মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সিরিয়ার নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
এক বিবৃতিতে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার নেতৃত্বাধীন ‘সিরিয়ার নতুন সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক’ স্থাপনের জন্য এইচটিএসকে তালিকা থেকে বাদ দেয়ার একটি আদেশ জারি করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্তের ফলে সন্ত্রাসবাদ-দমন, অভিবাসন ব্যবস্থাপনা ও সিরিয়ায় অবশিষ্ট রাসায়নিক অস্ত্র নির্মূলসহ যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কাজ করতে সুবিধা হবে।
আরও পড়ুন: মস্কোতে বৈঠক / পুতিনের সঙ্গে কী কথা হলো আল-শারার?
২০০৩ সালে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক আগ্রাসন শুরু হলে মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যোগ দেন তৎকালীন আল-কায়েদা নেতা আহমেদ আল-শারা। তিন বছর পর ২০০৬ সালে তাকে গ্রেফতার করে মার্কিন বাহিনী এবং তাকে যুক্তরাষ্ট্রে কারাবন্দি রাখা হয়।
২০১১ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আল শারা মার্কিন কারাগার থেকে মুক্তি পান। মুক্তি পাওয়ার পর সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে ২০১২ সালে আল কায়েদার অধীনে আল-নুসরা ফ্রন্ট গড়ে তোলেন তিনি। চার বছর পর ২০১৬ সালে আল-নুসরা ফ্রন্ট আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে।
তার এক বছর পর (২০১৭) আল-নুসরা ফ্রন্ট সিরিয়ায় আসাদ সরকারবিরোধী অন্যান্য দলের সঙ্গে মিলিত হয়ে হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) গঠন করে এবং অন্যতম শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিসেবে আবির্ভূত হয়।
গোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে সিরীয় জনগণের ওপর ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ ও সহিংসতার অভিযোগ ওঠে। এসব অভিযোগের কারণে ২০১৭ সালে এইচটিএসকে আল-কায়েদার একটি সহযোগী সংগঠন হিসেবে সন্ত্রাসী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে যুক্তরাজ্য।
আরও পড়ুন: জাতিসংঘের ভাষণে সিরিয়ায় ইসরাইলি হামলার নিন্দা আল-শারার
পরের বছর ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র আল-কায়েদার সঙ্গে অতীত সম্পর্কের কারণে হায়াত তাহরির আল-শামকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে ঘোষণা করে। শুধু তাই নয়, আল-শারা তথা মোহাম্মদ আল জুলানিকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য ১ কোটি ডলার পুরস্কারও ঘোষণা করে ওয়াশিংটন।
২০২৪ সালের শেষের দিকে আল-শারার নেতৃত্বাধীন এইচটিএস বাহিনী সামরিক অভিযানের মাধ্যমে দামেস্কের নিয়ন্ত্রণ নেয়। বাশার আল-আসাদ সরকারের পতন ঘটে। এরপর আল-শারার নেতৃত্বে সিরিয়ায় একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। সরকার গঠনের পরও এইচটিএস নৃশংস দমন-পীড়ন, বিশেষ করে আলাউই জাতিগোষ্ঠীরর মতো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অত্যাচার চালানো হয়েছে।
সংঘাত পর্যবেক্ষকদের তথ্য মতে, এইচটিএস ক্ষমতা নেয়ার পর গত ১০ মাসে সারাদেশে ১০ হাজার ৯৫৫ জনকে হত্যা করা হয়েছে, যার মধ্যে ৮ হাজার ৪২২ জন বেসামরিক নাগরিক, যার মধ্যে ৪৬৩ জন শিশু এবং ৬৩৬ জন নারী। এছাড়া ৩ হাজার ৫৪ জনকে খোলা মাঠে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: একদা যে মার্কিন জেনারেলের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন, তার সঙ্গেই এক মঞ্চে আল-শারা
এত নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞ সত্ত্বেও আল-শারা প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর চলতি বছরের জুলাইয়ে ওয়াশিংটন সিরিয়ার ব্যাপারে দ্রুত অবস্থান বদলায় এবং আল-শারার ওপর থেকে সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়।
এবার একই পদক্ষেপ নিলো যুক্তরাজ্যও। ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘যুক্তরাজ্য সিরিয়ায় সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা এবং অত্র অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য সিরীয় সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখবে। আমরা নতুন সিরীয় সরকারকে তাদের কথার ভিত্তিতে নয়, বরং কাজের মাধ্যমে বিচার করব।’
এর আগে গত জুলাই মাসে সিরিয়া সফর করেন যুক্তরাজ্যের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি, যা এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে দুই দেশের মধ্যে প্রথম উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক যোগাযোগ।
কিয়ার স্টারমার সরকার জানিয়েছে, এইচটিএসকে তালিকা থেকে বাদ দেয়ায় ‘সিরিয়ায় আইএস-বিরোধী অভিযানে সমর্থন অব্যাহত রাখবে, যা যুক্তরাজ্যের জন্য হুমকি কমাতে সহায়ক হবে।
আরও পড়ুন: ইসরাইলের সঙ্গে আলোচনা ‘অপরিহার্য’, দ্রুতই চুক্তি: সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট
ব্রিটিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, ‘অংশীদারদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা এবং সরকারের তালিকা পর্যালোচনা গোষ্ঠীর একটি শক্তিশালী মূল্যায়নের’ পরই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই সরকার সর্বদা ব্রিটিশ জনগণের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেবে’ এবং ‘ভবিষ্যতে কোনো নতুন হুমকির মুখে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অধিকার রাখে।’
]]>
৪ সপ্তাহ আগে
৭







Bengali (BD) ·
English (US) ·