সকাল-সন্ধ্যার নিরাপত্তায় যে দোয়া পড়বেন

৩ সপ্তাহ আগে
মানবজীবনের সর্বোচ্চ কামনা হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে জান্নাতে প্রবেশ করা এবং জাহান্নামের আগুন থেকে নিরাপদ থাকা। এই মুক্তিই মুমিনের আসল সাফল্য।

আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেন,

 

فَمَنْ زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ যে ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হলো এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হলো, সে-ই সফল। (সুরা আল ইমরান:১৮৫) এই সাফল্য অর্জনের জন্য ইসলাম আমাদেরকে নানা আমল ও দোয়ার শিক্ষা দিয়েছে। তন্মধ্যে একটি দোয়া রয়েছে, যা নিয়মিত পাঠ করলে বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তির সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে।


রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

 

مَن قال حين يصبحُ أو يُمسي
اللهمَّ إني أصبحتُ أشهدُكَ، وأشهدُ حملةَ عرشِك، وملائكتَك، وجميعَ خلقِك، بأنَّك أنت اللهُ لا إلهَ إلا أنت وحدك لا شريكَ لك، وأنَّ محمَّدًا عبدُك ورسولُك.

 

উচ্চারণ: আল্লাাহুম্মা ইন্নি আসবাহতু আশহাদুকা, ওয়া আশহাদু হামলাতা ‘আরশিকা, ওয়া মালােইকাতাকা, ওয়া জামিআ খালকিক, আন্নাকা আনতাল্লাাহু লা ইলাাহা ইল্লা আনতা, ওয়াহদাকা লা শারিকা লাকা, ওয়া আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুকা ওয়া রসুলুক।

 

হে আল্লাহ! আমি সকালবেলায় আপনাকে সাক্ষী রাখছি, এবং আপনার আরশ বহনকারীগণ, আপনার ফেরেশতাগণ ও আপনার সমস্ত সৃষ্টিকে সাক্ষী রেখে ঘোষণা করছি, আপনি আল্লাহ, আপনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, আপনি এক ও অদ্বিতীয়, আপনার কোনো অংশীদার নেই, এবং মুহাম্মাদ রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনার বান্দা ও রসুল। (সুনানু আবি দাউদ:৫০৭১; মুসনাদু আহমদ:২৫৫৫২; সহিহ জামে:৬৪২৫)

 

আরও পড়ুন: নবীজির প্রিয় স্ত্রী

 

হাদিসের ফজিলত

 

রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

 

যে ব্যক্তি সকাল বা সন্ধ্যায় একবার এই দোয়া পাঠ করে, আল্লাহ তাআলা তাকে জাহান্নাম থেকে এক-চতুর্থাংশ মুক্তি  দান করেন। দু’বার পাঠ করলে অর্ধেক, তিনবার পাঠ করলে তিন-চতুর্থাংশ, আর চারবার পাঠ করলে সম্পূর্ণ মুক্তি প্রদান করেন। এমন একটি সংক্ষিপ্ত দোয়া, অথচ ফজিলত অপরিসীম! এটি মুমিনের হৃদয়ে তাওহিদের সাক্ষ্যকে নবায়ন করে, নবীজির প্রতি আনুগত্যকে দৃঢ় করে, আর আখিরাতে নিরাপত্তার দরজা খুলে দেয়। এই হাদিসে রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের এমন এক দোয়া শিখিয়েছেন, যা মুমিনের ঈমানের নবায়ন, তাওহিদের পুনঃপ্রত্যয়ন এবং নবীজির রিসালাতের স্বীকৃতি বহন করে। 


১. তাওহিদের পুনঃপ্রত্যয়ন:

দোয়ার কেন্দ্রে রয়েছে তাওহিদের ঘোষণা أنت الله لا إله إلا أنت وحدك لا شريك لك এটি সেই কালিমার পুনঃউচ্চারণ, যার মাধ্যমে একজন মানুষ মুসলমান হয়। প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় এই সাক্ষ্য প্রদান মানে হলো ঈমানকে সতেজ রাখা, অন্তরে আল্লাহর একত্বের অনুভূতি জাগ্রত রাখা।

 

২.নবুয়তের স্বীকৃতি

 

وأن محمداً عبدك ورسولك এর মাধ্যমে আমরা নবীজির রিসালাতের প্রতি আনুগত্য নবায়ন করি। নবীজির আনুগত্যই জান্নাতের পথ وَمَن يُطِعِ اللَّهَ وَالرَّسُولَ فَأُولَـٰئِكَ مَعَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ যে আল্লাহ ও রসুলের আনুগত্য করে, সে আল্লাহ যাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন তাদের সঙ্গী হবে। (সুরা নিসা:৬৯)

 

৩.আল্লাহর সামনে আত্ম-সাক্ষ্য প্রদান

 

এই দোয়ায় বান্দা শুধু নিজে নয়, বরং আল্লাহর ফেরেশতা ও সমগ্র সৃষ্টিকে সাক্ষী রাখে। এটি এক ধরনের ঈমানের সার্বজনীন ঘোষণা, যা আল্লাহর দরবারে মুমিনের অবস্থানকে দৃঢ় করে।

 

কুরআনের সাথে সামঞ্জস্য

 

কুরআনে আল্লাহ বলেন,

 

يُثَبِّتُ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ আল্লাহ সেই মুমিনদের দৃঢ় রাখেন দৃঢ় বাক্যের মাধ্যমে (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ), দুনিয়াতেও এবং আখিরাতে। (সুরা ইবরাহিম:২৭) এই দোয়া ঠিক সেই কওলুস সাবিত, দৃঢ় ঈমানের সাক্ষ্য, যা মৃত্যুর সময় ও আখিরাতে মুমিনকে সহায়তা করবে।

 

দোয়ার সময় ও পদ্ধতি

 

সকালবেলায় সূর্যোদয়ের পর (সকাল জিকিরের সময়) সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের পর (সন্ধ্যার জিকিরের সময়) প্রতিবার অন্তত চারবার এই দোয়া পাঠ করা মুস্তাহাব। মহান আল্লাহর নিকট এটি যেন মুক্তির সোপান হয়ে যায়।


আধ্যাত্মিক প্রভাব

 

১. অন্তর শান্ত ও পরিশুদ্ধ হয়। ২. তাওহিদ ও রিসালাতের বিশ্বাস দৃঢ় হয়। ৩. আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের প্রেরণা জাগে। ৪. জাহান্নামের ভয় অন্তর থেকে দূর হয়। ৫. বান্দা দিন-রাত আল্লাহর উপস্থিতি অনুভব করতে শুরু করে।

 

মানুষের জীবনে এমন কিছু আমল আছে যা দেখতে ছোট হলেও ফলাফল অসীম। এই দোয়াটি তারই একটি। প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় চারবার এ দোয়া পাঠ করলে আল্লাহ তাআলা স্বয়ং বান্দাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দেন,এ চেয়ে বড় সৌভাগ্য আর কী হতে পারে! আসুন, আমরা প্রতিদিন এই দোয়াটি পাঠ করার অভ্যাস গড়ে তুলি। আমাদের সন্তানদেরও এটি শেখাই, যেন তারা আল্লাহর একত্ব ও নবীজির প্রতি ভালোবাসা অন্তরে ধারণ করে জান্নাতের যোগ্য হয়ে ওঠে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন