সাহাবিরাও এমন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, সাহাবিদের একটি দল রসুলুল্লাহ (স.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলো, আমরা আমাদের অন্তরে কখনো কখনো এমন বিষয় অনুভব করি, যা মুখ দিয়ে উচ্চারণ করা আমাদের কাছে খুব কঠিন মনে হয়। রসুলুল্লাহ (স.) বললেন, সত্যিই কি তোমরা এ রকম পেয়ে থাক? তারা বললেন, হ্যাঁ; আমরা এ রকম অনুভব করি। রসুলুল্লাহ (স.) বললেন, এটি তোমাদের ঈমানের স্পষ্ট প্রমাণ।
শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) তার কিতাবুল ঈমানে বলেছেন, মুমিন ব্যক্তি শয়তানের প্ররোচনায় কখনো কুফরির মতো কুমন্ত্রণায় পতিত হয়। এতে তাদের অন্তর সংকুচিত হয়ে যায়। মুমিন ব্যক্তির এমন কুমন্ত্রণাকে অপছন্দ করা সত্ত্বেও তার মনে এর উদয় হওয়া এবং তা প্রতিহত করতে প্রাণপণ চেষ্টা করা তার ঈমানদার হওয়ার প্রমাণ বহন করে।
আরও পড়ুন: ভাইরাসজনিত রোগ থেকে বাঁচার দোয়া
বস্তুত কোনো মানুষ যখন বুঝবে শয়তানের কুমন্ত্রণা প্রসঙ্গে, তখন তার উচিত কুমন্ত্রণার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া। সেই সঙ্গে মনে রাখা, এমন কুমন্ত্রণায় কোনো গোনাহ হয় না। এ প্রসঙ্গে নবী করিম (স.) বলেছেন, ‘(শয়তানের কুমন্ত্রণা) আমলে পরিণত করা অথবা মুখে উচ্চারণ না করা পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা আমার উম্মতের মনের কুমন্ত্রণা বা ওয়াসওয়াসাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।’
যদি প্রশ্ন করা হয়, শয়তান কুমন্ত্রণা কি আপনি বিশ্বাস করেন? সেটাকে আপনি সত্য মনে করেন? উত্তরে আপনি অবশ্যই বলবেন, এ সব কুমন্ত্রণাকে আপনি মনেপ্রাণে ঘৃণা করেন। এগুলো শয়তানের ফাঁদ। মানুষকে পাপে লিপ্ত করার জন্যই সে এমন ফাঁদ পেতেছে। মানুষকে গোমরাহ করার জন্য শয়তান তাদের শিরা-উপশিরায় চলাচল করে থাকে।
সামান্য কোনো বিষয় কিংবা জিনিসের ক্ষেত্রে কিন্তু শয়তান মানুষের মনে কুমন্ত্রণা দেয় না। দুনিয়ার বিষয়েও শয়তান থাকে নির্লিপ্ত। কারণ, এতে শয়তানের কোনো লাভ নেই। কিন্তু মানুষের ঈমানকে বরবাদ করে দেয়ার মাঝে শয়তানের বিরাট স্বার্থ রয়েছে।
আরও পড়ুন: নামাজ শুরু করেই নবীজি যে দোয়া পড়তেন
নবী করিম (স.) শয়তানের ওয়াস্ওয়াসা থেকে বাঁচার পন্থাও আমাদের জন্য বর্ণনা করেছেন। প্রথমত, এসব ধারণা থেকে বিরত থাকা এবং শয়তানের ধোঁকা থেকে বাঁচতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা।
যখন কোনো মুমিন শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় ইবাদতে মশগুল হয় তখন তার অন্তর থেকে কুমন্ত্রণা চলে যায়। সুতরাং মানুষের অন্তরে শয়তানের কুমন্ত্রণা জাতীয় যা কিছু উদয় হলে, তা থেকে নির্লিপ্ত থাকতে হবে। সর্বাবস্থায় মনে রাখতে হবে, এসবের কোনো অস্তিত্ব নেই; বরং তা ভিত্তিহীন মনের কল্পনা মাত্র।
শয়তান থেকে বাঁচার দোয়া
শয়তানের যেকোনো মন্দ প্ররোচনা নিজেকে রক্ষা করতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে। তিনিই আমাদের পরম রক্ষাকর্তা। এ কারণে পড়তে হবে, ‘আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতুয়ানির রাজিম; মিনহামজিহি ওয়া নাফখিহি ওয়া নাফছিহি।’ অর্থাৎ, আমি আল্লাহর কাছে বিতাড়িত শয়তানের প্ররোচনা ও ফুৎকার থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
বাড়িতে নফল নামাজ পড়া মোস্তাহাব। তবে মসজিদেও পড়া জায়েজ। বাড়িতে প্রবেশ করার সময় দোয়া পড়লে এবং সন্ধ্যায় আয়াতুল কুরসি পড়লে বাড়ি মন্দ প্রভাব থেকে সুরক্ষিত থাকে। ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ পড়ে মূল্যবান মালামাল সিন্দুক বা সংরক্ষিত করে তার মুখ বন্ধ করা ভালো।
]]>