বৃহস্পতিবার (১ মে) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলার দিগনগর ইউনিয়নের সিদ্ধি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরে প্রশাসন ও স্থানীয় বিএনপি নেতাদের হস্তক্ষেপে ১২ ঘণ্টা পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়৷
গ্রামের বাসিন্দারা জানায়, বৃহস্পতিবার ভোরে সিদ্ধি গ্রামের মৃত মুনতাজ শেখের ছেলে বশির উদ্দিন (৫৪) নামের এক গরু ব্যবসায়ী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। পরে বাদ জোহর, আসর ও মাগরিবের পরে তিন দফা জানাজা নামাজের প্রস্তুতি নেয় তার পরিবার। তবে পাওনাদারেরা এসে জানাজায় বাধা দেন। ঘটনা জানাজানি হলে চাঞ্চল্যকর সৃষ্টি হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মৃত বশির উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে গরুর ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে বাকিতে গরু কিনে হাটবাজারে বিক্রি করতেন তিনি। সম্প্রতি তার ব্যবসার অবনতি ঘটে। বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে ঋণ নিয়ে তিনি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন।
বৃহস্পতিবার তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে পাওনাদাররা মৃত বশির উদ্দিনের বাড়ি এসে উপস্থিত হন। এসময় পাওনাদাররা মৃত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে ঋণ পরিশোধের প্রতিশ্রুতি না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এক পর্যায়ে একাধিক পাওনাদার একজোট হয়ে মৃত বশির উদ্দিনের জানাজার নামাজ ও দাফন আটকে দেন।
পরে এ বিষয়ে মৃত বশির উদ্দিনের পরিবারের লোকজন ও পাওনাদারদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেন স্থানীয় গণ্যমান্য ও রাজনৈতিক নেতারা। পরে সন্ধ্যার দিকে পাওনাদাররা সমঝোতা মেনে নিলে মৃত বশির উদ্দিনের জানাজা ও দাফন সম্পন্ন করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শৈলকূপা উপজেলা বিএনপির অর্থ বিষয়ক সম্পাদক ও স্থানীয় বাসিন্দা ওহিদুজ্জামান বলেন, 'খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে মৃত বশির উদ্দিনের মরদেহের দাফন করা হয়েছে। এই ধরণের ঘটনা লজ্জাজনক ও অমানবিক। পাওনাদার ও মৃত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের দায়িত্বশীলতার অভাবে আজ এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে।'
আরও পড়ুন: জমি দখলে বাধা দেয়ায় কলেজছাত্রীসহ ৬ জনকে কুপিয়ে জখম
এ ব্যাপারে কয়েকজন পাওনাদার জানান, গরু ব্যবসায়ী বশির বাকি টাকায় গৃহস্থের কাছ থেকে গরু কিনতেন। টাকা পরে দেবেন বলে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে টাকা দিতেন না। হঠাৎ করে তিনি মারা গেছেন। তার মৃত্যুর খবর শুনেই পাওনাদাররা বাড়িতে এসে অবস্থান নেন। রাজনৈতিক লোকজন চাপ প্রয়োগ করে পাওনাদারদের সমঝোতা করতে রাজি করিয়েছেন বলেও কয়েকজন অভিযোগ করেছেন।
বশির উদ্দিনের ছেলে বাঁধন ইসলাম বলেন, 'আমার বাবার ব্যবসা কিছুদিন খারাপ যাচ্ছিল। তিনি বেশ কিছু মানুষের কাছে ঋণগ্রস্ত হয়ে যান। তবে আমার বাবার কাছে কে কত টাকা পাবে তার কিছুই জানিনা। এখন অনেকেই এসে মোটা টাকা দাবি করছেন। পাওনাদারদের অনেককে কখনো আমাদের বাড়িতে আসতে দেখিনি। এমনকি বাবা জীবিত থাকতেও তাদের কখনো বাবার কাছে আসতে দেখিনি।'
শৈলকূপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুম খান বলেন, 'পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। এলাকাবাসী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সহযোগিতায় আলোচনার মাধ্যমে মরদেহটির দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।'