শীতে খোলা আকাশের নিচে ছিন্নমূল মানুষের মানবেতর জীবন

১ সপ্তাহে আগে
রাতের বেলা ব্যস্ততম চায়ের শহর সিলেটের মানুষ যখন ফিরে যায় আপন নীড়ে। তখন এই শহরের কিছু মানুষ বিছানা পাতে ফুটপাতে, গাছের নিচে বা বিভিন্ন মার্কেটের সামনে। কারণ তারা অসহায়, সম্বলহীন, ছিন্নমূল বা পথের বাসিন্দা।

শীত আসলে উষ্ণতার জন্য অনেকেই নতুন গরমের কাপড় কিনেন, ভারী কম্বল কিনেন, লেপ কিনেন। কারণ নিজেকে শীত থেকে বাঁচাতে হবে। 


অন্যদিকে সুবিধাবঞ্চিত ছিন্নমূল মানুষের খোলা আকাশের নিচে কুণ্ডলি পাঁকিয়ে রাস্তার পাশেই শুয়ে পড়েন। ঠান্ডা থেকে বাঁচতে অপেক্ষা করেন হয়তো কেউ একটা কম্বল বা গরমের কাপড় দিবে সেই আশায়।


ইতোমধ্যেই সারাদেশে জেঁকে বসেছে শীত। সিলেট টিলা ও পাহাড় বেষ্টিত থাকায় ঠান্ডা ও অন্য জেলা থেকে একটু বেশিই পড়ে। তাই নগরীতে থাকা সম্বলহীন মানুষের কষ্টের শেষ নেই।


সরেজমিনে নগরীর জিন্দাবাজারের বিভিন্ন মার্কেটের সামনে, চৌহাট্টার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের পাশের ফুটপাতে, দরগাহ, আম্বরখানা, শাহী ঈদগাহ, মানিকপীর টিলার সামনে, কুমারপাড়া বিভিন্ন মার্কেটের সামনে, বন্দরবাজার, ক্বীন ব্রিজ সংলগ্ন চাঁদনীঘাট, কাজিরবাজার, মেডিকেল রোড, মদিনা মার্কেট, রিকাবীবাজার, হুমায়ুন রশিদ চত্বর, কদমতলী বাস টার্মিনাল, রেলওয়ে স্টেশনসহ বিভিন্ন এলাকায় ভাসমান ছিন্নমুল মানুষ শীত বিলাস করেন নিস্তব্ধ খোলা আকাশের নিচে।


পর্যটন নগরী সিলেটে শীত আসলে অনেকেই ঘুরতে আসেন বিভিন্ন পর্যটন স্পটে। বার্ষিক পরীক্ষা শেষ তাই বেশির ভাগ শিক্ষার্থীদেরও ছুটি। শীতকালকে উপভোগ করতে কেউ বনভোজন করেন, কেউ কেউ পিঠা খেতে মামার বাড়িতে যান আবার কেউ নিজের বাড়িতেই খান মায়ের হাতে বানানো পিঠা। আবার কেউ কুঁয়াশার চাদরে মোড়া ভোরে খেজুরের রস খেয়ে শীত বিলাস করেন। কিন্তু সুবিধাবঞ্চিত ছিন্নমূল মানুষেরা শীতের পিঠা, খেজুরের রস তো দূরের কথা একটি কম্বলের আশায় বসে থাকেন। তারা শীত বিলাস করেন রাস্তার পাশে শুয়ে। শীত নিবারণের কাপড় কারো কাছে থাকে, তো কারো কাছে নেই। ফুটপাতেই ঘুমিয়ে পড়ে, নেই উষ্ণতা ছড়ানো ভারী কম্বল কিংবা নরম বিছানা। শীতে কাঁপে শরীর, তাও মানিয়ে নেয়। অপেক্ষা করে কেউ যদি একটা গরম কাপড় বা কম্বল উপহার দেয়!


আরও পড়ুন: দরিদ্র ও শীতার্ত মানুষের পাশে সেনা পরিবার কল্যাণ সমিতি


তরুণ ছাত্রনেতা মাহফুজুর রহমান রাসেল সময় সংবাদকে বলেন, এসব সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে আমাদের দাঁড়ানো উচিত। সরকার যদি এদের তালিকা করে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় ছাদ তৈরি করে দিয়ে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে পারে তাহলে সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠন তাদের এক জায়গায় পাবে ও সহযোগিতা করতে চাইলে এক জায়গায় গেলেই সহজ হবে। শীতকালে এদের খুব কষ্ট হয় তাই তাদের জন্য সমাজের বিত্তশালীদের এগিয়ে আসা উচিত। আমিও কিছুদিনের মধ্যেই নগরীর ভাসমান মানুষের শীত নিবারণের জন্য কম্বল বিতরণ করবো।


সমাজসেবী জান্নাতুল রেশমা সময় সংবাদকে বলেন, আমরা প্রতিবছরেই অন্যান্য কার্যক্রমের পাশাপাশি শীতের সময় অসহায় মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করি। সামর্থ্যবান মানুষদের বেশি বেশি এগিয়ে আসা উচিত। এই ভাসমান মানুষদের শীতের কষ্ট লাঘব আমরা চাইলেই করতে পারি। তবে একটি চক্র আছে যারা লোভের বশবর্তী হয়ে অভিনয় করে নির্দিষ্ট কিছু পয়েন্টে শুয়ে থাকে। ৫০০/৮০০ টাকার কম্বল আমরা বিতরণ করি। তারা সেটা পরে ১০০/২০০ টাকায় বিক্রি করে দেয়। তাই প্রকৃত সুবিধাবঞ্চিত শীতার্ত মানুষ দেখে কম্বল তুলে দিতে হবে।


আরও পড়ুন: সীমান্তে অসহায়দের মাঝে কোস্টগার্ড প্রধানের শীতবস্ত্র বিতরণ


রোভার স্কাউটস সদস্য আলী হায়দার মিদুল সময় সংবাদকে বলেন, নগরীতে বিভিন্ন জায়গায় যখনই রাস্তার পাশে কাউকে শীতে কাঁপতে দেখি তখনই তাদের পাশে দাঁড়ানের চেষ্টা করি। প্রায়ই দেখি অনেকেই পথের পাশে থাকা ছিন্নমূলদের জন্য শীতবস্ত্র বিতরণ করেন। এই সংখ্যা কম। অনেকে আবার শুধু ছবি তোলার জন্য দান করেন। কিন্তু আমাদের ভাবতে হবে এইসব মানুষের তো স্থায়ী কোনো বসতি নেই যে তারা গরম কাপড় বা অন্যান্য কিছু সংরক্ষণ করবে। তাই প্রতিবছরই তাদের নতুন করে কম্বল সংগ্রহের চিন্তা থাকে। আমি দেখেছি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কিছু এনজিও বা সামাজিক সংগঠন এরকম হোমলেসদের পুরোপুরি পুনর্বাসন করে দেন, আমার বিশ্বাস আমাদের দেশেও এরকম সামর্থ্যবান মানুষ আছেন, শুধু অপেক্ষা উদ্যোগের। সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসলে তারা শীতে বেশি কষ্ট পাবে না। আমি বিশ্বাস করি একটি মাছ কিনে দেয়ার থেকে মাছ ধরা শেখানো হলে একজন মানুষ উপকৃত হবে।


হাড় কাঁপানো ঠান্ডায় কাবু সকল বয়সের মানুষ। আধ্যাত্মিক নগরী সিলেটেও শীত জেঁকে বসেছে। ভাসমান সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের পাশাপাশি এগিয়ে আসা উচিত সকল স্তরের মানুষের। সামর্থ্যবান ও বিত্তশালীরা চাইলেই হাসি ফোটাতে পারেন অসহায় সম্বলহীন মানুষদের। শীতে উষ্ণতা ছড়িয়ে দিতে গভীর রাতে বের হয়ে রাস্তায় যারা শুয়ে থাকে তাদের হাতে একটি কম্বল অথবা গরমের কাপড়ই যথেষ্ট।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন