সংকীর্ণ সড়কে অনিয়ন্ত্রিত যান: নড়াইল-যশোর রুটে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল

৪ সপ্তাহ আগে
নড়াইল-যশোর মহাসড়ক এখন যেন এক ভয়ংকর মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল, আর যারা প্রাণে বেঁচে যাচ্ছেন, তাদের অনেককেই পঙ্গুত্ব বরণ করতে হচ্ছে। গত আড়াই বছরে এই সড়কে প্রাণ গেছে ৪২ জনের, আহত হয়েছেন আরও ১৪২ জন। সড়কটি সংকীর্ণ, যানবাহনের গতি অনিয়ন্ত্রিত, আর অযান্ত্রিক যানবাহনের দৌরাত্ম্যে নিয়মিতই ঘটছে দুর্ঘটনা-এমন অভিযোগ উঠেছে সড়ক ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে। তবে হাইওয়ে পুলিশের নিয়মিত অভিযান আর সড়ক ও জনপথ বিভাগের দীর্ঘমেয়াদি সড়ক প্রশস্তকরণের আশ্বাসে এখনো ঝুলে আছে এই জনপদের মানুষের ভাগ্য।

২০২২ সালে পদ্মা-মধুমতী সেতু চালুর পর থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্তত ১০ জেলার ছোট-বড় পণ্যবাহী গাড়ি ও দূরপাল্লার পরিবহন যাতায়াতের প্রধান পথ হিসাবে ব্যবহার করছেন নড়াইল-যশোর মহাসড়ক। দিনে গড়ে প্রায় ৩ হাজার গাড়ি মধুমতী সেতু পার হচ্ছে এই সড়ক ব্যবহার করে। আর অযান্ত্রিক যান সহ শহরমুখী ছোট-বড় গাড়ির সংখ্যা দিনে গড়ে প্রায় ১০ হাজার।

 

মহাসড়কটিতে অনিয়ন্ত্রিত গতি, বেপরোয়া অটো, ভ্যান, নসিমন, করিমন, ভটভটি চলাচলে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। একদিকে যেমন বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল, অন্যদিকে হতাহতদের মধ্যে পঙ্গুত্ব, পরিবারগুলোকে নিঃস্ব হওয়ার মতো পরিস্থিতিতে ফেলে দিচ্ছে এই সড়ক।

 

আরও পড়ুন: সাইকেল চালিয়ে বাজারে যাচ্ছিলেন, ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ গেল আবুল কালামের

 

নড়াইল-যশোর মহাসড়কে আর্তনাদ যেন নিত্যদিনের দৃশ্য। গত ১৫ সেপ্টেম্বর মানিকগঞ্জ থেকে সাক্ষী দিয়ে ফিরছিলেন নড়াইলে কর্মরত পুলিশের উপপরিদর্শক নিক্কন আঢ্য। যশোর-নড়াইল মহাসড়কের ভাঙুড়া বাজার এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা বাঁশ বোঝাই ট্রাকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধাক্কা দেয় যাত্রীবাহী বাস। এ ঘটনায় ওইদিন পুলিশ কর্মকর্তা নিক্কনসহ আরও দু’জন নিহত হন।

 

চলতি মাসের ১০ অক্টোবর একই সড়কে বাস ও ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষে নারী ও শিশু সহ অন্তত ১৫ জন আহত হন। এই দুর্ঘটনায় ট্রাকচালক এনামুল ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে অঙ্গ হারানোর শঙ্কা নিয়ে।

 

হাইওয়ে পুলিশের তথ্য বলছে, ২০২৩ সাল থেকে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত এই মহাসড়কে প্রাণ হারিয়েছেন ৪২ জন আর হতাহত হয়েছেন ১৪২ জন। ২০২৩ সালে ২৪ টি দুর্ঘটনায় নিহত ১১ জন, আহত ৩০ জন। ২০২৪ সালে ২৫টি দুর্ঘটনায় নিহত ১৯ জন, আহত ৩৯ জন। আর চলতি বছরের সাড়ে ১০ মাসে দুর্ঘটনা ঘটেছে ২৫টি, এতে নিহত ১২ জন আর আহত হয়েছেন ৭২ জন।

 

সংকীর্ণ মহাসড়কটির বেহাল দশা, অনিয়ন্ত্রিত গতি ও অযান্ত্রিক যান চলাচলের দৌরাত্ম্য প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে দায়ী বলে মনে করছেন সড়ক ব্যবহারকারী চালক ও যাত্রী সাধারণ। সচেতন নাগরিক মহল মনে করেন, মহাসড়ক প্রশস্ত করা ছাড়াও অযান্ত্রিক যান চলাচল বন্ধে কর্তৃপক্ষকে কঠোর ভূমিকা রাখতে হবে।

 

তুলারামপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ সেকেন্দার আলী বলেন, নড়াইল-যশোর মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বর্তমানে অত্যধিক। সংকীর্ণ এই মহাসড়কে নিয়ন্ত্রিত গতিতে যানচলাচল ও অযান্ত্রিক যানবাহন নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। দুর্ঘটনা রোধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি চালক ও যাত্রীদের আইন মেনে চলার বিষয়ে সচেতন করতে প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে। নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবেই আমরা সচেতনতা কার্যক্রম চালাচ্ছি, যাতে সড়কে শৃঙ্খলা বজায় থাকে এবং দুর্ঘটনা কমে। তবে সকল ধরনের গাড়ির মালিকদের প্রতি আহ্বান, তারা যেন বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স যাচাই-বাছাই করে তবেই গাড়ি হস্তান্তর করেন।’

 

আরও পড়ুন: সড়কে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল, লক্কর-ঝক্কর যানবাহন ঠেকাতে কতটা কার্যকর বিআরটিএ?

 

নড়াইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কটি এক্সপ্রেসওয়েতে উন্নীত করার জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছিল। তবে নানা প্রশাসনিক ও প্রকৌশলগত জটিলতার কারণে সেটি আপাতত সম্ভব হচ্ছে না। তবুও মহাসড়কটির গুরুত্ব বিবেচনায় আমরা সড়ক আরও প্রশস্ত করার প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। আশাকরি আগামী দুই বছরের মধ্যে এই সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ করতে পারব।’

 

তথ্য অনুযায়ী, নড়াইল-যশোর মহাসড়কের মোট দৈর্ঘ্য ৫৫ কিলোমিটার, যা ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে মহাসড়ক হিসেবে উন্নীত করা হয়। এর মধ্যে নড়াইল অংশের ৩০ কিলোমিটার সড়কটি মূলত ১৮ ফুট চওড়া ছিল। ২০২৩ সালে নড়াইল সড়ক বিভাগ ৪৩.৫ কোটি টাকার ব্যয়ে সড়কটির দুই পাশে ৬ ফুট করে প্রশস্তকরণ করে মোট ২৪ ফুট চওড়া করেছে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন