সন্তান হারানো এক মা জানান, আজ বাড়ির ঘরগুলো মা মা শব্দে মুখর থাকার কথা ছিল। অথচ এ ঘরেই সন্তানের স্মৃতি খুঁজে বেড়াচ্ছেন সেই মা। ১৯ জুলাই ২০২৪, স্বৈরাচার পতনের দাবিতে সারাদেশ যখন উত্তাল। ঠিক তখনই মিরপুরে ছাত্রদের তৈরি অভেদ্য মানবদেয়ালে হাতে হাত রেখে দাঁড়ানো অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হন আকরাম খান রাব্বী।
ঈদ আনন্দ শুধু ফিঁকেই হয়নি শুধু এ মায়ের। ধূসর চোখে আমৃত্যু অপেক্ষা তার যেন। ক্লান্তিহীন এ চোখ পাহারায় সন্তানের ফিরে আসবার পথে। ছেলের বাড়ি না ফেরার যন্ত্রণা একদিন পাষাণ হয়ে বাবার বুকে ঠাঁই নেবে হয়ত। বাতাসে ভেসে আসা শব্দে মা চমকে উঠবে বারবার। অবুঝ মন যেন বুঝতেই চায় না বুকের মানিক হারিয়ে চিরতরে নিঃস্ব হয়েছেন তারা।
আরও পড়ুন: বগুড়ায় সম্মাননা ও ঈদ উপহার পেল শহীদ পরিবার
প্রতি ঈদেই সন্তানের নানা বায়না পূরণে মগ্ন থাকতেন মা-বাবা। ঈদের চাঁদ হয়ে এ ঘরে-ও ঘরে ঘুরে বেড়ানো তানহা এবার সত্যিই চাঁদ হয়ে পাড়ি জমিয়েছে দূর আকাশে। যেখানে চাইলেই তাকে ছুঁয়ে দেখতে পারবে না বাবা, বুকে জড়িয়ে নিতে পারবে না মা। ৫ আগস্ট বিকেলে তানহা নিজের জীবন দিয়ে বিদায় করেছিল স্বৈরাচারকে।
পড়ালেখা শেষ করে ভবিষ্যতের ভাবনায় নিজেকে তৈরি করছিলেন ডেমরার মিরাজুল হক। টেবিলের কোণে পড়ে থাকা চশমায় চোখ পড়তেই বাবার চোখ ভিজে যায় জলে। ভেতরটা দুমড়ে-মচড়ে যায় আবদুর রবের। অবাক খেয়ালে ছোট্ট মিরাজের হাতের স্পর্শ পায় নিজের হাতে। পরম নির্ভরতায় যে হাতের মুঠোয় বাবার হাত রেখে ঈদগাহে যেত মিরাজ।
মিরাজুল হকের বাবা বলেন, আমাদের ঈদ মরে গেছে ছেলের সাথে সাথে।
এরইমধ্যে আহত অনেকে ছুটি নিয়েছেন হাসপাতাল থেকে। অনেকেই অপেক্ষায় সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার। যে লক্ষ্যে গণঅভ্যুত্থান রূপ নিয়েছিল গণবিপ্লবে বৈষম্যহীন রাষ্ট্র নির্মাণের মধ্য দিয়ে সেই বিপ্লবকে স্বার্থক করার আহ্বান এসব যোদ্ধাদের।
উৎসবের এদিনে এ মানুষগুলোর চাওয়া একটি সুন্দর বাংলাদেশ। যেখানে থাকবে না বৈষম্য, থাকবে না স্বজন হারানোর আর্তনাদ। উৎসব হবে সবার, দেশ হবে গণমানুষের।