শীতকালীন সবজির স্বস্তি চাল মাছের বাজারে ম্লান

২ সপ্তাহ আগে
সরবরাহ বাড়ায় বাজারে কমছে শীতকালীন শাক-সবজির দাম। এতে জনমনে স্বস্তি ফিরলেও চাল ও মাছের বাজারের ঊর্ধ্বমুখী দামে হতাশ সাধারণ ভোক্তারা।

শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) কেরানীগঞ্জের আগানগর এবং রাজধানীর নয়াবাজার ও কারওয়ান বাজারসহ বেশকটি বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।

 

শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজারগুলোতে বাড়ছে শীতকালীন শাক-সবজির সরবরাহ। দোকানিরাও এর পসরা সাজিয়ে বসছেন। এতে দাম কমতে শুরু করেছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

 

আরও পড়ুন: বালাইনাশক আমদানিতে একক উৎসের গ্যাঁড়াকলে ব্যবসায়ীরা

 

কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা আনিস বলেন, সরবরাহ বাড়ায় সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিতে ৫-১০ টাকা পর্যন্ত কমেছে কোনো কোনো শাক-সবজির দাম। সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে দাম আরও কমবে।

 

বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন ৫০-৬০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৫০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, মুলা ২০-৩০ টাকা, লতি ৬০ টাকা, কহি ৫০ টাকা ও পটোল ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি পেঁপে ৩০-৪০ টাকা, গাজর ৪০-৫০ টাকা, ক্ষিরাই ৫০ টাকা, টমেটো ১২০-১৩০ টাকা, শিম ৪০-৫০ টাকা, শালগম ২৫-৩০ টাকা ও শসা বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকায়।

 

সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিতে ৫-১০ টাকা পর্যন্ত কমেছে শাক-সবজির দাম। ছবি: বিশ্বজিৎ দাস বিজয়

 

এছাড়া, প্রতি কেজি ধনেপাতা ৩০ টাকা, পেঁয়াজের কালি ৩০-৪০ টাকা, নতুন আলু ৫০ টাকা ও পুরাতন আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। আর মানভেদে প্রতি পিস ফুলকপি ৪০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০-৫০ টাকা এবং লাউয়ের জন্য গুনতে হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা।  

 

দাম কমেছে কাঁচা মরিচেরও। খুচরা পর্যায়ে এটি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০-৮০ টাকায়, আর পাইকারিতে ৪০-৬০ টাকা। এছাড়া, বাজারে লালশাকের আঁটি ১০ টাকা, পাটশাক ১০-১৫ টাকা, পুঁইশাক ৩০ টাকা, লাউশাক ৪০ টাকা, মুলাশাক ১০ টাকা, ডাঁটাশাক ১০-১৫ টাকা, কলমিশাক ১০ টাকা ও পালংশাক বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকায়।

 

সবজির দাম কমতে শুরু করায় কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে ভোক্তাদের মধ্যে। তারা জানান, শাক-সবজির দাম কমতে শুরু করেছে। তবে শীতকাল অনুযায়ী এখনও দাম অনেক বেশি। ফাহাদ নামে এক ক্রেতা জানান, বাজার শীতকালীন সবজিতে ভরপুর। এতে দাম কমছে। তবে আরও কমা উচিত। না হলে বাজারে পুরোপুরি স্বস্তি আসবে না।

 

আরও পড়ুন: ফের চালের বাজার উত্তপ্ত, খেটে খাওয়ারা বিপাকে!

 

এদিকে, ভরা মৌসুমেও বাড়ছে চালের বাজারে অস্থিরতা। সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ২-৩ টাকা পর্যন্ত। এটিও চিন্তার ভাঁজ ফেলছে ভোক্তার কপালে। নাইমুর রহমান নামে এক ক্রেতা বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলায় আমন ধান ওঠেছে। বাজার এখন চালে ভরপুর; দাম বাড়ার কোনও কারণ নেই। এটি ব্যবসায়ীদের বাজার লুটের কৌশল। বাজারের পাশাপাশি মিলগুলোতেও নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করলে দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে।

 

জিল্লুর নামে আরেক ক্রেতা বলেন, বাজারে এমনিতেই সব জিনিসের দাম বেশি। এর মধ্যে নতুন করে বাড়ছে চালের দাম। সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়! বাজার নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর হতে হবে। না হলে সংসার চালানো দুরূহ হয়ে পড়বে।

 

লাগামহীন দেশের চালের বাজার। ছবি: বিশ্বজিৎ দাস বিজয়

 

খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে মিল পর্যায়ে চালের দাম বাড়তি। এর প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারেও। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের বরিশাল রাইছ এজেন্সির বিক্রেতা জানান, চালের দাম অনেক বেড়ে গেছে। গত দুই সপ্তাহে চিকন চালের দাম কেজিতে ৪ থেকে ৮ টাকা এবং মোটা ও মাঝারি চালের দাম ২ থেকে ৩ টাকা বেড়েছে।

 

আর কেরানীগঞ্জের আগানগর বাজারের চাল বিক্রেতা জোবায়ের বলেন, মিলারদের কারসাজিতে বাড়ছে চালের দাম। বাড়তি দামের প্রভাবে মানুষ চাল কম কিনছেন। ফলে কমেছে চালের বেচাকেনাও।

 

বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি মিনিকেট ৭৪-৭৮ টাকা, আটাইশ ৬০-৬২ টাকা, মোটা স্বর্ণা ৫২-৫৬ টাকা, নাজিরশাইল ৭৬-৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, প্রতি কেজি পোলাও চাল বিক্রি হচ্ছে ১২০-১২৫ টাকায়।

 

স্বস্তির খবর নেই মাছের বাজারেও। মাছ বিক্রি হচ্ছে আগের বাড়তি দামেই। বাজারে প্রতি কেজি রুই ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, কাতল ৪০০ থেকে ৪৮০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০ টাকা, চাষের মাগুর ৫০০ টাকা, চাষের কৈ ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা, কোরাল ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, টেংরা ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০ থেকে ২৩০ টাকা ও তেলাপিয়া ১৮০ থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

 

মাছের বাজারে নেই স্বস্তির খবর; বিক্রি হচ্ছে আগের চড়া দামেই। ছবি: বিশ্বজিৎ দাস বিজয়

 

এছাড়া, প্রতি কেজি বোয়াল ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, পোয়া ৪৫০ টাকা, পাবদা ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, আইড় ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা, দেশি কৈ ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা, শিং ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, শোল ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা এবং নদীর পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়।

 

অস্থির দেশের ইলিশের বাজারও। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সুস্বাদু এ রুপালি মাছ। সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিতে ২০০-৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২২৫০ টাকায়। এছাড়া দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ৩২০০ টাকা, ৮০০-০০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ২০০০ টাকা হারে, আর ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৪০০ টাকা ও ৩০০-৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের জন্য গুনতে হচ্ছে ৮০০-১০০০ টাকা পর্যন্ত।

 

আরও পড়ুন: মুরগির বাজারে ফের অস্থিরতা, নেপথ্যে কী?

 

বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত মাছ না আসায় দাম বাড়ছে। ইলিশের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতায় বাইরে চলে যাচ্ছে। রাজধানীর কারওয়ানবাজারের ইলিশ বিক্রেতা মো. শুকুর আলী বলেন, ইলিশ কম ধরা পড়ছে। এতে বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বাড়ছে। দিন দিন ইলিশের দাম ভোক্তার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। এতে কমছে বিক্রিও।

 

নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েরই। ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না। এতে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পান।

 

আর বিক্রেতারা বলছেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছেন। বাজারে নিয়মিত অভিযান চালালে অসাধুদের দৌরাত্ম্য কমবে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন