শিশুর সুন্দর নাম রাখার গুরুত্ব

৪ সপ্তাহ আগে
নাম একটি মানুষের পরিচয়ের অন্যতম মাধ্যম। প্রত্যেক অভিভাবকের দায়িত্ব হলো তার সন্তানের জন্য একটি সুন্দর, অর্থবোধক এবং প্রভাবশালী নাম রাখা। একটি সুন্দর নাম শুধু পরিচয়ের জন্য নয়, বরং এটি শিশুর মানসিকতা, চরিত্র এবং জীবনের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

ইসলামে নাম রাখার গুরুত্ব সম্পর্কে অসংখ্য হাদীস পাওয়া যায়, যা থেকে আমরা শিখি যে নামের অর্থ, প্রভাব এবং গুরুত্ব সবকিছুই বিবেচনা করা উচিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে বিশেষ যত্নবান ছিলেন এবং খারাপ বা অসুন্দর নাম পরিবর্তন করে সুন্দর নাম রাখার নজিরও রেখে গেছেন।

 

আরও পড়ুন: পৃথিবীর সব চাইতে পরিচ্ছন্ন ৫ মুসলিম দেশ


ইসলামে সুন্দর নাম রাখার গুরুত্ব


রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন মানুষকে তাদের এবং তাদের পিতার নাম নিয়ে ডাকা হবে। তাই, প্রত্যেক মুসলমানের উচিত তার জন্য এবং তার সন্তানের জন্য সুন্দর নাম রাখা। (আবু দাউদ ৪৯৪৮) এ হাদিস থেকেই স্পষ্ট যে, নাম কেবল একটি পরিচয় নয়; এটি আখিরাতেও আমাদের পরিচিতি বহন করবে।

 

রসুল (সা.) কখনোই এমন নাম পছন্দ করতেন না, যার অর্থ নেতিবাচক বা নিন্দনীয়। হযরত ইবনে ওমর (রা.) হতে বর্ণিত একটি হাদীসে এসেছে, হযরত ওমর (রা.)-এর এক মেয়ের নাম ছিল ‘আছিয়া’, যার অর্থ অবাধ্য। রসুল (সা.) তার নাম পরিবর্তন করে ‘জামিলা’ (অর্থাৎ সুন্দর) রেখেছিলেন। (মুসলিম ২১৩৯)

 

অন্য একটি হাদিসে উল্লেখ আছে, হযরত সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিবের দাদা ‘হাযান’ (শক্ত জমিন) নাম ধারণ করতেন। নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এই নাম পরিবর্তন করে ‘সাহল’ (নরম জমিন) রাখতে বলেছিলেন। কিন্তু তিনি তা করতে অস্বীকৃতি জানান। সাঈদ (র.) বলেন, এর ফলস্বরূপ তাদের বংশে রুক্ষতা এবং কর্কশভাবের প্রভাব রয়ে যায়। (বুখারি ৫৮৬৪)


নাম রাখার ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি

 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নবীগণের নামে নাম রাখার উৎসাহ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় নাম হলো ‘আবদুল্লাহ’ এবং ‘আবদুর রহমান’। আর সবচেয়ে সত্য নাম হলো ‘হারেস’ (চাষি) এবং ‘হাম্মাম’ (উদ্যমী)। অন্যদিকে, ‘হারব’ (যুদ্ধ) এবং ‘মুররাহ’ (তিক্ততা) নামগুলোকে খারাপ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। (সুনানে আবু দাউদ ৪৯৫০)

 

অহংকার বা ঔদ্ধত্য প্রকাশ করে এমন নামও ইসলাম অপছন্দ করে। যেমন, ‘মালিকুল আমলাক’ (রাজাধিরাজ) নামের প্রতি নবীজী (সা.) গভীর আপত্তি করেছেন। কারণ, কিয়ামতের দিন এ ধরনের নাম আল্লাহ তাআলার কাছে সবচেয়ে অপছন্দনীয় হবে। (বুখারি ৬২০৫)


নামের অর্থ ও প্রভাব

 

নামের অর্থ মানুষের মানসিকতা ও স্বভাবে গভীর প্রভাব ফেলে। অর্থহীন বা নেতিবাচক অর্থবোধক নাম সন্তানের ব্যক্তিত্বের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই নাম রাখার সময় শুধু আনকমন বা আলাদা হওয়ার চেষ্টা না করে, এর অর্থ এবং ইসলামের নির্দেশনা অনুসারে নাম নির্বাচন করা উচিত।

 

আরও পড়ুন: নবীজির শেখানো সকালের সহজ ৫ জিকির

 

একটি সুন্দর নাম শুধু একটি পরিচিতি নয়; এটি শিশুর জীবনের পথপ্রদর্শক হতে পারে। ইসলাম আমাদের নামের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে শিখিয়েছে এবং সুন্দর ও অর্থবোধক নাম রাখার ওপর জোর দিয়েছে। তাই সন্তানের নাম রাখার ক্ষেত্রে অভিভাবকদের উচিত হাদীস ও ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করা। একটি সুন্দর নাম সন্তানের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং তাকে একটি অর্থবহ পরিচয় প্রদান করবে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন