বাংলাদেশের পোল্ট্রি খাতে গত আড়াই মাসে একটি গুরুতর সংকট সৃষ্টি হয়েছিল, যা খামারিদের জন্য বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বিশেষ করে মুরগির বাচ্চার দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়া, সিন্ডিকেটের প্রভাব এবং ফিডের দাম বেড়ে যাওয়া খামারিদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
সাংবাদিকদের তৎপরতা এবং সরকারের পদক্ষেপ দেশের পোল্ট্রি খাতের জন্য আশার আলো হিসেবে কাজ করেছে বলে জানায় বিপিএ।
জানা যায়, হাতেগোনা গুটি কয়েক করপোরেট কোম্পানির সিন্ডিকেট এবং ফিড ও মুরগির বাচ্চার বাজার নিয়ন্ত্রণের অভাবে গত আড়াই মাসে মুরগির বাচ্চার দাম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত স্বাভাবিক বাজার দরে একটি বাচ্চার দাম ৩০-৩৫ টাকা থাকলেও তা ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে বেড়ে ৬০-১০০ টাকায় পৌঁছায়, যা ৫ ডিসেম্বর টানা ৮০ দিন পর্যন্ত চলমান ছিল।
আরও পড়ুন: ধুঁকছে খুলনার পোল্ট্রি শিল্প
বিপিএ জানায়, প্রতিদিন সব ধরনের মুরগির বাচ্চা উৎপাদন হয় ৩০ লাখ পিস। কোম্পানিগুলো একটি মুরগির বাচ্চায় গড়ে ৩০ টাকা বেশি নিয়ে থাকে; যাতে একদিনে ৯ কোটি টাকা দাঁড়ায়। এভাবে গত আড়াই মাসে (৮০দিনে) ৭২০ কোটি টাকা লুটপাট হয়।
পোল্ট্রি ফিড এবং বাচ্চা উৎপাদনকারী করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মিনিটে-ঘণ্টায় দাম বাড়িয়ে অতিরিক্ত মুনাফা আদায় করেছে। এসব অসাধু কার্যক্রম প্রান্তিক খামারিদের ওপর গুরুতর চাপ তৈরি করেছে, যার ফলে অনেক খামারি ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। বাচ্চার এবং ফিডের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে প্রান্তিক খামারিরা তাদের পুঁজি হারাচ্ছেন। অনেক খামারি লাভজনক না হওয়ায় তাদের ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন, এর ফলে শিক্ষিত নারী, বেকার যুবক উদ্যোক্তার প্রায় ৫০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হুমকিতে পড়েছে এবং খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়া বিপর্যস্ত হয়েছে।
মুরগি ও ডিমের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ জনগণের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে গেছে। এটির সরাসরি প্রভাব দেশের অর্থনীতিতে পড়েছে, যেখানে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে।
বিপিএ বলছে, কোম্পানিগুলোর দেয়া মুরগির বাচ্চার উৎপাদন খরচ খতিয়ে দেখতে হবে এবং তারা কী পরিমাণ লাভ করছে এবং তাদের লাভের মার্জিন নির্দিষ্ট করে দেয়া উচিত। কোম্পানিগুলো সরকারি নিয়ম মেনে ব্যবসা পরিচালনা করছে কিনা এবং সঠিক মাত্রায় ভ্যাট দিচ্ছে কিনা তাও খতিয়ে দেখার দাবি জানায় সংগঠনটি।
পোল্ট্রি ফিডের দাম কমানো হলে ডিম মুরগির উৎপাদন খরচ আরও কমানো সম্ভব। ফলে ডিম ও মুরগির দামও সাশ্রয়ী হবে এবং ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে যা সাধারণ মানুষের জন্য গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে। সরকারের এই পদক্ষেপের মাধ্যমে খামারিরা লাভবান হবে এবং দেশের পোল্ট্রি উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করে বিপিএ।
বিপিএ’র পক্ষ থেকে সঠিক সময়ে এবং কার্যকরভাবে বাজারের অস্থিরতা মোকাবেলা করার জন্য ধন্যবাদ জানানো হয় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টাকে।
আরও পড়ুন: মুরগির দাম বাড়ার কারণ জানাল পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন
পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, পোল্ট্রি ফিডের ওপর আরোপিত ভ্যাট ও শুল্ক কমানোর মাধ্যমে ফিডের দাম কমানো উচিত। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে উৎপাদন খরচ কমে যাবে এবং ডিম ও মুরগির দাম সাশ্রয়ী হবে। ক্ষুদ্র খামারিদের জন্য সহজ ঋণ, ভর্তুকি এবং প্রণোদনার ব্যবস্থা চালু করতে হবে, যাতে তারা তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারে এবং উৎপাদন বাড়াতে পারে।
ভোক্তাদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে মুরগি ও ডিম সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য একটি টেকসই ব্যবস্থা চালু করতে হবে, যাতে পোল্ট্রি পণ্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে। পোল্ট্রি খাতে একটি দীর্ঘমেয়াদি কৌশল প্রণয়ন করতে হবে, যেখানে খামারি ভোক্তা এবং সরকার সবার স্বার্থ সুরক্ষিত হয়।
সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও জানায় বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন।
]]>