রাস্তার দুর্ভোগে লক্ষ্মীপুর পৌরবাসী

১ সপ্তাহে আগে
দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে বেহাল দশায় লক্ষ্মীপুর পৌরসভার বেশিরভাগ সড়ক। খানাখন্দে ভরা এসব সড়কে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। কিছু সড়কের যানবাহন চলাচলতো দূরের কথা, এখন মানুষের চলাচলাই দায়। এতে করে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন পৌরবাসী।

পৌরবাসীর অভিযোগ, নিয়মিত পৌর কর পরিশোধ করেও নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ বলছেন, সড়কগুলো দ্রুত সংস্কারে উদ্যোগ নেয়া হবে।


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় লক্ষ্মীপুর পৌরসভা। ২৮.২৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় ১ লাখ ৩২ হাজার ২২০ জন মানুষের বাস। পৌর কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মোট সড়কের দৈর্ঘ্য ২১০ কিলোমিটার। এর মধ্যে পাকা ও আধাপাকা সড়ক রয়েছে ১৫৩ কিলোমিটার।


এদিকে শনিবার (১২ এপ্রিল) সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১৪ নং ওয়ার্ডের সৈয়দ এরশাদ হোসেন সড়কটির এখন বেহালদশা। ২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কটি গত ১২ বছরে কোনো ধরনের সংস্কার না হওয়ায় এখন যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অথচ এ ওয়ার্ডের সঙ্গে জেলা শহরের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম এই সড়ক। ওয়ার্ডের বাসিন্দারাও তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে এই সড়ক দিয়ে যেতে হয় ভোটকেন্দ্রে। তাছাড়া পাশের ইউনিয়নের হাজারো মানুষ এ সড়ক ব্যবহার করে জেলা শহরে যাতায়াত করছেন। সড়কের বেহাল দশার কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বাসিন্দারা।
 

ভারী বর্ষণ ও বন্যার সময় এসব নিচু রাস্তা তলিয়ে যায়। ছবি: সময় সংবাদ



১৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সফিক উল্ল্যাহ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এটি নামেই পৌরসভা, কিন্তু দীর্ঘ বছরেও রাস্তাটি সংস্কার করা হয়নি। ভোটের সময় সবাই প্রতিশ্রুতি দেয় কিন্তু পরে আর কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না। অনেক কষ্ট করে আমাদের চলাচল করতে হয়।’


একই ওয়ার্ডের বাসিন্দা অহিদ উল্ল্যাহ বলেন, ‘আমরা এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে পারছি না। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে সময় মতো হাসপাতালে নেওয়াও দায় হয়ে পড়ে। রাস্তা খারাপের কারণে প্রায়ই অটোরিকশা উল্টে মানুষ আহত হয়। ভোটের সময় এই ওয়ার্ডের ভোট কেন্দ্রে যেতে নানা সমস্যায় পড়তে হয়। কোমলমতি বাচ্চারাও এই ওয়ার্ডের একমাত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতে অসুবিধায় পড়তে হয়। বর্ষায় কাদামাটি মাড়িয়ে চলাচল করতে হয় স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের।’


১৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর (সাবেক) জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘এই ওয়ার্ডটি অত্যন্ত বেহালদশা আছে। প্রায় ১৫ হাজার মানুষের বাস এখানে। ওয়ার্ডবাসীর চলাচলের একমাত্র রাস্তা এটি। এছাড়া আশপাশের ইউনিয়নের বাসিন্দারাও এই সড়ক ব্যবহার করে জেলা শহরে যাতায়াত করছেন। চারপাশের মানুষের যাওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও এই মূল সড়ক সংস্কারে কেই কর্ণপাত করছে না। এতে জনগণের ভোগান্তি দিন দিন বাড়ছে। টানা গত ৮ বছর কাউন্সিলর থাকাকালে একাধিক বার পৌর কর্তৃপক্ষকে বলার পরও কোনো সমাধান মেলেনি।



শুধু এই সড়কই নয়, নাজুক অবস্থা পৌরসভার অন্যান্য সড়কগুলোরও। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে বেহাল দশা সড়কগুলোর। পাকা সড়কে উঠে গেছে কার্পেটিং। শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় রাস্তায় ধুলো ঢেকে যাচ্ছে চারপাশ। খানাখন্দে ভরা রাস্তায় হেলেদুলে চলছে যানবাহন। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনাও।
 

ভেঙে যাওয়া রাস্তায় ধুলার রাজ্য। ছবি: সময় সংবাদ



এলাকাবাসীর অভিযোগ, নামে মাত্র পৌরসভার বাসিন্দা তারা। নিয়মিত পৌরকর দিয়ে এলেও নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। গেল ১৬ বছরেও এসব সড়কে কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। এমন বাস্তবতায় দ্রুত সড়কগুলো সংস্কারের দাবি জানান তারা।


পৌর আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী নাহিদা সুলতানা বলেন, ‘রাস্তার অবস্থা এত খারাপ রিকশায়ও যাওয়া যায় না, পায়ে হেঁটে যাওয়াটাও অনেক কষ্ট। পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের এই রাস্তাটি দ্রুত সংস্কার করা হলে আমাদের অনেক উপকার হতো।’


পৌরসভার ১০ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা শামছুন নাহার বলেন, ‘প্রয়োজনীয় কাজে শহরে যেতে হলে রাস্তার কারণে রিকশার ঝাঁকুনিতে আমাদের শরীর ব্যথা হয়ে যায়। পরের দিন শোয়া থেকে উঠতে দায় হয়ে পড়ে।’


পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুমন বলেন, ‘পৌরসভার রাস্তাঘাটের যে অবস্থা প্রতিনিয়ত এখানে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মানুষ আহত হয়। আমরা পৌরসভায় বাস করি, প্রতিনিয়ত পৌর করও দিচ্ছি। অথচ রাস্তাঘাটের বেহাল দশা। অবস্থার দৃষ্টে মনে হচ্ছে পৌরসভায় বাস না করে গ্রামে বা চরে বাস করা আরও ভালো হতো।’


সড়কের বেহাল দশার কথা স্বীকার করে পৌর প্রশাসক মো. জসীম উদ্দিন বলেন, ‘গত বন্যায় বেশ কিছু রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সত্যিকার অর্থে পৌরসভার রাস্তার অবস্থা নাজুক। ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রকল্পের আওয়াতায় প্রায় ১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। সব বরাদ্দ বিবেচনা করে আমরা অগ্রাধিকার ভিক্তিতে রাস্তাগুলোর কাজ শুরু করব। তাছাড়া বরাদ্দে অপ্রতুলতার কারণে আমরা সব রাস্তা সংস্কার করতে পারছি না। তবে বর্তমান সরকার পৌরসভার উন্নয়নে বড় প্রজেক্ট অনুমোদন দিয়েছে। এ প্রজেক্টের বরাদ্দ এলে আমরা সব রাস্তা সংস্কারের উদ্যোগ নেব।’

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন