মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকালে কাজী বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় সেখানে চলছে মাতম। বিলাপ করে কাঁদছিলেন রানা কাজীর স ৎমা হাসিনা বেগম (৬০)।
তিনি বলেন, এক বছর হয় রানা বাড়িতে আসে না। মঙ্গলবার তার বাড়িতে আসার কথা ছিল। আমি ওর জন্য কম্বল ও শীতের কাপড় রেডি করে রেখে ছিলাম। ওর বাড়ি আসার অপেক্ষায় আমরা এ বছর এখনো কেউ শীতের পিঠা খাইনি। শনিবার ফোনে বলেছিল মঙ্গলবার বাড়িতে এসে পিঠা খাবে। কিন্তু কী হয়ে গেল...।
হাসিনা বেগম বলেন, রানার বয়স যখন এক বছর তখর ওর গর্ভধারিণী মা মারা যায়। পরে রানার বাবা দেলোয়ার কাজী ওরফে ধলু কাজীর দ্বিতীয় স্ত্রী হিসাবে তিনি এই বাড়িতে আসেন। তিনিই কোলে পিঠে করে রানা কাজীকে বড় করেছেন। কোনো দিন রানা আমাকে সৎ মা মনে করেনি। এই বাড়ির ছেলে মেয়েদের মধ্যে রানার সঙ্গে আমার সম্পর্কটা অনেক গভীর। ওর সঙ্গে কথা না বলে আমি কোনো রাতে ঘুমাতে যাইনি। রোববার (২২ ডিসেম্বর) রাতেও ফোন করেন কিন্তু রানার ফোনে রিং বাজলেও সে ফোন ধরেনি। সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) সকালে ফোন দেন। কিন্তু এরপর থেকে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। মঙ্গলবার সকালে ভাগ্যকুলের জাহাজ ব্যবসায়ী জুয়েল মিয়া হাসিনা বেগমকে ধারণা দেন রানার কোনো সমস্যা হয়েছে। তিনি রানার খোঁজ নিতে বলেন। পরে চাঁদপুরে অপর একটি জাহাজের কর্মী রানার সৎ ভাই রিমন কাজী খোঁজ নিয়ে জানান, মেঘনা মোহনায় জাহাজ আল বাখেরার অন্যান্য স্টাফদের সঙ্গে রানাকেও (৪২) কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
আরও পড়ুন: মেঘনায় জাহাজে সাত খুন, পরিচয় মিলল ছয়জনের
এরপরই শ্রীনগর উপজেলার ভাগ্যকুল মান্দ্রা গ্রামের কাজী বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। রানার সৎ মা হাসিনা বেগম আরও জানান, রানার বাবা ধলু কাজী জাহাজের মাস্টার ছিলেন। রানা তার বাবার হাত ধরেই জাহাজে চাকরি নেন। ১০ বছর আগে রানার বাবা ধলু কাজী মারা যান। রানার মায়ের ঘরে চার ছেলে তিন মেয়ে। চার ভাইয়ের মধ্যে রানা ছোট।
রানার বড় বোন রওশন আরা ভাইয়ের স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, জাহাজের এতো গুলো লোককে কুপিয়ে মেরে ফেলা হলো অথচ জাহাজের কোন মালামাল খোয়া গেল না। এর পেছনের ঘটনা কী তা প্রশাসন খুঁজে বের করুক। আমরা আমার ভাইয়ের হত্যার উপযুক্ত বিচার চাই।
রানার বড় ভাই রিয়াদ কাজী বলেন, রানার লাশ চাঁদপুর সদর হাসপাতালে রয়েছে। সেখানে বাড়ির লোকজন লাশ আনতে গেছে। রানার লাশ বাড়িতে আনতে হয়ত বুধবার ভোর হতে পারে। কিন্তুর আমরা এই শোক সহ্য করতে পারছি না।