এ যেনো এক অন্যরকম উৎসব। হাওড়ে নতুন ধানের গন্ধে মাতোয়ারা চারপাশ। দল বেঁধে ধান কাটছেন দাওয়ালো হিসেবে পরিচিত হাজার হাজার কৃষি শ্রমিক। প্রখর রোদে কপাল বেয়ে পড়ছে ঘাম। তবুও যেন খুশির শেষ নেই। একে-অন্যের সঙ্গে খুনসুঁটি, হাসি-ঠাট্টা,কখনওবা ধরাজ গলায় চিরচেনা কোনো ভাটিয়ালী গানের কলি। রোদের প্রখরতায় শরীর কালো হয়ে গেলেও যেন ক্লান্তির ছাপ নেই কারোর মধ্যে!
সরেজমিনে দেখা যায়, এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ধান কাটা, মাড়াই আর পরিবহনে ব্যস্ত সবাই। ধানকাটা উৎসবে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাওড়ে জড়ো হয়েছে কৃষি শ্রমিকরা। মাঠের সবুজ ধান সোনারঙ ধারনের সাথে সাথে শুরু হয়েছে কাটা।

মাঠের পাশে তৈরি ধানের খলায় যেন রাজ্যের ব্যস্ততা। কৃষাণ-কৃষাণি আর বড়দের সহযোগিতা করতে আসা শিশুদের পদচারণায় মুখর প্রতিটি খলা। সেখানে মাঠের ধান আনা হচ্ছে। চলছে মাড়াই-ঝাড়াই, রোদে শুকানো, মাপা আর বস্তায় ধান ভরার কাজ। ধান কাটার ব্যয় মিটাতে জমির পাশেই বিক্রি হচ্ছে ভেজা ধান।
আরও পড়ুন: ধান কাটার পর বিনা চাষে আলু-রসুন-সূর্যমুখী চাষে সফল কৃষকরা
নাওয়া-খাওয়া আর দিন-রাত-সবই কাটছে হাওড়ে। যেনো কারো দম ফেলার ফুসরত নেই। দীর্ঘ ৬ মাস জিরাতি হিসেবে মাঠেই কেটেছে কৃষকের দিনরাত। কষ্টে বুনা ধানের বুক চিরে চারা গজানোর পর কাদামাটিতে চারা রোপণ। এরপরই শুরু হয় পরিচর্যা। সবুজে ছেয়ে যায় হাজার হাজার হেক্টর জমি। এক সময় রঙ বদলায় ধানের চারা। সবুজের গালিচা ভরে ওঠে সোনা রঙে। আশায় বুক বাঁধেন কৃষক। কাস্তে আর যন্ত্র নিয়ে শুরু হয় ধান কাটা।
ঝড়-বৃষ্টি, বজ্রপাত,বন্যাসহ নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলা করেই ফসল ঘরে তুলতে হয় কৃষকদের।
কিশোরগঞ্জের হাওড়ে এবার আগাম জাতের ধান কাটা শুরু হয়েছে সপ্তাহ খানেক আগে। এখন পর্যন্ত ১৫ ভাগ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। হাওড়ে ধানকাটার পুরোপুরি ধুম পড়বে আগামী সপ্তাহ থেকে। কাস্তের পাশাপাশি ৬ শতাধিক কম্বাইন্ড হারভেস্টর মেশিন দিয়ে চলছে ধান কাটা। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি এড়াতে জমির ধান ৮০ ভাগ পাকলেই দ্রুত কেটে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি বিভাগের লোকজন।
আরও পড়ুন: হাওড়ে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে ৬ জনের মৃত্যু
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলায় এক লাখ ৬৮ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে এক লাখ হেক্টরই হয়েছে হাওড়েরর তিন উপজেলা ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামে।
আর উৎপাদন লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে সাত লাখ ৮৮ হাজার ৯১২ মেট্রিক টন চাল। কৃষি বিভাগ বলছে, কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।
]]>