২০০২ সালের ৩ মে মধ্যরাতে ঢাকা থেকে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীগামী 'এমভি সালাউদ্দিন-২' লঞ্চটি ভয়াবহ ঝড়ে মেঘনা নদীতে ডুবে যায়। লঞ্চে প্রায় ৩৫০-৪০০ জন যাত্রী ছিলেন। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া উপেক্ষা করে যাত্রীদের বোঝাই করে লঞ্চটি যাত্রা শুরু করে, অথচ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল অনুপস্থিত। পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট ও উদ্ধার সামগ্রী ছিল না, আর এর পরিণতি ছিল মর্মান্তিক।
প্রাণহানি ও নিখোঁজ
সরকারি হিসাব অনুযায়ী প্রায় ১৬০ জনের প্রাণহানি ঘটে, তবে স্থানীয় সূত্রে এই সংখ্যা আরও বেশি বলে জানা যায়। অনেকে এখনও নিখোঁজ রয়েছেন, আর তাদের মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। নিহতদের বেশিরভাগই ছিলেন রাঙ্গাবালী, গলাচিপা ও দশমিনা উপজেলার সাধারণ মানুষ। কেউ চিকিৎসার জন্য, কেউ জীবিকার খোঁজে ঢাকায় গিয়েছিলেন।
ছবিতে লেখা ইতিহাস
লঞ্চটি ডুবে যাওয়ার পর উদ্ধার তৎপরতা ছিল অত্যন্ত মর্মস্পর্শী। নদী থেকে লঞ্চটি তুলতে চেষ্টা করা হয়েছিল, তার একটি প্রতিকৃত ছবি আজও স্থানীয় মানুষের স্মৃতিতে অম্লান। কপিকলের ভারী শিকলে লঞ্চটি তোলার দৃশ্যটি ছিল যেন একটি বিভীষিকা। এক পাশে হাজারো চোখ—যারা হারানো প্রিয়জনের মরদেহ খুঁজছিল, আর অন্য পাশে বিস্ময়ের মধ্যে বিভীষিকার বাস্তবতা দেখছিল। এ দৃশ্য আজও মানুষের মনের গভীরে লুকিয়ে আছে।
আরও পড়ুন: রাঙ্গাবালীর জেলেদের জীবনে কাঁকড়া হয়ে উঠছে প্রধান আয়ের উৎস
বেঁচে ফেরা এক যাত্রীর চোখে বিভীষিকা
ওই লঞ্চে যাত্রী ছিলেন মো. মাসুম মাহমুদ। ২৩ বছর পর সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা আজও তার মনে দাগ কেটে রেখেছে। তিনি বলেন,
সেদিন লঞ্চ ডুবে যাওয়ার পর পানিতে সাঁতরাচ্ছিলাম, অন্ধকারে কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না। আল্লাহর রহমতে শেষ পর্যন্ত একটি লঞ্চে উঠতে পেরেছিলাম। কিন্তু যারা মারা গেছে, তাদের পরিবারের শোক কখনও ভুলতে পারব না।
বিচারহীনতার দীর্ঘশ্বাস
দুর্ঘটনার পর গঠিত তদন্ত কমিটি নিরাপত্তার ঘাটতির বিষয়টি তুলে ধরে। বলা হয়, লঞ্চটি অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই এবং জীর্ণ ছিল। তবে দুদশক পেরিয়ে গেলেও এই দুর্ঘটনার জন্য আজও কারও শাস্তি হয়নি। সেই রুটে পুরানো ও অনিরাপদ লঞ্চ এখনও চলাচল করছে, যা জীবন ও নিরাপত্তার মৌলিক অধিকারকে উপেক্ষা করছে।
স্থানীয়রা বলছেন, সালাউদ্দিন-২ লঞ্চডুবি কেবল একটি দুর্ঘটনা নয়, এটি অব্যবস্থাপনা, অবহেলা এবং জবাবদিহিতার চরম অভাবের একটি অশনি সংকেত। নিহতদের প্রতি আমাদের অন্তর থেকে শ্রদ্ধা। আল্লাহ যেন তাদের শহীদের মর্যাদা দান করেন।
]]>