যশোরে ১৪ পরিবারের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ জামায়াত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে

৩ দিন আগে
যশোরের রূপদিয়ায় দিনদুপুরে ১৪ পরিবারের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে জামায়াত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। রোববার (১৩ এপ্রিল) সকালে যশোর সদরের রূপদিয়া মধ্যপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।

ক্ষতিগ্রস্ত সুফিয়া বেগম জানান, মধ্যপাড়ার ৫০ বছরেরও বেশিসময় ধরে তারা বাস্তুহীন ১৪টি পরিবার বসবাস করছেন। জমির মূল মালিক সাঈদ বক্স তাদের আশ্রয় দেন। তার মৃত্যুর পর জামায়াত নেতা খবির খাঁ ও তার পরিবারের সদস্যরা জমিটি নিজেদের দাবি করে দখল নেয়ার চেষ্টা করছিলেন। বিভিন্ন সময় মামলা করেও তারা ব্যর্থ হন। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে জমি দখল নিতে ফের হুমকি ধামকি শুরু করেন তারা। সর্বশেষ গত ১৩ এপ্রিল সকালে জামায়াতের নেতাকর্মীদের ৬০ থেকে ৭০ জনের একটি সশস্ত্র দল হামলা চালিয়ে ১৪টি বাড়ি ভাঙচুর করে। এসময় বাড়িতে যে থাকা নারী পুরুষের মারধর করেন।


ওই নারীর অভিযোগ, তাদের বাড়িঘর ভাঙচুরের পাশাপাশি সর্বস্ব লুট করে নিয়ে গেছে হামলাকারীরা। খবর পেয়ে পুলিশ আসলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি। যে কারণে ফের হামলার হুমকি দেয়া হচ্ছে।


ক্ষতিগ্রস্ত মিলন হোসেন জানান, রূপদিয়ার খবির খাঁ, জাহিদ আলী, রমজান আলী, সাদ্দাম হোসেন, জুবায়ের হোসেন, আসলামসহ অজ্ঞাত ৪০ থেকে ৫০ জনকে এই হামলায় জড়িত। হামলাকারীরা বেশিরভাগ জামায়াতের স্থানীয় নেতাকর্মী।


ভুক্তভোগী সালমা খাতুন বলেন, হামলাকারীরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে তারা ১৪টি বাড়িঘরে নির্বিচারে ভাঙচুর ও লুটপাট করেন। তাদের লাঠির আঘাতে বেশ কয়েকজন মহিলাও রক্তাক্ত জখম হন। ঘরে থাকা ফ্রিজ, টিভি ভাঙচুর করা হয়। কয়েক লাখ টাকার স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকাও লুট করেন তারা।


শরিফুল ইসলাম নামে অপর এক ভুক্তভোগী বলেন, হামলাকারীদের এলোপাতাড়ি মারধরে আনসার, সুফিয়া, রাজিয়া, জানু, পারভীন ও সালমা বেগম জখম হন। এছাড়া একটি মেয়ে ভাঙচুরের ভিডিও করলে তাকে লাঞ্ছিত করা হয়।


আরও পড়ুন: ঈশ্বরদীতে রিকশাস্ট্যান্ড দখলকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতা গুলিবিদ্ধ


ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, জামায়াত নেতা হিসেবে পরিচিত স্থানীয় প্রভাবশালী খবির খাঁ ও তার লোকজন এখনও তাদের ঘর-বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য বলছেন। না হলে তাদের বাড়ি-ঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হবে বলে হুমকি দিচ্ছেন। যেকোনো সময় আবারও হামলার শিকার হতে পারেন বলে আতঙ্কের মধ্যে সময় কাটাচ্ছেন তারা।


তবে ঘটনার পর থেকে প্রধান অভিযুক্ত খবির খাঁ, জাহিদ আলী, রমজান আলী, সাদ্দাম হোসেনসহ অন্যরা পলাতক থাকায় এ বিষয়ে বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।


এ দিকে মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।


বিএনপির খুলনা‌ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, এখানে নারকীয় তাণ্ডব চালানো হয়েছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন জামাতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িতরা এ কাজ করেছেন। আমরা মনে করি, কোনো রাজনৈতিক দল এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করে না। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও জড়িতদের আটকের দাবি জানাচ্ছি। আমরা মনে করি, জামায়েত ইসলাম দুর্বৃত্তদের কোনো প্রকার আশ্রয় দেবে না।


তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছে। আগামীতে আইনি সহায়তাসহ বাড়িঘর পুনঃনির্মাণেও সহযোগিতা করা হবে।


আরও পড়ুন: মহিষ লুটের ঘটনায় বিএনপির ১১ নেতাকর্মী কারাগারে


এদিকে জামায়াত নেতারা ঘটনাস্থল‌ পরিদর্শন‌ করে ক্ষতিগ্রস্তদের সহানুভূতি জানিয়েছে। এ সময় জেলা আমির অধ্যাপক গোলাম রসুল হামলার সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমরা বরাবরই ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থেকেছি। ক্ষতিগ্রস্তরা বলছে হামলাকারীরা জামায়াতের কর্মী সমর্থক। আমরা বিশ্বাস করি জামাতের কোনো নেতাকর্মী এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে না। ফলে যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের আজ আর্থিকভাবে সহায়তা করেছি। আগামীতে তাদের পাশে থাকব।


এদিকে হামলার ঘটনায় ভুক্তভোগী ইজিবাইক চালক মিলন হোসেন বাদী হয়ে যশোর কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে রূপদিয়ার খবির খাঁ, জাহিদ আলী, রমজান আলী, সাদ্দাম হোসেন, জুবায়ের হোসেন, আসলামসহ অজ্ঞাত ৪০ থেকে ৫০ জনকে এই হামলার জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে।


যশোর কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কাজী বাবুল হোসেন বলেন, আসামিরা ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন। তাদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন