এর আগে মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) দুপুর ১টার দিকে ছেঁউড়িয়ার লালন মেলার মাঠে মাদক ব্যবসায়ীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে রাজুর ওপর হামলা চালায় এবং বেধড়ক মারধর করে আহত করে।
আহত সাংবাদিক রাজু আহমেদ বাদী হয়ে বুধবার রাতে কুমারখালী থানায় এজাহার দায়ের করেছেন। তিনি অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা এডিশন ও ঢাকা পোস্ট-এর কুষ্টিয়া প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
গ্রেফতাররা হলেন রিন্টু (২০), কুষ্টিয়া শহরের হরিশংকরপুর চালের বর্ডার এলাকার মৃত হোব্বার ছেলে এবং ফাহিম (২০), কুমারখালীর ছেঁউড়িয়া বিশ্বাসপাড়া এলাকার ওবায়দুলের ছেলে। তারা দুজনই পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার জিয়াউর রহমান বলেন, ‘সাংবাদিক রাজু আহমেদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত দুই আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।’
জানা গেছে, সাংবাদিক রাজু আহমেদ লালন মেলায় পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলেন। এ সময় মঞ্চের পাশে একদল মাদক ব্যবসায়ী পূর্বপরিকল্পিতভাবে তার ওপর হামলা চালায় এবং বেধড়ক মারধর করে। এতে গুরুতর আহত হন রাজু আহমেদ।
আরও পড়ুন: লালন মেলায় সাংবাদিকের ওপর মাদক ব্যবসায়ীদের হামলার অভিযোগ
এ ঘটনায় কুষ্টিয়া প্রেসক্লাব, কুমারখালী প্রেসক্লাবসহ জেলার সর্বস্তরের গণমাধ্যমকর্মীরা তীব্র নিন্দা, ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা। এছাড়া কুষ্টিয়া প্রেসক্লাব ও কুমারখালী প্রেসক্লাব লালন তিরোধান দিবসের সংবাদ কাভারেজ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আহত সাংবাদিক রাজু আহমেদ বলেন, ‘লালন মেলায় প্রায় ৩০০টি গাঁজার দোকান বসেছে। সেখানে রাতদিন প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি ও সেবন করা হয়। আমি সংবাদ সংগ্রহের সময় মাদক সিন্ডিকেটের লোকজন পূর্বপরিকল্পিতভাবে আমার ওপর হামলা চালায় এবং বেধড়ক মারধর করে। এ ঘটনায় জড়িত সবাইকে দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে থেকেই শত শত গাঁজা ব্যবসায়ী দোকান বসিয়েছে। প্রশাসনের সামনেই অবাধে মাদক বিক্রি ও সেবন চলছে। সোমবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের অফিসে এক মিটিংয়ে ডিসির সামনে মাদক ব্যবসার বিষয়টি তুলেছিলাম। তখনই বলেছিলাম, মাদক ব্যবসায়ীদের কারণে লালন মেলায় সাংবাদিকদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। আজ সেই আশঙ্কাই সত্যি হলো।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, লালন মেলায় শত শত গাঁজার দোকান বসেছে। সেখানে প্রকাশ্যে মাদক সেবন ও বিক্রি হচ্ছে। মাদক কারবারিদের দখলে রয়েছে লালনের মাঠ। তাদের কারণে মেলায় অনিরাপদ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অথচ প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
সাংবাদিক রাজুর ওপর হামলার ঘটনায় কুমারখালী প্রেসক্লাবের সভাপতি লিপু খন্দকার ও সাধারণ সম্পাদক সোহাগ মাহমুদ খান জরুরি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘সাংবাদিক রাজু একজন পরিশ্রমী ও দায়িত্বশীল সংবাদকর্মী। তার ওপর হামলা মানে সাংবাদিক সমাজের ওপর হামলা। দ্রুত হামলাকারীদের গ্রেফতার ও লালন মেলা এলাকা থেকে মাদক কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।’
প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকরা জানান, রাজু আহমেদ লালন মেলার সংবাদ সংগ্রহ করছিলেন। এ সময় মাদক সিন্ডিকেটের সদস্যরা তার ওপর হামলা করে বেধড়ক মারধর করে আহত করে। তারা বলেন, ‘এই ন্যক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। অন্যথায় আমরা কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।’
আরও পড়ুন: পদ্মায় ইলিশ রক্ষা অভিযানে ৫০ হাজার টাকার জাল জব্দ
কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবু মনি জুবায়েদ রিপন বলেন, ‘লালন মেলার মাঠে সাংবাদিক রাজুর ওপর মাদক ব্যবসায়ীরা হামলা করেছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’
তিনি আরও জানান, সাংবাদিক রাজুর ওপর হামলা ও নিরাপত্তাজনিত কারণে কুষ্টিয়া প্রেসক্লাব লালন তিরোধান দিবসের সংবাদ কাভারেজ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রসঙ্গত, অসাম্প্রদায়িকতা ও মানবতার প্রতীক ফকির লালন সাঁইয়ের জীবনদর্শন যুগে যুগে মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে। আগামী ১৭ অক্টোবর কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে পালিত হবে তার ১৩৫তম তিরোধান দিবস। এ উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী সংগীতানুষ্ঠান ও লালন মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
তবে মেলা শুরু হওয়ার আগেই সেখানে মাদকের হাট বসেছে। প্রকাশ্যে শত শত গাঁজার দোকানে দিনরাত গাঁজা বিক্রি ও সেবন চলছে। প্রভাবশালীদের ছায়াতলে প্রশাসনের সামনেই এসব অপরাধ সংঘটিত হলেও প্রশাসন রহস্যজনকভাবে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা ও সচেতন মহল।
]]>
১ সপ্তাহে আগে
৩







Bengali (BD) ·
English (US) ·