জানা যায়, একটি প্রকল্পের আওতায় ২০০০ সালে শেরপুরের নকলার ইসলাম নগর সাইলামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ পান সালমা আক্তার নামে এক নারী। তবে চুক্তি শেষ হবার আগেই যাদুর কাঠির স্পর্শে স্থায়ী নিয়োগ পান তিনি। ১৬ বছরের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির আশীর্বাদে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদও বাগিয়ে নেন সালমা। তবে ২০১৮ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অডিট টিম সালমার নিয়োগের বৈধতায় আপত্তি তুলে বেতন-ভাতা সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার সুপারিশ করেন।
৬ বছর পর গেল বছরের জুলাই মাসে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অডিট টিমের আপত্তির মনগড়া জবাব দিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে।
এ দিকে ইসলাম নগর সাইলামপুর উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে সালমাকে সাময়িক বরখাস্ত করে সেলিম আহমেদ নামে এক শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেন। পরবর্তীতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রুবেল আহমেদের স্বাক্ষরে চলতে থাকে বিদ্যালয়ের নিত্যদিনের কাজ।
প্রায় দুই মাস পর নতুন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের নিয়োগের বৈধতা নিয়ে আপত্তি তুলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেন বরখাস্ত হওয়া প্রধান শিক্ষক সালমা আক্তার। আবেদনের প্রেক্ষিতে পরবর্তী মাস থেকে বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন-ভাতা।
আরও পড়ুন: কুকিচিনের তাণ্ডবে নেই পর্যটক, জীবন-জীবিকা নিয়ে দিশেহারা পাহাড়িরা
এ বিষয়ে নকলা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সেলিম আহমেদের নিয়োগ এবং সালমা আক্তারের বহিষ্কারের আদেশ অবৈধ বিবেচনা করে প্রতিবেদন দেন। প্রতিবেদনটি প্রত্যাখ্যান করেন বিদ্যালয়ের সাবেক ম্যানেজিং কমিটি। পরবর্তীতে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে আবারও এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাও উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তার কথায় প্রতিবেদন জমা দেন।
ওই প্রতিবেদনটিও প্রত্যাখ্যান করে জেলা প্রশাসকের কাছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে তদন্তের আবেদন করেন সাবেক ম্যানেজিং কমিটির সদস্য খোকসন মণ্ডল। দুই শিক্ষকের এমন জটিলতায় বন্ধ হয়ে যায় ইসলাম নগর সাইলামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সব শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা। দ্বন্দ্বে জড়ানো শিক্ষকদের জটিলতা নিরসন না হওয়ায় অন্যদের বেতন-ভাতা বন্ধ থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন প্রায় দুই ডজন শিক্ষক-কর্মচারী।
এ বিষয়ে সাবেক ম্যানেজিং কমিটির সদস্য খোকন মণ্ডল বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের স্বামী নুরল হক। তারা স্বামী-স্ত্রী মিলে আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে নিয়োগ বাণিজ্যসহ করেছেন নানা রকমের দুর্নীতি। সেই নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িত ছিলেন তৎকালীন শিক্ষা কর্মকর্তাও। তাই তাদের দিয়ে তদন্ত করলে সত্য প্রতিষ্ঠা হবে না বলেই আমি পুনঃতদন্তের দাবি করেছি।
আরও পড়ুন: শীতে খোলা আকাশের নিচে ছিন্নমূল মানুষের মানবেতর জীবন
প্রতিষ্ঠানের সাবেক সভাপতি মো. আজিজুল হক বলেন, স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর সরকার কমিটির দায়িত্ব ইউএনওকে দিয়েছেন। কিন্তু ইউএনও সালমা আক্তারকে বহাল করার অপচেষ্টা করছেন। সেই সঙ্গে ১৭ জন শিক্ষক ও চার কর্মচারীর বেতন-ভাতা আটকে রেখেছেন। আমি এখন সভাপতি নাই, তাই কিছু বলতে পারছি না। তাদের কষ্টে দেখে আমার কষ্ট হচ্ছে। আমার দাবি এই স্বৈরাচারীর দোষর সালমাকে বহিষ্কার করা হোক এবং বেতন-ভাতা ছাড় দিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের মানবেতর জীবন থেকে মুক্তি দেয়া হোক।
এ ব্যাপারে নকলা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুর রশিদ বলেন, এই ব্যাপারে আমাকে কেউ লিখিত অভিযোগ দেননি। তবে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দেয়া তদন্তের নির্দেশনা অনুযায়ী তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে তদন্ত প্রতিবেদন পাল্টে দেয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন তিনি।
নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপ জন মিত্র বলেন, ‘এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পেয়েছি। এ ছাড়াও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) ও জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এ ব্যাপারে শেরপুর জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমানকে শিক্ষকদের মানবেতর জীবনযাপনের চিত্র তুলে ধরে সমাধানের ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউএনওর সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।