যশোরে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি, ঝুঁকিতে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ

১ সপ্তাহে আগে
যশোরের অভয়নগরে অবৈধ চুল্লিতে অবাধে কাঠ পুড়িয়ে তৈরি হচ্ছে কয়লা। কারখানা থেকে ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশের এলাকায়। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরির হওয়ার পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে গাছ, জমির ফসল ও পরিবেশ। পরিবেশ অধিদফতর বলছে, অবৈধ এ ব্যাবসা বন্ধে শিগগিরই অভিযান চালানো হবে।

যশোরের অভয়নগর উপজেলার সিদ্দিপাশা ইউনিয়ন। নদীর পাড় ঘেঁষে স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে শতাধিক কয়লা তৈরির বিশেষ চুলা (চুল্লি)। মাটি, ইট ও কাঠের গুঁড়া মিশিয়ে তৈরি করা চুল্লিতে প্রতিদিন শত শত মণ কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। অথচ এসব কয়লা কারখানা পরিচালনায় প্রশাসনের কোনো অনুমোদন নেই।

 

জনবসতি এলাকায় জমি নষ্ট করে এসব কারখানা স্থাপন করায় স্থানীয়রা শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। কিন্তু প্রভাবশালীদের ভয়ে তারা কিছু বলতে পারেন না। আব্দুল জলিল নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, ‘এই চুল্লিগুলোতে বিভিন্ন বনজ ও ফলদ গাছ কেটে কাঠ সরবরাহ করা হচ্ছে। চুল্লি থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ার কারণে পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। কাঠ পোড়ানোর সময় যা এ পথ দিয়ে চলাচল করা যায় না।’

 

সমীর কুমার নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘আমরা খুব সমস্যায় আছি। প্রায় ১০ বছর ধরে এ চুল্লি কারবারিরা কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করছে। আশপাশের এলাকার শিশু ও বৃদ্ধরা শ্বাসকষ্টসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ফুল ফলের উৎপাদন কমে গেছে। বিশেষ করে এ এলাকায় পানের চাষ। ধোয়ার কারণে দ্রুত পান হলুদ বর্ণ ধারণ করে। যে কারণে চাষিরা পানের দাম পান না।’

 

সমীরণ বিশ্বাস বলেন, ‘রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়, কিছু অসাধু প্রশাসনিক কর্মকর্তার মদদে দীর্ঘদিন ধরে এই অবৈধ ব্যবসায় চলছে। বিভিন্ন মহলকে মোটা অঙ্কের টাকা দেয়া হয় যাতে তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ না খোলে। তাছাড়া চুল্লির অধিকাংশ মালিক এলাকায় সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত। তাদের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। এলাকাবাসী চুল্লি বন্ধের জন্য প্রশাসের কাছে অভিযোগ দিলে মাঝে অভিযান চালানো হয়। এরপর আবারও পূর্ণ উদ্যমে কয়লা তৈরি শুরু হয়। আমরা চাই এদের স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ করা হোক।’

 

আরও পড়ুন: পরিবেশবান্ধব লিড সনদ পেল আরও ৫ পোশাক কারখানা

 

এদিকে চুল্লি মালিক ও শ্রমিকদের দাবি, দেশে কয়লার চাহিদা থাকায় এ ব্যাবসা পরিচালনা করছেন তারা। এবং তাদের মাধ্যমে কর্মসংস্থান হয়েছে কয়েকশ' মানুষের। হারুন আলী নামে এক চুল্লির মালিক বলেন, ‘বিভিন্ন কারখানা, অভিজাত হোটেলে ব্যবহারের পাশাপাশি মশার কয়েল, ধূপকাঠি, জুয়েলারি, কার্বন বানানোর কাজে ব্যবহৃত হয়। কয়লার চাহিদা থাকায় আমরা তৈরি করছি। আমরা কয়লা তৈরি না করলে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে। তাছড়া এ চুল্লির কারণে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। পরিবেশের কথা বলে আমাদের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। আমরা চাই সরকার আমাদের বৈধতা দিক।’

 

রবিন অধিকারী নামে এক শ্রমিক বলেন, ‘একটি চুল্লিতে ৫ জন করে শ্রমিক কাজ করে। এভাবে আমাদের ইউনিয়নের সহস্রাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। প্রতিদিন ৫শ' টাকা হাজিরায় কাজ করছি‌। পরিবার পরিজন নিয়ে ভালো আছি। দয়া করে আমাদের ক্ষতি করবেন না।’

 

যশোর পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. এমদাদুল হক বলেন, ‘কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরির বিষয়টি আমরা অবগত। এগুলো দূষণ সৃষ্টিকারী। যা পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর। যখন কাঠ পোড়ানো হয়; তখন বাতাসে এক ধরনের সূক্ষ্ম কণা, কার্বন মনোক্সাইড এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক গ্যাস ও রাসায়নিক ছড়িয়ে পড়ে। এটি বায়ু দূষণের একটি প্রধান কারণ এবং শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করে।’

 

অভিযান চালানোর জন্য পরিবেশ অধিদফতর; খুলনার কাছে ম্যাজিস্ট্রেট চাওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘অভয়নগর উপজেলার এসি ল্যান্ডের (সহকারী কমিশনার-ভূমি) সঙ্গে কথা বলেছি। দ্রুতই অভিযান চালিয়ে চুল্লিগুলো গুড়িয়ে দেয়া হবে।’

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন