সকালে যে আমল করলে সারাদিন ভালো কাটবে

৩ সপ্তাহ আগে
জীবনকে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির পথে পরিচালিত করা একজন মুমিনের প্রধান লক্ষ্য। ইসলাম আমাদের শেখায়, প্রত্যেকটি দিন যেন আমরা আল্লাহর ইবাদত ও তার স্মরণে কাটাই। দিনের শুরুটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি সকালে কিছু আমল করা বান্দার আত্মিক উন্নতির জন্য অত্যন্ত ফলপ্রসূ হতে পারে।

আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) সহজ কিন্তু কার্যকর আমলগুলো আমাদের সামনে রেখেছেন, যা আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক অসাধারণ মাধ্যম। আজ আমরা দুটি সহজ, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ আমল সম্পর্কে জানব, যা সকালে উঠে করতে পারলে দিনটি আল্লাহর রহমত ও বরকতে ভরপুর হয়ে উঠবে।

 

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সকালে একশত বার ও সন্ধ্যায় একশত বার ‘সুবহা-নাল্লা-হি ওয়া বিহামদিহি’ পড়বে, কিয়ামতের দিন তার চেয়ে উৎকৃষ্ট কিছু কেউ নিয়ে আসতে পারবে না। তবে সে ব্যক্তি ছাড়া যে তার মত বলবে বা তার চেয়ে বেশি আমল করবে।’ (মুসলিম, হাদিস ২৬৯২)

 

আরবি : سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ উচ্চারণ : সুবহা-নাল্লা-হি ওয়া বিহামদিহি

 

অর্থ: আমি আল্লাহর প্রশংসাসহ পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি।

 

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন যে, এক লোক নবী (সা.)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! গত রাতে আমাকে একটা বিচ্ছু কামড় দেয়ায় কী কষ্টটাই না পেয়েছি! তিনি বললেন: তুমি যদি সন্ধ্যাকালে বলতে-

 

أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ উচ্চারণ: আউজু বিকালিমা-তিল্লা-হিত তা-ম্মাতি মিন শাররি মা খালাক্বা।
 

 

অর্থ: আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমাসমূহের উসিলায় আমি তার নিকট তার সৃষ্টির ক্ষতি থেকে আশ্রয় চাই। তাহলে তোমার কোনো ক্ষতি হত না। (মুসলিম, হাদিস : ২৭০৯)

 

সকালে পড়ার কিছু দোয়া

 

ফজরের পর পড়ার মতো ফজিলতপূর্ণ অনেক আমল রয়েছে। যেগুলো পড়ে মুমিন বান্দা নানা ধরনের উপকার লাভ করতে পারে। নিম্নে কতিপয় আমল উল্লেখ করা হলো-

 

আরও পড়ুন: নারীরা কি মাহরাম ছাড়া ওমরাহ করতে পারবেন?


আয়াতুল কুরসি পড়া

 

রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, তার জান্নাতে প্রবেশের পথে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো অন্তরায় থাকবে না।’ (শুআবুল ঈমান, হাদিস : ২৩৯৫)

 

আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের দোয়া

 

আল্লাহর রসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোন মুসলিম যখন সকালে উপনীত হয় কিংবা সন্ধ্যায় উপনীত হয় তখন যদি ৩ বার বলে, আল্লাহর কাছে তার অধিকার হয়ে যায়— তাকে কিয়ামাতের দিন সন্তুষ্ট করা।

 

رَضِيتُ بِاللَّهِ رَبَّاً، وَبِالْإِسْلاَمِ دِيناً، وَبِمُحَمَّدٍ ﷺ نَبِيّاً উচ্চারণ : রাদ্বিতু বিল্লাহি রব্বান, ওয়াবিল ইসলা-মি দীনান, ওয়াবি মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামা নাবিয়্যান।

 

অর্থ : আল্লাহকে রব, ইসলামকে ধর্ম হিসেবে ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নবিরূপে গ্রহণ করে আমি সন্তুষ্ট। (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ১৮৯৬৭; মুসনাদ গ্রন্থে মুহাক্কিকগণ হাদিসটিকে সহিহ লি গাইরিহি' বলেছেন]

 

সাইয়েদুল ইস্তিগফার

 

যদি কেউ দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে সকাল-সন্ধ্যা সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার পড়ে এবং ওই দিনে বা রাতে ইন্তেকাল করে, তবে সে জান্নাতি হবে। (বুখারি : ৬৩০৬)

 

اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْت

 

(উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আনতা রব্বি। লা ইলাহা ইল্লা আনতা। খালাকতানি ওয়া আনা আবদুকা। ওয়া আনা আলা আহদিকা। ওয়া ওয়া’দিকা মাসতাতা’তু। আউজুবিকা মিন শাররি মা-সানাআ’তু। আবুয়ু লাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়্যা। ওয়া আবুয়ু লাকা বি জাম্বি। ফাগফিরলি। ফাইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনবা ইল্লা আনতা।)

 

অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমার প্রভু, আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ বা মাবুদ নেই; আপনিই আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি আপনারই গোলাম, আর আমি আছি আপনার প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকারের ওপর আমার সাধ্যমতো; আমি আপনার কাছে পানাহ ও আশ্রয় চাই আমার অনাসৃষ্টির অকল্যাণ এবং অপকার ও ক্ষতি হতে। আমি স্বীকার করছি আমার প্রতি আপনার সব নিয়ামত, আরও স্বীকার করছি আপনার সমীপে আমার সকল অপরাধ; সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন, আর অবশ্যই আপনি ছাড়া ক্ষমা করার আর কেউ নেই (সুনানে নাসায়ি ৫৫২১, বুখারি ও মুসলিম)।

 

বিপদ-আপদ থেকে মুক্তির দোয়া

 

উসমান বিন আফ্‌ফান (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি যে, ‘যে ব্যক্তি সন্ধ্যাবেলা তিনবার নিম্নোক্ত দোয়া বলবে— সে ব্যক্তি সকাল পর্যন্ত কোন আচমকা বিপদে আক্রান্ত হবে না। যে ব্যক্তি সকাল বেলা এ বাণীগুলো ৩ বার পড়বেন সন্ধ্যা হওয়া পর্যন্ত সে ব্যক্তি কোন আচমকা বিপদে আক্রান্ত হবেন না। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৮৮)

 

بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلاَ فِي السّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ (উচ্চারণ: বিস্‌মিল্লা-হিল্লাজি লা ইয়াদ্বুররু মা‘আ ইস্‌মিহী শাইউন ফীল আরদ্বি ওয়ালা ফিশ সামা-ই, ওয়াহুয়াস্ শামি‘উল ‘আলিম।)

 

অর্থ: আল্লাহর নামে (সকল অনিষ্ট থেকে সাহায্য চাই), যার নাম (স্মরণের) সাথে আসমান ও যমিনে কোনো কিছুই ক্ষতি করতে পারে না। আর তিনি  সর্বশ্রোতা, জ্ঞানী।

 

অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে, কোন বান্দা যদি প্রত্যেক দিন সকালে ও রাতে ৩ বার করে নিম্নোক্ত দোয়া পড়ে—

 

بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ

 

(উচ্চারণ: বিস্‌মিল্লা-হিল্লাজি লা ইয়ায্‌যুররু মা‘আ ইস্‌মিহি শাইউন ফিল আর্জি ওয়ালা ফিশ সামা-ই, ওয়াহুয়াস্ সামী‘উল ‘আলীম) কোনো কিছু তার ক্ষতি করতে পারবে না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৮৮; জাদুল মাআদ : ২/৩৩৮)

 

আবুদ দারদা (রা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি সকালে ও সন্ধ্যায় ৭ বার নিম্নোক্ত দোয়া পড়বেন—

 

حَسْبِيَ اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ ، عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ (উচ্চারণ: হাসবিয়া আল্লাহু লা-ইলাহা ইল্লা হুয়া আলাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়া হুয়া রাব্বুল আরশিল আযিম।)

 

অর্থ: আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট। তিনি ছাড়া সত্য কোনো উপাস্য নেই। তার উপরই আমি তাওয়াক্কুল করি। তিনি মহান আরশের অধিপতি) আল্লাহ্‌ তার দুশ্চিন্তা দূর করে দিবেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৮১)

 

জাহান্নাম থেকে মুক্তির দোয়া

 

যে ব্যক্তি ফজর ও মাগরিবের পর সাতবার নিম্নের দোয়াটি পাঠ করে এবং ওই দিনে বা রাতে তার মৃত্যু হয়, তাহলে সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৭৯)
দোয়া: ‘আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান নার।’

 

অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করুন।

 

জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে আল্লাহর ইবাদতে নিযুক্ত করার চেষ্টা একজন মুসলিমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দিনের শুরুতে এই সহজ কয়েকটি আমল একজন মুমিনকে আল্লাহর নৈকট্য এবং তার রহমতের অধিকারী করবে। আমাদের সকলেরই উচিত, এই সুন্নত অনুসরণ করে প্রতিদিনের জীবনে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার চেষ্টা করা। আল্লাহ আমাদেরকে এসব আমল পালন করার তাওফিক দান করুন। দয়াময় আল্লাহর অশেষ রহমত দিয়ে আমাদের জীবনের প্রতিটি দিনকে বরকতময় করুন। আমিন।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন