কারণ গোপন কারাগারের পরিচালকরা মুক্ত ও বহাল তবিয়তে নিরাপত্তা বাহিনীতে নিযুক্ত আছেন। ব্যারিস্টার আরমানসহ আরও পাঁচজনের সঙ্গে কথা বলে বিবিসি। যারা প্রত্যেকেই অন্ধকার ঘরে চোখ বাঁধা অবস্থায় দিনের পর দিন আটক ছিলেন।
অনেকেরই দাবি, মারধর ও বৈদ্যুতিক শকের মতো নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তারা। অভিযোগ রয়েছে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সময় এই গোপন বন্দিশালাগুলোর মাধ্যমে রাজনীতি, মতাদর্শ ও স্বাধীন মত প্রকাশের বিরুদ্ধে নিপীড়ন চালানো হয়েছে।
ব্যস্ত বিমানবন্দরের পাশেই গোপন জেলে ৮ বছর বন্দি ছিলেন ব্যারিস্টার আরমান। সেইসব দিনের স্মৃতি আঁকড়ে ধরে একটি রহস্যময় জায়গার সন্ধান দেন। অবশেষে সেই রহস্যময় জায়গার সন্ধান পাওয়া গেল। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একদম কাছেই মিলেছে একটি গোপন কারাগার।
দেয়াল ভাঙতেই সামনে আসে ইট ও কংক্রিটে তৈরি একটি জানালাবিহীন ভবন। সেখানেই ছোট ছোট অন্ধকার কক্ষ, যেগুলো ছিল নির্যাতন ও নিঃসঙ্গ কারাবাসের ঘর।
আরও পড়ুন: বগুড়ায় ‘আয়নাঘর’, জঙ্গি নাটক সাজিয়ে দেয়া হতো ক্রসফায়ার!
বুধবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বিবিসি বলেছে, এই কারাগারের অবস্থান ছিল এমন জায়গায় যেটি রাজধানীর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মাত্র কিছু দূরে। যেখানে বিমান অবতরণের শব্দ ব্যারিস্টার আরমানের স্মৃতিতে গেঁথে ছিল। সেই শব্দই ছিল তার পথনির্দেশক। সেই ভবন এখনও আছে। তবে অনেক প্রমাণ মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে।
ব্যারিস্টার আরমানের ভাষ্য মতে, এটা যেন জীবন্ত কবর। বাইরের দুনিয়ার সাথে কোনো সংযোগই ছিল না। তিনি পুরো সময়টা ছিলেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব পরিচালিত এই গোপন কারাগারে। আগে ধারণা করা হতো তিনি ঢাকার গোয়েন্দা সংস্থার ‘আয়নাঘর’ নামক কোন স্থানে ছিলেন।
তদন্তকারীরা বলছেন, দেশে এমন গোপন কারাগারের সংখ্যা ৫০০ থেকে ৭০০-এরও বেশি হতে পারে, যা ছিল একটি পরিকল্পিত ও কাঠামোগত নিপীড়ন ব্যবস্থা। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, এই সব গুমের ঘটনাগুলো সরাসরি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনে হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন।
বিএনপি ঘনিষ্ঠ ছাত্রনেতা আতিকুর রহমান রাসেলও বন্দি ছিলেন এখানেই। বলেন, গাড়িতে উঠেই চোখ বেঁধে ফেলল, হাতকড়া পরিয়ে এক জায়গায় নিয়ে গেল। তারপর শুরু হলো প্রশ্ন আর মারধর।
আরও পড়ুন: সব বাহিনীতেই আয়নাঘরের সন্ধান পেল গুম কমিশন
২৩ বছর বয়সি আরেকজন ভুক্তভোগী রহমাতুল্লাহ জানান, ওই জায়গায় শোবার মতো জায়গাও ছিলো না। ড্রেনের ওপর ঘুমাতাম, পা ছড়িয়ে শোয়া যেতো না। ওটা কোনো মানুষের থাকার জায়গা না। অনেকে বলছেন, তাদের ওপর বৈদ্যুতিক শক, নির্যাতন, রাতভর জেরা চালানো হতো।
এসব গোপন কক্ষে নির্যাতন করার অভিযোগে এখন পর্যন্ত ১২২ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। তবে কাউকে এখনও গ্রেফতার করা হয়নি। আইনজীবী কাসেম বলেন, যারা ফ্যাসিবাদী সরকারের সহায়তা করেছে, তারা আজও দায়িত্বে আছে। বিচার না হলে এই অত্যাচার থামবে না।
বাংলাদেশে এখন গণতন্ত্রের পথে এগোনোর এই সুযোগে অতীতের নির্যাতনের বিচার করাই ভবিষ্যতের নিরাপত্তার চাবিকাঠি হতে পারে। আর তাই ভুক্তভোগীরা চান সঠিক বিচার।
]]>