সাহিত্য সংসদের মঞ্চ উচ্ছেদ, সংস্কৃতিকর্মীদের ক্ষোভ

২ সপ্তাহ আগে
ময়মনসিংহ নগরীর শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কের ভেতরে থাকা বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। বুধবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন এই যৌথ অভিযান চালায়।

এতে অনেক ধরে জয়নুল পার্কের ভেতর অবৈধভাবে বেশকিছু স্থাপনা নির্মাণ করে ব্যবসা পরিচালনা করে আসা বিভিন্ন স্থাপনা এস্কাভেটর মেশিনের সাহায্যে ভেঙে ফেলা হয়। এসময় এস্কাভেটর দিয়ে ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের মুক্তমঞ্চও গুঁড়িয়ে ফেলা হয়। খবর পেয়ে সংস্কৃতিকর্মীরা এসে এর প্রতিবাদ করলে অভিযান বন্ধ রাখা হয়।


এ সময় সংস্কৃতিককর্মীদের স্থাপনার বৈধ কাগজপত্র দেখানোরও নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা। কিন্তু তারা কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি বলে জানানো হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে। পরে প্রতিবাদের মুখে উচ্ছেদ অভিযান থেকে সরে যান ভ্রাম্যমাণ আদালতের কর্মকর্তারা।

 

ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের মুক্তমঞ্চ ভেঙে দেয়ায় কবি ও সংস্কৃতিকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে ৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা করছেন অনেকেই। ঘোষণা করা হয়েছে প্রতিবাদ কর্মসূচিও।

 

আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহের স্টেডিয়ামের নাম পরিবর্তন করলো জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ

 

স্থানীয় সংস্কৃতিকর্মীরা জানায়, ১৯৮০সালের ২১ মে ময়মনসিংহে কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীদের সমন্বয়ে সাহিত্য সংসদ গঠিত হয়। ১৯৮৩ সাল থেকে নিয়মিত পাঠচক্র বীক্ষণ আসর শুরু হয়। আগামী শুক্রবার ছিল বীক্ষণের ২১৪৬ তম আসর। শুরু থেকে বিরতিহীন প্রতি শুক্রবার আসরটি বসে। একটি মুক্তমঞ্চে কবি-সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিকর্মীরা সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কবিতা, গান, আলোচনা করে থাকেন। দেশের বিখ্যাত কবি সাহিত্যিক এখানের মুক্তমঞ্চে সাহিত্যায়োজনে কবিতা পড়েছেন, সাহিত্যালোচনা করে গেছেন।

 

সাহিত্য সংসদের সভাপতি কবি ফরিদ আহমেদ দুলাল বলেন, ‘নগরের জয়নাল আবেদীন উদ্যান এলাকায় ১৯৯৩ সালের দিকে তৎকালীন জেলা প্রশাসন সাড়ে ৬ শতক জমি সাহিত্য সংসদকে বরাদ্দ দেন। সে জমিতেই প্রশাসন ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনও করে। এখানে আমরা এমন কোনো অসামাজিক কাজ করি না যা মানুষের খারাপ লাগার কাজ। এখানে মানুষের কল্যাণ ও কবিতা নিয়েই আলোচনা হয়।  কিন্তু কেন ভাঙা হলো, কি অপরাধ তার কিছুই জানতে পারলাম না।’

 

কবি সাঈদ ইসলাম বলেন, ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদ কেবল এই শহরের সাহিত্যের প্রাণকেন্দ্রে নয় এটি এই অঞ্চলের শিল্প সংস্কৃতি চর্চার হাব। সাহিত্য সংসদের এই মুক্তমঞ্চ ভাঙার মধ্য দিয়ে প্রশাসন শিল্পচর্চার উপর আঘাত হেনেছে। আমরা এই ঘটনার নিন্দা জানাই এবং অনতিবিলম্বে ভেঙে দেয়া মঞ্চটি পুননির্মাণের দাবি জানাই। প্রশাসনকে বলবো, অবৈধ নদী দখল ও চাঁদাবাজি বন্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করুণ, শিল্প সংস্কৃতির উপর বুলডোজার চালাবেন না।

 

ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলমের মুঠোফোনে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।

 

আরও পড়ুন: ময়মনসিংহে বিএনপির দুপক্ষের সংঘর্ষ, ৫ জনকে কুপিয়ে জখম

 

তবে সিটি করপোরেশনের সচিব সুমনা আল মজিদ বলেন, কাগজপত্রে সাহিত্য সংসদ বলতে সেখানে কিছু নেই। আপনি তাদের কাছে জানতে চাইবেন তাদের কাছে কোনো ডকুমেন্ট আছে কিনা। অবৈধভাবে কোনো জায়গা দখল করলে তো হবে না।  

 

তিনি আরও বলেন, সাহিত্য সংসদ আমাদের কাছে আবেদন করলে আমরা অন্য জায়গায় ব্যবস্থা করে দেব। ওই এলাকাটি মাদকের আখড়া হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। এটি তো হতে পারে না। আজকে অভিযানের সময় এসে যারা বাঁধা দিয়েছে তাদের বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেব।

 

এদিকে সাহিত্য সংসদের মুক্তমঞ্চ গুঁড়িয়ে দেয়ার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (১ মে) সকাল ১১টায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদী কথা, কবিতা ও গান কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন