মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে দেবীগঞ্জের সর্বস্তরের সচেতন নাগরিকের আয়োজনে উপজেলার বিজয় চত্বর এলাকায় দেবীগঞ্জ-ডোমার মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে ভুক্তভোগী সাংবাদিক লালন সরকার, মামলার সাক্ষী সহ স্থানীয়রা বক্তব্য রাখেন।
বক্তারা বলেন, দেবীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নুরুজ্জামান আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বিক্রির অভিযোগের ভিত্তিতে সাংবাদিক লালন সরকার একটি সংবাদ প্রকাশ করেন। এরই জেরে ওই ইউপি সদস্য ২ লাখ টাকা চাঁদাবাজির একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। এদিকে মানববন্ধনে স্থানীয়রা ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম সহ হয়রানির অভিযোগ তুলে বিচার দাবি করেছেন। একই সাথে সাংবাদিক লালন সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয় মানববন্ধনে।
মানববন্ধনে ভুক্তভোগী সাংবাদিক লালন সরকার আজকের বসুন্ধরা পত্রিকায় উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত আছেন। গত ৮ এপ্রিল পঞ্চগড় আদালতে হওয়া দুইটি মামলায় প্রধান আসামি করা হয় লালনকে। মামলার অপর দুই আসামি শাকিল ইসলাম ও হালিম।
এর মধ্যে দেবীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য নুরজ্জামান মামলার বিবরণে উল্লেখ করেন, সম্প্রতি সাংবাদিক লালন ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে উপচৌকি ভাজনী আশ্রয়ণের ঘর ও জমি বিক্রির অভিযোগে সংবাদ প্রকাশ করেন। ইউপি সদস্যের অভিযোগ সংবাদ না করার শর্তে চাঁদা দাবি করা হয়। মামলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের আরেক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে হালিম নামে একজনের বিরুদ্ধে গত ২৯ মার্চ মামলা হয় দেবীগঞ্জ থানায়। আশ্রয়ণের অপর বাদী তার মামলায় উল্লেখ করেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের হালিমের বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে দেবীগঞ্জ থানায় মামলা দায়েরের পর সাংবাদিক লালন অভিযুক্তের এবং ভুক্তভোগীর একটি সাক্ষাৎকার ফেসবুকে পোস্ট করেন। যেখানে এই নারী দাবি করেন তার নাম পরিচয় প্রকাশ করে পরিকল্পিত ভাবে তার সম্মানহানি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: সাংবাদিকের ফোন কেড়ে নিয়ে ভিডিও ডিলেটের অভিযোগ এসপির বিরুদ্ধে
এদিকে মঙ্গলবার আশ্রয়ণের প্রায় দেড় শতাধিক নারী-পুরুষ মামলা দুইটি প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন। এসময় মানববন্ধনে সাংবাদিক লালন জানান, একই নারীর ভিডিও একাধিক ব্যক্তি ফেসবুকে পোস্ট করলেও মামলা হয়েছে শুধু আমার বিরুদ্ধে। আর ইউপি সদস্যের যে ঘটনার প্রেক্ষিতে চাঁদাবাজির যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা প্রায় দুই মাস পূর্বের ঘটনা। এতদিন পরে মামলা করা হলো। এতেই বুঝা যায় মামলা দুইটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে করা হয়েছে। ইউপি সদস্য ওই নারীকে মামলা করতে প্ররোচিত করেছেন বলেও দাবি করেন তারা।
মামলার অপর আসামি শাকিল ইসলাম বলেন, মেম্বারের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে এলাকার সরব থাকি বলে আমাকে দুই মামলায় আসামি করা হয়েছে। মানববন্ধনে ইউসুফ আলী নামে এক ব্যক্তি যাকে ওই নারীর দায়েরকৃত মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে। তিনি বলেন, ঘটনার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তাকে যে সাক্ষী করা হয়েছে। সে সম্পর্কে আমি অবগত না।
ইউপি সদস্যের মামলার সাক্ষী হেলাল বলেন, ঘটনার কিছু আমার জানা নেই। মামলার বিষয়টি শোনার পর এই বিষয়ে আমি মেম্বারকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে কেন আমাকে সাক্ষী করা হলো। উভয় মামলার প্রথম সাক্ষী কদম জানান, উভয় ঘটনার ব্যাপারে কিছু জানি না। মামলা হওয়ার পারি সাক্ষী করা হয়েছে।
এই বিষয়ে ইউপি সদস্য নুরুজ্জামান বলেন, লালন আমার কাছে চাঁদা চেয়েছে। এদিকে মানববন্ধনে যারা বক্তব্য দিয়েছেন তারা আসামির বাবা, মা, ভাই। মামলার সাক্ষী বাদীর বিপক্ষে বক্তব্য দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি (ইউসুফ) সবার আগে ফেসবুকে লালনের ভিডিও আমাকে দেখিয়েছিলেন। সেজন্য তাকে সাক্ষী করেছি। তবে সাক্ষী হিসেবে নাম দেয়ার আগে তাকে বলিনি।