরের ইসলামিক ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে।
আরও পড়ুন: নবীজির প্রিয় ও পছন্দের বিষয়গুলো নিয়ে সিরাতের বই ‘নবীজির প্রিয় ১০০’
৫. মালয়েশিয়া: ইসলামিক আর্ট মিউজিয়াম
মালয়েশিয়ান ইসলামিক আর্টস মিউজিয়াম (MIAM), কুয়ালালামপুর। এই মিউজিয়ামটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ইসলামের আগমন ও বিস্তারের ফলে সৃষ্ট অনন্য মালে স্থাপত্য ও কারুশিল্পের সংমিশ্রণ দেখায়। এখানে ইসলামিক শিল্পকলার বিশাল সংগ্রহ রয়েছে। ঐতিহ্যবাহী ও আধুনিক স্থাপত্যের সমন্বয়ে এর নকশা করা হয়েছে।
মালয়েশিয়া একটি মিশ্র আইনি ব্যবস্থা দ্বারা পরিচালিত দেশ। এই মিউজিয়াম রাষ্ট্রের ইসলামি পরিচয় ধরে রাখার একটি প্রচেষ্টা। এটি আধুনিক মালয়েশিয়ার সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত।
এই ঐতিহ্যটি মালয়েশিয়ার বহু-সাংস্কৃতিক ইসলামিক সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে। এটি দেখায় যে কীভাবে ইসলামের নিয়মকানুন শিল্পের মাধ্যমেও প্রকাশ করা যায়।
৬. নাইজেরিয়া: কানো গ্র্যান্ড মসজিদ
কানো গ্র্যান্ড মসজিদ (Kano Central Mosque)। কানো গ্র্যান্ড মসজিদ উত্তর নাইজেরিয়ার হাউসা-ফুলানি ঐতিহ্য এবং ইসলামিক রাজতন্ত্রের প্রতীক। মসজিদটি কানো সুলতানের প্রাসাদের পাশে অবস্থিত। এটি উত্তর নাইজেরিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থান।
এই মসজিদটি উত্তর নাইজেরিয়ার শরিয়া আইনের আঞ্চলিক প্রয়োগের এলাকায় অবস্থিত। এটি সেখানকার মানুষের জন্য শুধু ইবাদতের স্থান নয়। এটি সামাজিক রীতিনীতি ও ধর্মীয় শিক্ষার কেন্দ্রবিন্দু। ঐতিহ্যবাহী ইসলামিক পোশাক ও আচার-আচরণ এখানে কঠোরভাবে পালিত হয়।
মসজিদটি উত্তর নাইজেরিয়ার ঐতিহাসিক ইসলামি জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র। এর মাধ্যমে সেখানকার ঐতিহ্যবাহী ইসলামি শাসনব্যবস্থা এবং ধর্মীয় জীবনযাত্রার প্রভাব বোঝা যায়।
৭. কাতার: মিউজিয়াম অফ ইসলামিক আর্ট
কাতারের এই মিউজিয়ামটি আধুনিক ইসলামী স্থাপত্যের এক অসাধারণ মিশ্রণ। এটির নকশা করেছেন বিখ্যাত স্থপতি আই.এম. পেই। এটি পারস্য উপসাগরের মাঝে একটি কৃত্রিম দ্বীপে অবস্থিত।
এই মিউজিয়ামটি কাতারের বিশ্বজনীন ইসলামিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরে। এটি প্রমাণ করে যে একটি আধুনিক ও ধনী রাষ্ট্র কীভাবে ইসলামিক ঐতিহ্যকে আন্তর্জাতিকভাবে উপস্থাপন করে। কাতারে শরিয়া আইন পারিবারিক ও কিছু ফৌজদারি ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
এই ঐতিহ্যটি কাতারের সাংস্কৃতিক কূটনীতির প্রতীক। এটি বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগৃহীত ইসলামিক শিল্পকর্মের মাধ্যমে মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের বার্তা দেয়।
৮. সুদান: ওমদুরমানের সূফী নৃত্য
শরিয়া আইন বলবৎ থাকা সত্ত্বেও সুদানে সূফীবাদের শক্তিশালী প্রভাব রয়েছে। ওমদুরমানে সাপ্তাহিক এই নৃত্য ও ধর্মীয় সংগীত (ধিকর) অনুষ্ঠিত হয়। এটি সুদানের ইসলামিক আধ্যাত্মিক জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।
এই ঐতিহ্যটি দেখায় যে সুদান তার কঠোর শরিয়া আইনের পাশে আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকেও ধরে রেখেছে। সূফীরা আল্লাহকে স্মরণ করার জন্য এই বিশেষ ধরনের নাচ ও গান করেন। ওমদুরমানের সূফী নৃত্য সুদানের শান্তিপ্রিয় ও সহনশীল ইসলামিক সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করে। এটি ধর্মীয় জীবনে আনন্দ ও ভক্তির প্রকাশ ঘটায়।
৯. মালদ্বীপ: শুক্রবারের পুরোনো মসজিদ
হুকুরু মিসকি (Hukuru Miskiy) বা মালে ফ্রাইডে মস্ক। মালদ্বীপের এই মসজিদটি কোরাল পাথর ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। এটির নির্মাণ কাজ ১৬৫৮ সালে শেষ হয়। এটি মালদ্বীপের ইসলামিক স্থাপত্যের একটি অনন্য নিদর্শন। মসজিদের নকশায় স্থানীয় কারুশিল্পের ছাপ পাওয়া যায়।
মালদ্বীপের প্রধান আইনি ব্যবস্থায় শরিয়া আইনের পূর্ণ প্রয়োগ রয়েছে। এই মসজিদটি দ্বীপরাষ্ট্রটির এক হাজার বছরের পুরনো ইসলামিক ঐতিহ্যের প্রতীক। এর ভেতরের কাঠের কারুকার্য খুবই বিখ্যাত। এই ঐতিহ্যটি দেখায় যে কীভাবে একটি ছোট দ্বীপরাষ্ট্র তার ইসলামিক বিশ্বাস ও স্থাপত্যকে যুগ যুগ ধরে ধরে রেখেছে। এটি মালদ্বীপের সরল এবং গভীর ধর্মীয় জীবনযাত্রাকে তুলে ধরে।
আরও পড়ুন: নবীজির প্রিয় স্ত্রী
১০. সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই): শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ
শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ, আবুধাবি। শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ হলো আধুনিক ইসলামী স্থাপত্যের এক উজ্জ্বলতম উদাহরণ। এটি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ মসজিদ। মার্বেল পাথর, সোনা এবং বিশাল ঝাড়বাতির ব্যবহার এই মসজিদকে বিশ্বজুড়ে পরিচিত করেছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতও একটি মিশ্র আইনি ব্যবস্থা অনুসরণ করে। তবে এই মসজিদটি দেশের ইসলামিক সহনশীলতা এবং ঐক্যের প্রতীক। এটি ইউএইর প্রতিষ্ঠাতা শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান-এর স্মরণে তৈরি করা হয়েছে।
]]>
৩ সপ্তাহ আগে
৫







Bengali (BD) ·
English (US) ·