লোকবল সংকটে বেহাল দশা চুয়াডাঙ্গা সরকারি ছাগল উন্নয়ন খামারের

১ সপ্তাহে আগে
লোকবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে চুয়াডাঙ্গা সরকারি ছাগল উন্নয়ন খামারের কার্যক্রম। ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের জাত সংরক্ষণ ও প্রজননের জন্য খামারটি গড়ে উঠলেও প্রতিষ্ঠার পর থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভেটেরিনারি সার্জন পদটি শূন্য। আর মোট ১৩টি পদের বিপরীতে ১১টি পদ শূন্য। এতে খামারে ছাগল উৎপাদন কমছে প্রতি বছর। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বললেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা।

১৯৯৬ সালে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের পৌরকলেজ পাড়ায় ১০ একর জমির উপর গড়ে উঠে সরকারি ছাগল উন্নয়ন খামার। ২২৫টি মা ছাগী ও ৫০টি পাঠা নিয়ে খামারের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে ৩৮৮টি পাঠা ও ছাগী রয়েছে। খামার শুরুর সময়ের থেকে বর্তমানে মাত্র ১১৩টি ছাগল বেশি রয়েছে।

 

গত ২৯ বছরে খামারটির বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। তবে ব্ল্যাক বেঙ্গল গোট জাতের ছাগলের জাত সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে এ খামারটি গড়ে উঠেছিল। এ জাতের ছাগলের মাংস সুস্বাদু ও বিশ্ব বাজারে চামড়ার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। লোকবল সংকটের কারণে খামারটি বর্তমানে মুখ থুবড়ে পড়েছে।

 

আরও পড়ুন: চুয়াডাঙ্গার ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল দেশের বিখ্যাত

 

খামারে ১৩টি পদের বিপরীতে ২ জন দায়িত্ব পালন করছেন। খামার প্রতিষ্ঠার পর থেকে শূন্য ভেটেরিনারি সার্জনের মত গুরুত্বপূর্ণ পদটি। একটি করে উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, অফিস সহকারী, ৬টি গোট অ্যাটেনডেন্ট ও দুটি নৈশ প্রহরীর পদ শূন্য। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও হিসাব রক্ষক কাম ক্যাশিয়ার পদে ২ জন দায়িত্ব পালন করছেন। ভোমরা স্থলবন্দর ও দামুড়হুদা থেকে দুইজন প্রেষণে এসে গোট এটেনডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন।

 

দীর্ঘদিনেও নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি রিচার্জ সেন্টার ও কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র। যার ফলে ব্ল্যাক বেঙ্গল গোট জাতের ছাগল হুমকির মুখে পড়ছে। স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত সময়ে খামারে লোকবল সরবরাহ করা সম্ভব হলে সরকারের লক্ষ্য সফল হবে, নয়তো বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

 

খামারিরা বলেন, কর্মসংস্থানের জন্য দেশে এ জাতের ছোট-বড় খামার গড়ে উঠছে। লাভজনক ব্যবসা। ছাগলের রোগ বাইল কম হয়। বছরে দুই বার বাচ্চা দেয়। খামার থেকে ছাগল বেশি বেশি সরবরাহ করতে পারলে উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

 

বর্তমানে খামারে প্রাপ্ত বয়স্ক, বাড়ন্ত ও বাচ্চা পাঠা এবং ছাগী রয়েছে ৩৮৮টি। ২০১৭-১৮ অর্থ বছর থেকে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের মার্চ পর্যন্ত ১০৩৫টি পাঠা ও ৮৯৩টি ছাগী বিতরণ করা হয়েছে। খামারে দিনদিন ছাগল উৎপাদন কমছে জানান কর্মচারীরা।

 

ছাগল খামারে কর্মরতরা জানান, লোকবল আর কিছু থাকলে ছাগল উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। দুই জন গোট অ্যাটেনডেন্ট প্রেষণে এসে কাজ করছে। ছাগল নিয়ে সারা দিন কাজ করতে হয়। এ জাতের ছাগলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

 

আরও পড়ুন: ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালনে এত সুবিধা!

 

তবে জনবল সংকটের কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে জানিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা বলছেন, দ্রুত বিষয়টির সমাধান হবে। চুয়াডাঙ্গা সরকারি ছাগল উন্নয়ন খামারের প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা কে. এম. সাদ্দাম হোসেন জানান, ১৩ জনের মধ্য দুই জন স্থায়ী ভাবে আর দুই জন প্রেষণে দায়িত্ব পালন করছেন। ভেটেরিনারি সার্জন ও ভেটেরিনারি কম্পাউন্ডার দুটি পদ শূন্য রয়েছে। পদ দুটি গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসা সেবার জন্য দুটি পদে লোকবল প্রয়োজন। লোকবল সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দ্রুত সময়ে সমাধান হবে।

 

রোগবালাই, পালন বিষয়ে খামারিদের সব সময় পরামর্শ দেয়া হয় জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এ অঞ্চলের পরিবেশের সঙ্গে সহজে মানিয়ে নিতে পারে গোট জাতের ছাগল। সরকারি খামারে বিশুদ্ধ ছাগল পাওয়া যায়। তবে চাহিদা থাকলেও শতভাগ বিতরণ করা সম্ভব হয় না। এ এলাকা ছাগলের উর্বর ভূমি হিসেবে খ্যাত।

 

উল্লেখ্য, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে খামারে ৫১০টি ছোট-বড় পাঠা ও ছাগী ছিল। চলতি অর্থ বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত খামারে ৩৮৮টি পাঠা ও ছাগী রয়েছে। অর্থাৎ আগের অর্থ বছরের চেয়ে ১২২টি ছাগল কম রয়েছে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন