বুধবার (২৬ মার্চ) মহান স্বাধীনতা দিবসের প্রথম প্রহরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্মৃতিসৌধে জেলা প্রশাসন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন শ্রদ্ধা নিবেদন করলেও পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক সেখানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেননি।
এর আগে গত ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসেও তিনি শহীদ মিনারে ফুল দেননি। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোছাইন পুষ্পস্তবক অর্পণ করলেও তিনি করেননি। টানা দুটি জাতীয় দিবসে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা হিসেবে পুষ্পস্তবক অর্পণ না করায় সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, কেন তিনি এমনটা করলেন?
আরও পড়ুন: যথাযোগ্য মর্যাদায় দুমকীতে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একাধিক রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা বলছেন, একজন প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা হয়ে জাতির গুরুত্বপূর্ণ দিবসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন না করা দুঃখজনক। এমনটা তিনি করতে পারেন না।
জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক ও সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি (সনাক) অ্যাডভোকেট আব্দুন নূর বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে তাকে রাষ্ট্রের আইন মানতে হবে। রাষ্ট্রের আচার অনুষ্ঠান আইন তাকে মানতে হবে। শুধু তাইনা আমি মনে করি, রাষ্ট্রের আইনের প্রতি তার একটা শ্রদ্ধাবোধ ধাকা উচিৎ। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে, তিনি যেমন রাষ্ট্রের কাছে অনুগত থাকবেন। তেমনিভাবে আইনের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল হবেন। আইন তাকে মানতেই হবে।’
এ ব্যাপারে জেলা পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ‘চেইন অব কমান্ড অনুযায়ী আমরা পুলিশ সুপারের কমান্ড মানতে বাধ্য। তাই তিনি আমাদের যেভাবে নির্দেশ দিয়েছেন, আমরা সেভাবে নির্দেশনা পালন করেছি। আমরা রাষ্ট্রীয় সালামে অংশ গ্রহণ করেছি। স্যার কেন অংশ গ্রহণ করেন নি। এটা আমরা কেমন করে বলি।’
নাম না দেয়ার শর্তে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রত্যেকেই তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তবে সরকারি কর্মকর্তাদের জাতীয় দিবসের আনুষ্ঠানিকতা যথাযথভাবে পালন করা উচিত এবং রাষ্ট্রীয় আচার অনুযায়ী তা তিনি মানতে বাধ্য।’
আরও পড়ুন: স্বাধীনতা দিবসে খুলনায় উন্মুক্ত নৌবাহিনীর যুদ্ধ জাহাজ ‘বানৌজা অপরাজেয়’
ব্রাহ্মণবাড়িয় জেলা প্রশাসক দিদারুল আলম বলেন, ‘আমি তাকে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর সময় বলেছিলাম। কিন্তু তিনি উপস্থিত থাকলেও শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাননি। আজও একই বিষয় হয়েছে। তিনি উপস্থিত থাকলেও তার দফতরের অন্য কর্মকর্তারা রাষ্ট্রীয় সালাম ‘গার্ড অব অনারে’ অংশ গ্রহণ করেন। তিনি পাশে দাঁড়িয়ে থাকলেও রাষ্ট্রীয় শ্রদ্ধাচারে অংশ গ্রহণ করেননি।’
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘তিনি জেলা পুলিশ বিভাগের প্রধান হিসেবে, একটি শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান হিসেবে এমনটি করতে পারেন না। রাষ্ট্রের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তিনি বাধ্য। তবে তিনি কেন রাষ্ট্রীয় আচারে অংশ গ্রহণ করেন না, এটি তিনিই ভালো বলতে পারবেন।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক প্রতিবেদককে বলেন, ‘অফিসে আসেন। মোবাইলে বলা যাবে না। রোজার মাসের পরে আসেন। চা খেতে খেতে বলা যাবে।’