শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে এক সহযোদ্ধার ফোনে আকরামের নিহত হবার খবর পৌঁছালে তার বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে আসে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওয়েল্ডারের কাজ শিখে সংসারের সচ্ছলতা আর নিজের ভবিষ্যৎ গড়ার আশায় রাশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন উপজেলার লালপুর হোসেনপুর গ্রামের মোরশেদ মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ আকরাম। তিন ভাই ও দুই বোনসহ পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে আকরাম ছিল সবার বড়। আকরামদের সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী তার দিন মজুর বাবা মোরশেদ মিয়া ভরসা। স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে নিয়ে কোন রকমে দিনাতিপাত করছিলেন পরিবারের সদস্যরা।
এরমধ্যে, আকরামের এক বোনের বিয়ে দিতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন আকরামের বাবা মোরশেদ। এ অবস্থায় ওয়েল্ডারের কাজ শিখিয়ে আত্মীয় স্বজনের সহযোগিতায় গত এগারো মাস আগে আকরামকে রাশিয়া পাঠানো হয়। রাশিয়ায় যাবার পর গত আট মাস সেখানকার একটি চায়না কোম্পানিতে ওয়েল্ডার হিসেবে চাকরি করে আকরাম। বেতন খুব বেশি না পেলেও তার উপার্জনে পরিবার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করে। ফলে মোরশেদ মিয়ার অসচ্ছল পরিবারটি সচ্ছলতার স্বপ্ন বুনতে থাকে রাশিয়ায় প্রবাসী আকরামকে নিয়ে। কিন্তু বিগত আড়াই মাস আগে আকরাম দালালের প্রলোভনে পড়ে রুশ সেনাবাহিনীতে চুক্তিভিত্তিক যোদ্ধা হিসেবে যুক্ত হয়। অংশ নেন ইউক্রেন যুদ্ধে। রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেয়ার ছবিও নিজের ফেসবুকে আপলোড করেছিলেন তিনি। কিন্তু ইউক্রেনের মিসাইল হামলায় ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় তার স্বপ্নের যাত্রা।
আকরামের বাবা মোরশেদ মিয়া জানান, কোম্পানিতে ভালো বেতন না পাওয়ায় দালালদের প্রলোভনে পড়ে বিগত আড়াই মাস আগে চুক্তিভিত্তিক যোদ্ধা হিসেবে আকরাম যোগ দেন রুশ সেনাবাহিনীতে। শর্ত ছিল, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সম্মুখ-সারিতে থাকার। এতে পরিবারের পক্ষ থেকে নিষেধ করা হলেও আকরাম জানিয়েছেন তার আর ফিরে আসার উপায় নেই। এরইমধ্যে আকরাম বাবাকে জানিয়েছিলেন, তার রাশিয়ার ব্যাংক একাউন্টে ৪ লাখ টাকা জমা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ১০ বাংলাদেশিকে রাশিয়ায় পাচার, বাধ্য করা হয় ইউক্রেন যুদ্ধে
আকরামের মা মোবিনা বেগম কান্না কণ্ঠে সাংবাদিকদের জানান, যুদ্ধ চলাকালে ছেলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হলেও গত ১৩ এপ্রিল থেকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় আকরামের। রাশিয়ায় অবস্থানরত পরিচিতজনরাও তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না।
শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে তার এক সহযোদ্ধা ফোন করে জানান, যুদ্ধে গিয়ে ইউক্রেন সেনাবাহিনীর মিসাইল হামলায় আকরাম নিহত হয়েছেন। ফোনে জানানো হয়, আকরামের ইউনিটের কয়েকজন যোদ্ধা ইউক্রেন বাহিনীর মিসাইল হামলায় মারা গেছেন। এরপর থেকে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে আকরামের মৃত্যুর খবরে তার বাড়ি আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুর হোসেনপুর গ্রামে শোকের ছায়া নেমে আসে। ছেলের ছবি নিয়ে মা মোবিনা বেগম বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। শোকে হতবিহ্বল পরিবারের অন্য সমস্যরা।
শোকাহত পরিবারের সদস্যরা মরদেহ দেশের মাটিতে ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি ক্ষতিপূরণ পেতে বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা কামনা করছেন।
এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাফে মোহাম্মদ ছড়া বলেন, ‘আমি বিকেলে এ ধরনের
একটি খবর লোক মারফতে জানতে পেরেছি। পরিবারের সদস্যরা যোগাযোগ করলে, সঠিক কাগজ পত্রসহ যুদ্ধের এলাকার নাম বলতে পারলে, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।’