প্রথমবারের মতো ইউনেস্কো, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরসহ একাধিক আন্তর্জাতিক ও জাতীয় প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় আয়োজিত এ উৎসবে দেশ-বিদেশের পুরোহিত, গবেষক ও মণিপুরী নৃত্যশিল্পীরা অংশ নেন।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) সকালে ধর্মীয় সাজে তেতইগাঁও গ্রাম ও মণিপুরী কালচারাল একাডেমি প্রাঙ্গণ জেগে ওঠে নতুন রূপে। সকাল থেকেই পুরোহিত ও স্থানীয় বিশিষ্টজনরা জলাশয়ে অঞ্জলি দিতে জড়ো হন। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, এই অঞ্জলি চলাকালে অনেকের ওপর দৈবশক্তি ভর করে, এবং তারা মোহগ্রস্ত হয়ে জলাশয়ের পানিতে নৃত্য ও গীতিতে অংশ নেন।
এরপর এক প্রতীকী শোভাযাত্রায় গ্রামের পথে ফিরে আসেন তারা। শোভাযাত্রার অংশ হিসেবে দুই কলসি পানি এনে তা দেবতার সন্তুষ্টিতে ছিটিয়ে দেওয়া হয়। নয়জন দেবদাস ও সাতজন দেবদাসীর মাধ্যমে ধর্মীয় শক্তিকে জাগ্রত করা হয়, যা মণিপুরী ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী দেবতাদের উপস্থিতির প্রতীক।
এই ‘লাই-হরাউবা’ উৎসব মূলত মণিপুরী সৃষ্টিতত্ত্ব ও পুরাণের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। লোককথা অনুসারে, একসময় পৃথিবী ছিল জলমগ্ন। সাত দেবীর নৃত্য দেখে নয় দেবতা মাটি নিক্ষেপ করেন, যার ফলে পৃথিবীতে স্থলভাগ সৃষ্টি হয়। এই কাহিনি থেকেই জন্ম নেয় ‘লাই-হরাউবা’ নৃত্য।
আরও পড়ুন: মণিপুরী ভাষা রক্ষায় প্রাণান্তর ছুটছেন বৃন্দা রাণী
উৎসবে অংশ নেয়া দেবদাস ও দেবদাসীদের যথাক্রমে মৈবা ও মৈবী বলা হয়। দিন-রাত চলা এ উৎসবে পূজা-অর্চনার পাশাপাশি নারী-পুরুষের বন্ধনা-গীত ও লোকনৃত্য পরিবেশিত হয়।
আয়োজক সংস্থার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সমেরেন্দ্র জানান, প্রথমবারের মতো এমন বৃহৎ পরিসরে আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় ‘লাই-হরাউবা’ আয়োজন করতে পেরে তারা আনন্দিত। শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) গভীর রাত পর্যন্ত উৎসবটি চলতে থাকে।
মণিপুরী সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ইতিহাস, সংস্কৃতি ও সৃষ্টিতত্ত্বকে ধারণ করে চলা এই উৎসব একটি প্রাচীন ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক হিসেবে গণ্য করা হয়।