কিন্তু বসতবাড়ি ও সড়কের পাশে এসব সোলার সড়কবাতি স্থাপন করার কয়েক মাস পর হতেই বেশিরভাগই অকেজো হয়ে পড়ে আছে। এমন দুরাবস্থা চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার বারোঘরিয়া, বালিয়াডাঙ্গা, গোবরাতলা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায়।
জানা যায়, ত্রাণ পুনর্বাসন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের টিআর/কাবিটা ও বিশেষ বরাদ্দ এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের উপজেলা পরিচালন ও উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৭-১৮, ১৮-১৯, ১৯-২০ ও ২০-২১ অর্থবছরে এসব সোলার প্যানেলযুক্ত সড়ক বাতি স্থাপন করা হয়। কিন্তু স্থাপন করার কয়েক মাস থেকেই কাজে আসছে না বাতিগুলো। ফলে অন্ধকার সড়কে বাতি থাকলেও অন্ধকারেই থেকে গেছে।
আরও পড়ুন: দিশেহারা ভুক্তভোগীরা / অ্যাপে বিনিয়োগের ফাঁদ: ৩০০ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা!
স্থানীয়দের দাবি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলায় সড়ক ও সড়কের আশপাশের বিভিন্ন স্থাপনা, শিক্ষা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানে দেয়া সোলার প্যানেলের সড়ক বাতি বেশিরভাগই নষ্ট হয়ে পড়েছে৷ সরকারি অর্থে স্থাপন করা এসব সোলার বাতির ৩ বছরের ওয়ারেন্টি থাকলেও কয়েক মাস পর হতেই অকেজো। এতে কাজে আসছে না সরকারি বরাদ্দে একেকটি ৩০ হাজার থেকে ৫২ হাজার টাকা মূল্যের এসব সোলার প্যানেলের সড়ক বাতি।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, নিম্নমানের সরঞ্জাম হওয়ায় টেকেনি বেশিদিন। এমনকি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ দিয়েও মেলেনি সুরাহা। অন্ধকার সড়কে আলো ফেরাতে সড়ক বাতিগুলো মেরামতের দাবি এলাকাবাসীর।
সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের চাঁপাই-মহেশপুর গ্রামের যুবক আপন রেজা নিশান বলেন, ‘আমাদের গ্রামের একটি সড়কে দীর্ঘ এলাকাজুড়ে ঘরবাড়ি নাই, দুই পাশে আমবাগান। এই সুযোগে সন্ধ্যার পর নানারকম অপরাধ সংঘটিত হয়। এর কারণে দুই-আড়াই বছর আগে সড়কের বিভিন্ন জায়গায় কয়েকটি সোলার প্যানেলযুক্ত বাতি স্থাপন করা হয়। এর কয়েকমাস পর থেকেই এগুলো অকোজো, বন্ধ হয়ে পড়ে আছে।’
রানিহাটি ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুরহাট গ্রামের বাসিন্দা ফয়সাল আজম অপু বলেন, ‘মসজিদের মুসল্লিরা রাতের অন্ধকারে যাতে মসজিদে যাওয়া আসা করতে কোনো সমস্যা না হয়, তাই রাস্তায় সোলার প্যানেলের বাতি স্থাপন করা হয় উপজেলার পক্ষ থেকে। কিন্তু তা কোনো কাজে আসেনি। কিছুদিন জ্বলার পর নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। সরকারি অর্থের বিপুল অপচয় হয়েছে এখানে। এগুলো মেরামত করা জরুরি হয়ে পড়েছে।’
আরও পড়ুন: হয়রানি আর দালালের দৌরাত্ম্যের প্রতিভূ রাজশাহী বিভাগের পাসপোর্ট অফিস
মসজিদপাড়া এলাকার মেহেদী হাসান সিয়াম জানান, নিম্নমানের সরঞ্জাম ব্যবহারের কারণেই এসব সোলার প্যানেলযুক্ত সড়কবাতির অবস্থা এমন। এসব সোলার প্যানেল স্থাপনের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন। সেই তদন্ত সাপেক্ষে কোনো গাফিলতি বা অনিয়ম-দুর্নীতি পাওয়া গেলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
বারোঘরিয়া গ্রামের সিফাত রানা বলেন, ‘সন্ধ্যা হলেই আমরা সড়কে যাতায়াত করত পারি না। ঘুটঘুটে অন্ধকারে নানারকম অপরাধ হয়। এনিয়ে দফায় দফায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসনকে সড়কবাতি নষ্ট হওয়ার বিষয়টি জানালেও দেখব-দেখছি বললেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সরকারি অর্থের অপচয় হয়েছে এই প্রকল্পে। আমাদের এলাকায় যেসব সোলার প্যানেলযুক্ত সড়কবাতি স্থাপন করা হয়েছে, তার বেশিরভাগই নষ্ট হয়ে পড়ে আছে।’
গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে এসব সড়ক বাতি থাকলেও বেশিরভাগই অকোজো বলে স্বীকার করেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। জনদুর্ভোগ বিবেচনায় দ্রুত মেরামতের দাবি জানান, সদর উপজেলার বারোঘরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশীদ।
তিনি বলেন, ‘সড়কবাতি নষ্টের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজন আমাদের অনেকবার বলেছে। আমরা উপজেলায় যোগাযোগও করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।’
আরও পড়ুন: কামার থেকে ‘চিকিৎসক’, সব রোগের ওষুধ ডাব!
ওয়ারেন্টির মেয়াদ শেষ হওয়ায় মেরামত কার্যক্রম থমকে আছে বলে জানায় স্থানীয় প্রশাসন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. তাছমিনা খাতুন বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। বিভিন্ন সড়কে সোলার প্যানেলযুক্ত বাতিগুলো নষ্ট হওয়ায় জনদুর্ভোগ হচ্ছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা করা হবে।’
উল্লেখ্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় মোট ৩৫৭৪টি সোলার প্যানেলযুক্ত সড়ক বাতি স্থাপন করা হয়। এরমধ্যে বাসতবাড়িতে ২০৫৮টি ও সড়কে ১৫১৪টি সোলার প্যানেল স্থাপন করা হয়।