বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সকাল ১১ টার দিকে সরেজমিন অনুসন্ধানে গেলে সময় সংবাদের কাছে ভুল স্বীকার করেছেন প্রতিষ্ঠানের মালিক মুনছুর আলী শেখ। বৈধ কাগজপত্র হাতে না পাওয়া পর্যন্ত আর কার্যক্রম চালাবেন না বলে অঙ্গীকার করেছেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পেশায় অ্যাম্বুলেন্স চালক মুনছুর আলী শেখ জেলা সিভিল সার্জন অফিসের পাশে ও সদর হাসপাতালের বিপরীতে টিনসেড ঘর ভাড়া নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন মেঘনা ডায়াগনস্টিক সেন্টার। তার ব্যবসায়ীক অংশীদার হিসেবে রয়েছেন রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের ওটি অ্যাসিস্টেন্ট নজরুল ইসলাম ও একটি প্রাইভেট ক্লিনিকের সাবেক নৈশপ্রহরী প্রকাশসহ আরও কয়েকজন। ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনা করার জন্য পৌরসভার ট্রেড লাইসেন্স, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা লাইসেন্স, ইনকাম ট্যাক্স সার্টিফিকেট, ফায়ার সার্টিফিকেট, শ্রম অধিদফতরের সার্টিফিকেট, পরিবেশ অধিদফতরের সার্টিফিকেট ও স্বাস্থ্য বিভাগের লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক। তবে চলতি বছরের ১১ মার্চ রাজবাড়ী পৌরসভা থেকে শুধুমাত্র একটি ট্রেড লাইসেন্স নিয়েই রোগীদের শরীরের বায়োকেমিস্ট্রি, সেরোলজি, হরমোন ও সিবিসিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে এ ডায়াগনস্টিক সেন্টারটিতে। একজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রিপোর্ট দিয়ে দিচ্ছেন।
আরও পড়ুন: বগুড়ায় ডায়াগনস্টিক সেন্টারে জরিমানা, সিলগালা
সরেজমিনে দেখা গেছে, কয়েকজন রোগী তাদের শরীরের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর জন্য বসে আছেন। এসময় রিসিপসনিস্ট ইউসুফ আলী মণ্ডলের কাছে ডায়াগনস্টিক সেন্টারটির লাইসেন্স সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি সকল কাগজপত্রই আছে বলে দাবি করেন। কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি রাজবাড়ী পৌরসভা থেকে চলতি বছরের ১১ মার্চ ইস্যু করা একটি ট্রেড লাইসেন্স দেখান। ট্রেড লাইসেন্সে মেঘনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের স্বত্ত্বাধিকারী হিসেবে নাম রয়েছে মুনছুর আলী শেখের। এছাড়া একটি ফায়ার লাইসেন্স ও টিন সার্টিফিকেট দেখিয়েই দায় এড়ান রিসিপসনিস্ট ইউসুফ আলী মণ্ডল। এ সময় সেখানে উপস্থিত হন প্রতিষ্ঠানটির স্বত্ত্বাধিকারী মুনছুর আলী শেখ। স্বাস্থ্য বিভাগের লাইসেন্স ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়া ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনা করা ভুল হয়ছে বলে তিনি স্বীকার করেন।
মুনছুর আলী শেখ বলেন, ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনার জন্য আমি ট্রেড লাইসেন্স ও ফায়ার সার্টিফিকেট হাতে পেয়েছি। স্বাস্থ্য বিভাগের লাইসেন্সসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য কাগজপত্রের জন্য আবেদন করেছি। পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করলে মেশিনগুলো অকেজো অবস্থায় পড়ে থেকে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই দু-একটি পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে রিপোর্ট দিচ্ছি। তবে এটি আমার ভুল হয়ে গেছে। সম্পূর্ণ কাগজপত্র হাতে না পাওয়া পর্যন্ত আমি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কার্যক্রম বন্ধ রাখবো।
ডায়াগনস্টিক সেন্টারটির মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মিতালী রায় বলেন, ‘আমরা এখানে বায়োকেমিস্ট্রি, সেরোলজি, হরমোন ও সিবিসি পরীক্ষা করি। আমি শুনেছি মালিকপক্ষ লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছেন। এর বাইরে আমি আর কিছু বলতে পারব না।’
আরও পড়ুন: সময় সংবাদের অনুসন্ধানের পর বরিশালে ভুয়া চিকিৎসককে ১ বছরের কারাদণ্ড
এ বিষয়ে রাজবাড়ী জেলা সিভিল সার্জন ডা. এস. এম. মাসুদ বলেন, ‘মেঘনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে শুধুমাত্র ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালানোর কোনো সুযোগ নেই। ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালাতে হলে যথাযথ নিয়ম-নীতি মেনেই চালাতে হবে। আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’