পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, এলাকার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গ্রামের বিবাদমান দুই গ্রুপ সাচ্চু এবং হারুন পক্ষের লোকজনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এই বিরোধে যুক্ত হয় গ্রামের হাসিম মিয়ার পরিবার। গ্রাম্য দলাদলিতে হাসিমের ৬ ছেলেও দুই দলে বিভক্ত হয়ে পড়েন। এর মধ্যে ৪ ছেলে, নোয়াব মিয়া, আব্দুল হক মিয়া, ফজলুল হক মিয়া ও শহীদুল হক মিয়া সাবেক চেয়ারম্যান হারুনের পক্ষের ১১টি গোষ্ঠির সাথে অবস্থান নেয়।
অন্যদিকে অপর দুই সন্তান জহিরুল হক ও নুরুল হক গ্রামের অপরপক্ষ শাবত আলীর গোষ্ঠির সাচ্চুর মিয়ার পক্ষে অবস্থান নেয়। এরমধ্যে গতকাল রাতে আব্দুল হাসিম মিয়ার স্ত্রী শতবর্ষী বৃদ্ধা মোসামাৎ বিবি বেগম মারা যান। এর আগে বিবি বেগম ছোট ছেলে নুরুল হকের পরিবারের সাথে গ্রামের বাড়িতে বসবাস করতেন। নুরুল হক কুমিল্লায় বেকারী ব্যবসার সাথে যুক্ত আছেন।
মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে নূরুল হক কুমিল্লা থেকে নিজবাড়ির উদ্দেশ্যে ভোরে রওনা হন। কিন্ত তিনি কুমিল্লা থেকে বাড়িতে আসার আগেই হারুনপন্থি গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত চার ভাই তাদের মায়ের দাফন সম্পন্ন করেন। পরে নূরুল হক বাড়িতে এসে দেখেন মায়ের দাফন সম্পন্ন হয়ে গেছে। এ নিয়ে নূরুল হক ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
আক্ষেপ করে বলেন, আমার বাড়িতে রেখে মাকে সেবা যত্ন করতাম। কিন্তু আমি আসার আগেই মায়ের দাফন সম্পন্ন হয়ে গেছে। এ বিষয়ে তিনি গ্রামবাসীর কাছে তার ভাইদের বিরুদ্ধে বিচার চান।
আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পরপর ৩টি গুলিতে লুটিয়ে পড়েন বিএনপি নেতা, পাঠানো হলো ঢাকায়
এ সময় নুরুল হক ও তার অপর ভাই জহিরুল হক একমত পোষণ করেন। পড়ে মায়ের দাফন নিয়ে দুই ভাই চার ভাইয়ের সাথে বাগবিতণ্ডায় যুক্ত হয়। পরে এই বাগবিতণ্ডা থেকে সংর্ঘষে রূপ নেয়। পরে তা দুইপক্ষ হারুন ও সাচ্চু গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়। এক পর্যায়ে তা কয়েক গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে।
সংঘর্ষ চলাকালে সাচ্চু পক্ষের নাসির উদ্দিন (৬৫) নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়। এসময় টেটা, তীর আর ইট-পাটকেলের আঘাতে উভয়পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়। ভাঙচুর ও লুটপাট করাহয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বাড়িঘর।
বিস্ফোরিত হয় অন্তত ত্রিশটি ককটেল। পুরো গ্রামজুড়ে তাণ্ডব চালানো হয়।
এদিকে পরবর্তী হামলার আশঙ্কায় গ্রামের লোকজন বসতবাড়ি থেকে মূল্যবান মালামাল অন্যত্র নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন।
গ্রামের বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম আমিন জানান, গ্রামে এমন নৈরাজ্য আমরা আর দেখতে চাই না। গ্রামের বাসিন্দারা আতঙ্কে এলাকা ছাড়ছেন।
তিনি বলেন, পুলিশ আসলেও গ্রামের পরিস্থিতি এখনো থমথমে। যেকোনো মুহূর্তে আবারো ভয়াবহ সংঘর্ষে লিপ্ত হতে পারে দুটি পক্ষ। আমরা সাধারণ মানুষ হিসেবে এমন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ আর দেখতে চাই না।
আরও পড়ুন: সালিশে সমাধানের বদলে দফায় দফায় সংঘর্ষ, রণক্ষেত্র ব্রাহ্মণবাড়িয়া
এদিকে নিহতের কন্যা সাবিনা আক্তার কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমার পিতাকে যারা হত্যা করেছে আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
নিহতের স্ত্রী দেলুয়ারা বেগম বলেন আমি আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই। তিনি বলেন, প্রয়োজনে বাড়ি বিক্রি করে স্বামীর মামলা পরিচালনা করব।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আজহারুল ইসলাম জানান, সংঘর্ষের খবর পেয়ে প্রথমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাইরে চলে যাওয়ায় সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
তবে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এলাকায় চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এই ঘটনায় থানায় কোনো মামলা হয়নি।
]]>
৩ সপ্তাহ আগে
৪







Bengali (BD) ·
English (US) ·