বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) গণমাধ্যমে পাঠানো এক শোকবার্তায় উপদেষ্টা বলেন, বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের একজন সাহসী সৈনিক হিসেবে সন্জীদা খাতুন চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
তিনি বলেন, সন্জীদা খাতুন যেভাবে এ দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করেছেন, তাঁর প্রয়াণে জাতি এক অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এখন সময় এসেছে তার অবদানকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করার এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তা সংরক্ষণ করার।
শারমীন এস মুরশিদ বলেন, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদের যে উন্মেষ ঘটেছিল, সন্জীদা খাতুন ছিলেন তার একজন প্রত্যক্ষ সাক্ষী ও সক্রিয় অংশগ্রহণকারী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপনের সময় তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ছায়ানট’-এর প্রতিষ্ঠায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আবৃত্তি, অভিনয় ও গানের চর্চার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক সংগ্রামে তার অংশগ্রহণ ছিল অতুলনীয়।
তিনি বলেন, ১৯৬৭ সালের পহেলা বৈশাখে ‘ছায়ানট’-এর প্রথম অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথের ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’ গানটি যখন দর্শকের মনে উৎসবের আনন্দ জাগিয়ে তুলেছিল, তখন সন্জীদা খাতুনের সংগীতের প্রতি পক্ষপাত সাংস্কৃতিক উদ্যাপনে নতুন মাত্রা যোগ করে।
আরও পড়ুন: শাকিব খানের প্রশংসায় পঞ্চমুখ বুবলী, যা বললেন ‘বরবাদ’ নিয়ে
সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা বলেন, ‘ছায়ানট’ শুরু থেকেই পল্লিগীতি ও গণসংগীতকে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে কাজ করে আসছিল এবং নজরুলের কবিতা ও গান এই আন্দোলনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছিল।
শারমীন এস মুরশিদ বলেন, সন্জীদা খাতুন শুধু একজন সংগঠকই ছিলেন না, তিনি সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে সঞ্জীবিত করার পাশাপাশি শিক্ষাক্ষেত্রে মানবিক চেতনার বিকাশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। তার উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনার সঙ্গে জার্মান দার্শনিক রুডলফ স্টেইনারের শিশুশিক্ষা ও বিকাশ সংক্রান্ত চিন্তা একীভূত হয়েছিল।
উপদেষ্টা আরও বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সাংস্কৃতিক প্রস্তুতি পর্বে এবং স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে সংগীতের বিকাশে তিনি ছিলেন এক মহিরুহ। তার প্রয়াণে জাতি যে অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, তা থেকেই তার অবদানের মূল্যায়ন শুরু করতে হবে। তিনি যেভাবে বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছেন, তার সেই অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সবাই দোয়া করছেন, আল্লাহ যেন তাকে জান্নাত নসিব করেন।
উল্লেখ্য, গত ২৫ মার্চ রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্জীদা খাতুন মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর।