হঠাৎ কেন উত্তাল তুরস্ক, কী হচ্ছে দেশটিতে?

৩ সপ্তাহ আগে
তুরস্কের বিভিন্ন শহরে শনিবার (২২ মার্চ) লাখ লাখ মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। বিরোধী দলের একজন প্রখ্যাত রাজনীতিবিদের গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধেই মূলত এই প্রতিবাদ। সভা-সমাবেশের ওপর উপর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় নেমে আসেন এবং এই গ্রেফতারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে বর্ণনা করেন। অনেকেই বলছেন, এটি তুরস্কে গত এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ।

তুরস্কে কেন প্রতিবাদ হচ্ছে?

 

যে রাজনীতিবিদের জন্য মানুষ রাস্তায় নেমেছে তার নাম একরেম ইমামোগলু। তিনি ইস্তাম্বুলের বর্তমান মেয়র এবং তাকে তুরস্কের আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের একজন সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।


ইমামোগলুর সমর্থকরা বলছেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। মূলত তিন বছর পর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে বাধা দেওয়ার লক্ষ্যেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।


বিক্ষোভকারীদের কেউ কেউ বলছেন, এটি শুধু ইমামোগলুর বিষয় নয়, বরং গণতন্ত্র, অর্থনীতি, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার মতো বড় বিষয় নিয়ে উদ্বেগের মতো বৃহৎ ইস্যু এখানে জড়িত।


আন্দোলন কবে শুরু হয়েছিল?

 

গত ১৯ মার্চ ইমামোগলু গ্রেপ্তার হওয়ার পরপরই আন্দোলন শুরু হয়। সেদিন হাজার হাজার মানুষ ইস্তাম্বুল বিশ্ববিদ্যালয়ে জড়ো হয়ে তাকে গ্রেপ্তারের বিরোধিতা করেন।
তারপর থেকে প্রতিবাদ চলছে। এরমধ্যে শনিবার সন্ধ্যায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ হয়েছে।
 

একরেম ইমামোগলু কে এবং তার সঙ্গে কী ঘটেছে?


তিনি ইস্তাম্বুলের মেয়র এবং রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) প্রার্থী হিসেবে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান।


৫৩ বছর বয়সী এই নেতা ২০১৯ সালে ইস্তাম্বুলের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ২০২৪ সালে পুনরায় নির্বাচিত হন।

 

একরেম ইমামোগলু। ফাইল ছবি/ রয়টার্স


১৯ মার্চ, তুর্কি পুলিশ ইমামোগলুকে ১০০ জনেরও বেশি মানুষের সাথে গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং নিষিদ্ধ রাজনৈতিক গোষ্ঠীকে সহায়তার অভিযোগ আনা হয়।


এর একদিন আগে, ইস্তাম্বুল বিশ্ববিদ্যালয় তার শিক্ষাগত ডিগ্রি বাতিল করে। এর ফলে তিনি প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্যও অযোগ্য হয়ে পড়েন। তার ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতক এবং মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি ছিল।


তিনি উত্তর সাইপ্রাসের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন। সেখান থেকে ক্রেডিট ট্রান্সফার করে ইস্তাম্বুল বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, উত্তর সাইপ্রাসের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থানান্তরের পর তার ডিপ্লোমায় অনিয়ম ছিল।


তার এই ডিগ্রি বাতিলের পদক্ষেপটি এলো সিএইচপি’র ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য প্রার্থী নির্ধারণের মাত্র কয়েকদিন আগে।


ইমামোগলুর বিরুদ্ধে কী অভিযোগ আনা হয়েছে?


ইমামোগলুর বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে দুর্নীতি, ঘুষ লেনদেন এবং “সন্ত্রাসবাদ” এর অভিযোগ আনা হয়েছিল।


ইস্তাম্বুলের প্রসিকিউটরদের বরাত আনাদোলু এজেন্সির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনি একটি অপরাধমূলক সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছেন; যারা পদ্ধতিগত জালিয়াতি, দরপত্রে কারচুপি, আত্মসাৎ এবং ঘুষ লেনদেনে জড়িত ছিল।


তার বিরুদ্ধে কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে)-কে সহায়তার অভিযোগও তোলা হয়েছে। পিকেকে তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচিত হয়।


আনাদোলুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রসিকিউটররা অভিযোগ করেছেন, ইমামোগলু ২০২৪ সালের মার্চে তুরস্কের স্থানীয় নির্বাচনের আগে ‘শহরে ঐকমত্য’ তৈরির উদ্যোগে অংশ নিয়েছিলেন। এই উদ্যোগে পিকেকে-সমর্থিত সন্ত্রাসী সংগঠন পিপলস ডেমোক্রেটিক কংগ্রেস যুক্ত ছিল।

রোববার দুর্নীতির বিচারের জন্য আদালত ইমামোগলুকে জামিন না দিয়ে জেলে পাঠিয়েছেন। তবে “সন্ত্রাসবাদ”-এর অভিযোগগুলো বাতিল করা হয়েছে।


তুরস্কের একটি আদালত তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ বহাল রেখে বলেছে, “যদিও একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠনকে সহায়তার জোরালো সন্দেহ রয়েছে, যেহেতু আর্থিক অপরাধের জন্য তাকে গ্রেপ্তারের সিদ্ধান্ত এরই মধ্যে নেওয়া হয়েছে, এই পর্যায়ে (তার গ্রেপ্তার) প্রয়োজনীয় মনে করা হয়নি।”


যেহেতু ইমামোগলুর বিরুদ্ধে “সন্ত্রাস” এর অভিযোগ আনা হয়নি তাই আদালত ইস্তাম্বুল পৌরসভায় সরকারি ট্রাস্টি নিয়োগ করতে পারবেন না। আল জাজিরার সিনেম কোসেওগলু জানিয়েছেন, এখন মেয়র পৌর পরিষদের মধ্য থেকে নির্বাচিত হবেন।


অভিযোগগুলো সম্পর্কে ইমামোগগুল কী বলছেন?


রয়টার্স নিউজ এজেন্সির দেখা একটি নথি অনুসারে, ইমামোগলু তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছেন।


“আজ জিজ্ঞাসাবাদের সময় দেখলাম, আমি এবং আমার সহকর্মীরা অকল্পনীয় অভিযোগ ও মানহানির মুখোমুখি হয়েছি।’’ শনিবার শুনানির সময় আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেন ইমামোগলু।


“আমি সমস্ত অভিযোগ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি।” বলেন তিনি।


এক্স পেজে (পূর্বে টুইটার) এক পোস্ট তিনি আন্তর্জাতিক নেতাদের তাকে এবং রাস্তায় নামা প্রতিবাদকারীদের সমর্থন দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েন।


প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান কী বলেছেন?


শুক্রবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোয়ান একটি বক্তৃতায় বলেছেন, কোনো রকম হস্তক্ষেপ চাড়াই বিচার ব্যবস্থাকে কাজ করতে দেওয়া উচিত।


বিক্ষোভের নিন্দা জানিয়ে তিনি এগুলোকে “রাস্তার সন্ত্রাস” বলে অভিহিত করেছেন। বলেছেন, “কেই জনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে আমরা সেটা মেনে নেব না।’’


“চুরি, লুণ্ঠন, আইনহীনতা এবং জালিয়াতির পক্ষ নিতে আদালতের পরিবর্তে রাস্তার দিকে নামা গুরুতর দায়িত্বহীনতা”, বলেন এরদোয়ান।


“আমরা এখন পর্যন্ত রাস্তার সন্ত্রাসের কাছে আত্মসমর্পণ করিনি, ভবিষ্যতেও ভাঙচুরের কাছে মাথা নত করব না।”

 

CHP’ye çökmüş bir avuç paragözün asırlık partiyi parmağında oynatması, “Gazi’nin emaneti” diyerek CHP’ye oy veren insanlarımızı da üzüyor.

Emin olun, samimi CHP’li vatandaşlarımız da İSKİ skandalından 32 yıl sonra aynı rezilliklere tekrar şahit olmayı içlerine sindiremiyor. pic.twitter.com/1D4UVCWoOe

— Recep Tayyip Erdoğan (@RTErdogan) March 22, 2025


প্রতিবাদ কত বড়?


বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, লক্ষাধিক মানুষ ইস্তাম্বুলের রাস্তায় নেমেছেন।


বিরোধী নেতা ওজগুর ওজেল বলেছেন, তিন লাখেরও বেশি মানুষ প্রতিবাদে যোগ দিয়েছেন এবং তারা দেশের বৃহত্তম শহরের (ইস্তাম্বুল) বিভিন্ন স্থানে জড়ো হয়েছেন। কারণ রাস্তা ও সেতু বন্ধ থাকায় সবাই এক জায়গায় থাকতে পারেনি।


এটি ২০১৩ সালের গেজি পার্ক প্রতিবাদের পর ইস্তাম্বুলের সবচেয়ে বড় সরকারবিরোধী প্রতিবাদ।

 

আরও পড়ুন: ইস্তাম্বুলের মেয়রকে নিয়ে ‘উসকানিমূলক’ পোস্ট, আটক ৩৭


প্রতিবাদকারীদের পুলিশের দিকে পাথর এবং ফ্লেয়ার ছুড়তে দেখা গেছে। পুলিশও পিপার স্প্রে দিয়ে জবাব দিয়েছে। তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ জলকামান এবং টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করেছে।


তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলি ইয়েরলিকায়া বলেছেন, শনিবার রাতের বিক্ষোভের পর ৩২৩ জনকে আটক করা হয়েছে।


প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কবে?

 

তুরস্কে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হওয়ার কথা ২০২৮ সালে। তবে অনেকেই মনে করছেন, আগাম নির্বাচন হতে পারে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন