এক বছরেরও কম সময় আগে এই পরিবারগুলো আশ্রয় নিয়েছিল পদ্মা সেতু কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড এলাকার নদী তীরে। তাদের অনেকেই তিন থেকে পাঁচবার নদীভাঙনের শিকার হয়ে ফসলি জমি, বসতভিটা হারিয়ে পথে বসেছিল। এরপর সরকারের অনুমতিক্রমে ওই এলাকায় অস্থায়ীভাবে বসতি গড়ে তোলে তারা। কিন্তু এখন সেই ঠাঁই থেকেও তাদের সরিয়ে দেয়ার নির্দেশনায় আরও একবার অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে পরিবারগুলো।
স্থানীয়দের মতে, এখানে ঘরবাড়ি সরিয়ে দিলে শুধু পরিবারগুলোই নয়, তাদের সন্তানদের শিক্ষাজীবনও হুমকির মুখে পড়বে।
রহিমা খাতুন, যিনি এর আগেও তিনবার নদীভাঙনের শিকার হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা ছিল, হয়তো এখানেই এবার স্থায়ীভাবে ঘর বাঁধতে পারব। কিন্তু সেতু বিভাগের চিঠি পেয়ে আবারও ভেঙে পড়েছি। এখন কোথায় যাব, কীভাবে চলব— কিছুই জানি না।’
অন্যদিকে আলাউদ্দিন বেপারী বলেন, ‘আমাদের কোনো জমি নেই, থাকার জায়গা নেই। ঘর তোলার টাকাও নেই। সরকার যদি ঘর ভেঙে দিতে চায় দিক, আমরা যামু না। রোহিঙ্গাদের সব সুবিধা আছে, আর আমরা এই দেশের মানুষ হয়েও থাকতে পারি না!’

এই অস্থায়ী বসতিতে রয়েছে একটি মাদ্রাসা, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং দুইটি মসজিদও।
আরও পড়ুন: পদ্মায় ফিরেছে তীব্র ভাঙন, আতঙ্কে নদীপাড়ের বাসিন্দারা
স্থানীয় শিক্ষার্থী ফাতেমা আক্তার বলেন, ‘আমরা চাই মাদ্রাসাটা এখানেই থাকুক। মাদ্রাসা না থাকলে লেখাপড়া করব কোথায়?’
পাইকপাড়া এলাকার নুরু মিয়া বলেন, ‘গত ছয় মাস স্কুল বন্ধ ছিল। তিন মাস হলো আবার পড়াশোনা শুরু হয়েছে। এখন যদি স্কুল ভেঙে ফেলা হয়, তাহলে ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।’
এদিকে, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুনর্বাসনের আশ্বাস দেয়া হলেও এখনও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
শরীয়তপুরের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদ হোসেন বলেন, ‘পদ্মার ভাঙনে আশ্রয়হীন হয়ে পড়া মানুষদের পুনর্বাসনের জন্য সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। তাদের খোঁজখবর নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
প্রসঙ্গত, গত সাড়ে তিন বছরে শরীয়তপুরে নদীভাঙনে ঘরহারা হয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার। তাদের অনেকেই এখনো খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছে।