শনিবার (২২ মার্চ) বিকেলে পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের তেলিপাড়া নেছারিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার এ ঘটনাটি ঘটে। ঘটনায় রাতে দুপক্ষই থানায় এজহার দায়ের করেছেন। তবে কোনো আসামি গ্রেফতার হয়নি বলে জানা গেছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, তেলিপাড়া নেছারিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার মসজিদের মাইকে প্রতিদিন সেহরিতে রোজা রাখার জন্য ডেকে দেয়া হতো। সেহরিতে ডাকাডাকি ও উচ্চ মাইকের আওয়াজে প্রতিবেশী কায়েদে আজমের স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন প্রতিবাদ করেন। পরে কয়েকদিন মাইক বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু ওই সমাজের বেশিরভাগ মানুষ মাইকে ডাকার দাবি জানালে আবারও মাইকে ডাকাডাকি শুরু হয়। শনিবার বিকেলে বাজার করে ফেরার পথে মাদ্রাসা শিক্ষক আরিফ হাসান ও মুহতাসিম বিল্লাহকে আটক করে কায়েদে আজম ও তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন। এ সময় বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে সাবিনা ইয়াসমিন জুতা দিয়ে এবং কায়েদে আজম লাঠি দিয়ে তাদের মারধর শুরু করে। খবর পেয়ে মাদ্রাসার অন্য শিক্ষক ও ছাত্ররা ছুটে আসলে ওই দম্পতি ও তাদের স্বজনরা তাদেরও মারধর করে। এ সময় মাদ্রাসার পরিচালকের মা গুলজান নেহার (৫০) ও ৩ জন শিক্ষক ও ২১ জন ছাত্রসহ আহন মোট ২৭ জন আহত হন। অপরপক্ষের কায়েদে আজম ও তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনও আহত হন। তাদের পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মাদ্রাসার শিক্ষক মুহতাসিম বিল্লাহ বলেন, ‘৫-৭ বছর আগে মাদ্রাসার জমি নিয়ে তাদের সঙ্গে বিরোধ ছিল। এখন তারা সামান্য বিষয় নিয়েই ঝগড়া শুরু করে। মাইকে সেহরিতে ডাকার বিষয়ে তারা আপত্তি জানালে আমরা কিছুদিন মাইক বন্ধ রাখি। পরে বেশিরভাগ মানুষ ডাকার বিষয়ে দাবি জানালে পরে আবার ডাকা শুরু হয়। তবে মাইক অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেয়া হয়। এতে তারা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। বিকেলে আমরা ফেরার পথে আমাদের আটক করে মারধর শুরু করে তারা। কায়েদে আজমের স্ত্রী জুতা দিয়ে এবং সে লাঠি দিয়ে মারধর করতে শুরু করে।’
আরও পড়ুন: হবিগঞ্জে মাইকে ঘোষণা দিয়ে দুপক্ষের সংঘর্ষ, আহত অর্ধশতাধিক
মাদ্রাসার পরিচালক বাকি বিল্লাহ আল আশরাফ বলেন, ‘মাদ্রাসার শিক্ষক-ছাত্র থেকে শুরু করে আমার মাকেও তারা ছাড় দেয় নি। সবাই এখন হাসপাতালে। আমরা অভিযোগ দিয়েছি। আমরা আশা করি ন্যায়বিচার পাবো।’
অভিযোগ অস্বীকার করে কায়েদে আজম বলেন, ‘মাইকে ডাকাডাকিকে কেন্দ্র করে ওরা আমার স্ত্রীর নামে এলাকায় আজেবাজে কথা ছড়িয়েছে। আমরা মাইক একটু উপরে দেয়ার অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তারা উল্টো আমাদের বাড়ির দিকে মাইক ঘুরিয়ে দিয়েছে। এ বিষয়ে তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা সবাই আমাদের উপর হামলা করেছে।’
কায়েদে আজমের স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘তারা উচ্চস্বরে মাইকে দীর্ঘ সময় ডাকাডাকি করে। মাইক তারা আমার বাড়ির দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে। আমার বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আমার খুবই সমস্যা হচ্ছে। আমি তাদের একটি উঁচুতে মাইক বাঁধতে বা অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেয়ার অনুরোধ করেছিলাম। তারা তা শোনেনি। তারা খাঁজা এনায়েতপুরীর অনুসারী। মাদ্রাসা আমাদের ১০ শতক জমি দখল করে রেখেছে। ওই জমিতে কবরও দিয়েছে।’
এ বিষয়ে পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ হিল জামান বলেন, ‘সেহরিতে ডাকাডাকি ও পূর্বশত্রুতার জেরে এই ঘটনা ঘটেছে বলে আমরা জেনেছি। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ মামলা করেছেন। তাদের মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়েছে। অপরপক্ষের মামলাটি তদন্ত করে নথিভুক্ত করা হবে। এ ঘটনায় তদন্ত করে আসামি গ্রেফতার করা হবে।’