পিএসএলের পুরো আসর খেলার ছাড়পত্র নিয়ে টুর্নামেন্টের আগেই পাকিস্তানের উদ্দেশে উড়াল দিয়েছিলেন রিশাদ হোসেন। আর নাহিদ রানা গিয়েছিলেন টুর্নামেন্টের মাঝপথে। দুজনের জন্যই দেশের বাইরে এটি প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট। প্রত্যাশা ছিল, দারুণ কিছু অর্জন এবং শিক্ষার ঝুলি নিয়ে ফিরবেন দেশে। তবে তখনও কি তারা জানতেন, সেখানে কি বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে যাচ্ছেন তারা? তখনও কি কল্পনা করতে পেরেছিলেন, একরকম প্রাণ হাতে নিয়ে দেশে ফিরতে হবে তাদের?
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধপরিস্থিতির কারণে গতকাল অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে পিএসএল। তবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার আগেই পাকিস্তান ত্যাগ করেছিলেন নাহিদ রানা এবং রিশাদ হোসেনরা। রাওয়ালপিন্ডি থেকে তাদের সঙ্গেই দেশে ফেরার যাত্রা শুরু করেন বাংলাদেশের দুই ক্রীড়া সাংবাদিকও।
অনলাইন গণমাধ্যম ক্রিকফ্রেঞ্জির ক্রীড়া প্রতিনিধি তাসফিক পলক এবং বিডিক্রিকটাইম প্রতিনিধি মাহরুস প্রত্যয়ের দেয়া তথ্যানুযায়ী, নিরাপত্তা পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করলে রিশাদ নিজে থেকেই তাদের দেশে ফেরার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেন। নাহিদ রানা কিছুটা ভয় পেতে শুরু করলেও রিশাদ এসময় বেশ শক্ত ছিলেন বলে জানিয়েছেন তারা। তবে রাওয়ালপিন্ডিতে ড্রোন হামলার পর এই ক্রিকেটারই নাকি বলেছিলেন, 'মরতে তো হবেই, তবে দেশে থেকে মায়ের কোলে মরতে পারলে ভালো হয়।' একরকম মৃত্যুভয়ই তখন রীতিমতো পেয়ে বসেছিল রিশাদদের।
তবে ক্রিকেটার এবং সাংবাদিকদের ফিরিয়ে আনতে বিসিবির পক্ষ থেকে চেষ্টার কোনো কমতি রাখা হয়নি। বিসিবির সিইও শাহরিয়ার নাফিস এবং সভাপতি ফারুক আহমেদ পুরোটা সময়ই খেলোয়াড় এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। তাদের ফিরিয়ে দেয়ার জন্য পিসিবি প্রধানকে বিশেষভাবে অনুরোধ করেছেন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ। আর সেই অনুরোধের প্রেক্ষিতেই নাটকীয় এক উপায়ে তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড।
আরও পড়ুন: পাকিস্তান সফর অনিশ্চিত হলেও টাইগাররা আরব আমিরাতে যাবে
ক্রিকফ্রেঞ্জি প্রতিনিধি পলকের দেয়া তথ্যানুযায়ী, রাওয়ালপিন্ডি থেকে একরকম রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় দেশে ফেরার যাত্রা শুরু করেন নাহিদ-রিশাদরা। টিম হোটেলে গিয়ে তাদের বাসে যোগ দেন বাংলাদেশি সাংবাদিকরা। একই বাসে ছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার এবং কেইন উইলিয়ামসনের মতো বিশ্বনন্দিত তারকারাও।
পুরো রাস্তা ফাঁকা করে দিয়ে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রিশাদদের বাস নিয়ে যাওয়া হয় রাওয়ালপিন্ডির একটি সেনা ঘাঁটিতে। সেখানে কোনো ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই দ্রুত বিমানে তোলা হয় তাদের। একরকম পলাতক আসামীর মতো করেই পাকিস্তান ছাড়তে হয়েছে ক্রিকেটারদের।
যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে পাকিস্তানে এখন সব ধরনের বিমান চলাচল বন্ধ আছে। নাহিদদের যে বিমানে তোলা হয় সেটি ছিল পাকিস্তান বিমানবাহিনীর বিশেষ একটি বিমান। এই বিমানে করেই দুবাইয়ে এসেছেন এক ঝাঁক বিদেশি ক্রিকেটার।
তবে পথে একটা বিরতি ছিল। রাওয়ালপিন্ডি থেকে মুলতানে আসার পর সেখানে আটকে পড়া ক্রিকেটারদের নেয়ার জন্য কিছুক্ষণের জন্য দাঁড়ায় রিশাদদের বিমান। বিরতিটা ছিল স্বল্প সময়ের। ক্রিকেটারদের নিয়েই আবার উড়াল দেয় বিমানটি।
অবশ্য বিরতি লম্বা হলে বিপদ বাড়তে পারত। কারণ মুলতান বিমানবন্দর থেকে খেলোয়াড়দের নিয়ে বিমানটি ছাড়ার মাত্র ২০ মিনিট পরই সেখানে একটি ক্ষেপণাস্ত্র এসে আঘাত করে। অর্থাৎ অল্পের জন্যই প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন রিশাদ-নাহিদরা।
দুবাই পৌঁছানোর আগে মুলতান বিমানবন্দরে ঘটা ক্ষেপনাস্ত্র হামলার ঘটনা রিশাদ ছাড়া অন্য কেউ জানতেন না। বিমানে থাকাবস্থায়ই কোনো একটি মাধ্যমে এই তথ্য পেয়েছিলেন তিনি। তবে বাকিদের মানসিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে এই তথ্য গোপন করেন টাইগার অলরাউন্ডার। বিপদের মুখে নিজেকে ঠিক এতটাই শক্ত রাখার চেষ্টা করে গেছেন তরুণ লেগ স্পিনার।
দুবাইতে এসে খেলোয়াড়দের পাশাপাশি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন সাংবাদিকরাও। তবে সেখানে অবস্থানের ভিসা ছিল না তাদের। কানেক্টিং ফ্লাইট থাকায় সেখানকার কর্তৃপক্ষ ঢাকার বিমানে তোলার ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
দুবাই থেকে এমিরেটস এয়ারওয়েজে করে বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে পাঁচটায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান রিশা-নাহিদসহ বাংলাদেশি দুই সাংবাদিক।
]]>