পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার মসজিদবাড়িয়া গ্রামে অবস্থিত এই শাহি মসজিদটি সুলতানি আমলে নির্মিত হয়েছিল। জনশ্রুতি অনুযায়ী, ১৪৬৫ সালে সুলতান রুকনুদ্দীন শাহ বাকলা দখলের পর এক গম্বুজবিশিষ্ট এই মসজিদ নির্মাণ করেন।
মসজিদটি মুসলিম স্থাপত্যশৈলীর এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এতে তিনটি দৃষ্টিনন্দন কারুকার্যখচিত মেহরাব, পূর্বদিকে তিনটি খিলান পথ, ছয়টি আট কোন বিশিষ্ট মিনার ও সুদৃশ্য পিলার রয়েছে। বারান্দাযুক্ত এই মসজিদের পূর্ব, উত্তর ও দক্ষিণ পাশে দুটি করে জানালা রয়েছে। তবে দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে এর দরজা-জানালার কপাট ও পিলারগুলোর অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পথে। মসজিদ সংলগ্ন একটি বড় দীঘি রয়েছে, যা মুসল্লিদের অজু ও গোসলের জন্য ব্যবহৃত হয়। মসজিদের দক্ষিণ-পূর্ব পাশে রয়েছে আরও দুটি কবর, যেখানে পরগনার ইয়াকিন শাহ ও কালা শাহ চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন।
আরও পড়ুন: এ মসজিদটিতে ৭০ হাজার মুসল্লি নামাজ পড়তে পারেন
যদিও মসজিদটি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আওতায় রয়েছে, তবে দীর্ঘদিন ধরে অবহেলা ও প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে এটি তার সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলছে। স্থানীয় বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে মসজিদটির পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা আবুল বাশার বলেন, ‘যদি এখনই সংস্কার না করা হয়, তাহলে আমাদের গ্রামের সাড়ে ৫০০ বছরের পুরানো এই মসজিদটি আর টিকিয়ে রাখা যাবে না।’
স্থানীয় প্রবীণ শামসুল গাজি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি, এটি সংস্কার করা হবে। কিন্তু প্রতিবছর সামান্য কিছু কাজ করেই রেখে দেয়া হয়। ফলে এটি ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দেশ-বিদেশ থেকে বহু পর্যটক এখানে আসেন, তাই স্থায়ী সংস্কার জরুরি।’
খুলনা ও বরিশাল বিভাগের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক লাভলী ইয়াসমিন বলেন, ‘আমরা প্রতিবছর কিছু সংস্কার কাজ করি। তবে যদি বড় কোনো ক্ষতি হয়ে থাকে বা ঐতিহ্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাহলে দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হবে।’
আরও পড়ুন: মসজিদটির স্থাপত্যশৈলীর সৌন্দর্যে প্রাণ জুড়িয়ে যায়
পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফিন বলেন, ‘মসজিদটি আমাদের জন্য একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা এর সংস্কারের উদ্যোগ নেব।’
এলাকাবাসীর দাবি, দ্রুত সংস্কারের মাধ্যমে এ অঞ্চলের মুসলিম শাসনের ইতিহাস, মুসলমানদের অবদান ও ঐতিহাসিক এই নিদর্শনকে আগামী প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করা হোক। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি দ্রুত পদক্ষেপ নেয়, তাহলে হয়তো এই ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাবে।
]]>