রমজানের আমলগুলো যেন বিফলে না যায়

১ সপ্তাহে আগে
পবিত্র মাহে রমজানের সবগুলো রোজা যারা কেবলমাত্র আল্লাহপাকের সন্তুষ্টির খাতিরে রেখেছেন তারা অবশ্যই বড় সৌভাগ্যবান। এখন কাজ হচ্ছে, রমজানের বিভিন্ন পুণ্যকর্মগুলো বছর ব্যাপী জীবিত রাখা। আমরা যদি বছরের প্রতিটি দিন আল্লাহপাকের আদেশ-নিষেধ মেনে চলে জীবন অতিবাহিত করি তাহলে অবশ্যই আল্লাহতায়ালা আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকবেন।

রমজানের পর অধিকাংশ মসজিদে মুসল্লির সংখ্যা অনেক কমে গেছে। যেখানে আগে না গেলে মূল মসজিদের ভিতরে নামাজ আদায়ের সুযোগ পাওয়া কষ্টকর ছিল, পড়তে হতো বারান্দায় বা বাহিরে আর সেখানে এখন নামাজ শুরু হওয়ার পরেও মসজিদে স্থান পেতে কোন সমস্যা হয় না। 


রমজানে যুবকদের একটি বড় সংখ্যা মসজিদে বাজামাত নামাজ আদায় করতে দেখা যেত কিন্তু এখন তার সংখ্যা অনেক কমেগেছে। বাজামাত নামাজ আর পুণ্যকর্ম কি কেবল রমজানের জন্যই? অবশ্যই না। বছরের প্রত্যেকটি দিনের জন্যই বাজামাত নামাজ আদায় ও পুণ্যকর্মের গুরুত্ব রয়েছে। 

 

মূলত আমাদের রোজা তখনই আল্লাহর কাছে গ্রহণীয় হবে যখন আমরা রমজানের পর বাকী এগারো মাস রমজান মাসের দিনগুলোর মতই নিজের জীবন অতিবাহিত করব। রমজানে যে বিষয়গুলো প্রশিক্ষণ নিয়েছি তা বাকী দিনগুলোতে কাজে লাগাতে হবে তাহলেই আমাদের রোজা আল্লাহর দরবারে গ্রহণীয়তার মর্যাদা পাবে।

 

আরও পড়ুন: যেসব কারণে অভিশপ্ত ইহুদিরা


মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লাম বলেছেন, 

 

পাঁচ বেলার নামাজ, এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমা এবং এক রমজান থেকে পরবর্তী রমজান পর্যন্ত মধ্যবর্তী পাপের প্রায়শ্চিত্ত হয়ে যায়। শর্ত হলো, মানুষ যদি বড় বড় গুনাহ এড়িয়ে চলে। (মুসলিম)


 

রমজান মাসের রোজার পর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখার গুরুত্ব ইসলামে অপরিসীম। শাওয়াল মাসের রোজা সম্পর্কে হাদিসে বিশেষভাবে উল্লেখ রয়েছে। যেমন হজরত আবু আয়্যূব আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, হজরত মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 

 

যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখে এবং পরবর্তীতে (ঈদের দিন বাদ দিয়ে) শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা রাখে সেক্ষেত্রে সে যেন গোটা বছরই রোজা রাখলো। (মুসলিম) 


 

অপর এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে হজরত ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসের রোজা রাখল, এরপর শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখল, সে সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর ন্যায় গোনাহমুক্ত হয়ে গেল। (আল মুজামুল আওসাত)


নামাজ আর রোজার সমন্বয়ে মানুষের মাঝে আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। তা এভাবে যে, নামাজ আত্মাকে পবিত্র করে এবং রোজা হৃদয়কে আলোকিত করে। 
ফলশ্রুতিতে নিষ্ঠাবান ব্যক্তি রোজা দ্বারা আধ্যাত্মিকতার এক নতুন রাস্তায় পরিচালিত হয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টির ছায়াতলে চলে আসে। পবিত্র কুরআন বলে, রোজা তোমাদের মাঝে তাকওয়া অর্থাৎ খোদা-ভীতি সৃষ্টি করবে।


এই তাকওয়া কীভাবে সৃষ্টি হবে? বস্তুত রোজা এমন ইবাদত যা মানুষের প্রতিটি ইন্দ্রিয়কে নিয়ন্ত্রণ করে। যদি ইন্দ্রিয়কে নিয়ন্ত্রণ না রেখে কেউ রোজা রাখে তবে তা রোজা নয় বরং অন্য কিছু। 
খোদা-ভীতির সৃষ্টি এভাবেই হয় যে, মানুষ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজের মন-মেজাজ ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে আল্লাহর ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দেয়। ফলে ধীরে ধীরে তার অবাধ্য আত্মা নিয়ন্ত্রণাধীন হয়ে পড়ে। ঐ সকল কর্ম হতে সে দূরে সরে পরে যা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অসন্তুষ্টির কারণ হয়। আল্লাহপাক আমাদেরকে ক্ষমা করুন আর রমজানের পবিত্র আমলগুলো জীবন্ত রাখার তৌফিক দিন, আমিন।

লেখক: কলামিস্ট

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন