মেঘনায় ইজারা শর্ত ভেঙে বালু তোলায় বাড়ছে ভাঙন ঝুঁকি

৩ সপ্তাহ আগে
ইজারা বিধিমালা উপেক্ষা করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেঘনা নদীর পূর্বাংশের আশুগঞ্জ চরচারতলা প্রান্ত থেকে একাধিক ড্রেজারের মাধ্যমে অব্যাহতভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে নদীর গতিপথ বদলে যাওয়ার পাশাপাশি ভাঙনের আশঙ্কা করছেন নদীপাড়ের বাসিন্দারা।

ভাঙনের ঝু্ঁকি আশঙ্কায় রয়েছে কেপিআই প্রতিষ্ঠানসহ নদীর দুই পাড়ের সরকারি বিভিন্ন স্থাপনা। এ অবস্থায় জেলা প্রশাসক জানান, ইজারা শর্তভঙ্গ করলে নেয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা।


স্থানীয়রা জানান, গত বছরের ১৭ এপ্রিল জেলা বালুমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার অ্যান্ড কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেডের সামনে মেঘনা নদীতে জেগে ওঠা চর থেকে হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ অনুযায়ী বালু তোলার সিদ্ধান্ত হয়। পরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স কামাল ইন্টারন্যাশনালকে অনুমতি দেওয়া হয়। অনুমতি পেয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ মেঘনা নদী থেকে বালু তোলার কাজ নেয় আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমানসহ দলের কিছু নেতাকর্মী। 

আরও পড়ুন: ‘পদ্মায় বালুমহল ইজারা দিলে লাশ গুনে শেষ করা যাবে না’

ইজারাবিধি অনুযায়ী, আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার অ্যান্ড কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেডের পানি যাওয়া ও বের হওয়ার সামনের জেটি এলাকায় জেঠে ওঠা চর একটি বা দুটি খননযন্ত্র দিয়ে কাটার কথা। কিন্তু মেঘনা নদীর নির্ধারিত সীমানার বাইরে গিয়ে ১০ থেকে ১২টি ড্রেজারের মাধ্যমে বালু তোলা হচ্ছে। এতে আশুগঞ্জ প্রান্তে ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়তে পারে মেঘনার তীরবর্তী এফসিএল, আশুগঞ্জে চরচারতলা এলাকায় মিডল্যান্ড ইস্ট পাওয়ার লিমিটেড, মিডল্যান্ড পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড ও গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড। এছাড়া ভৈরব প্রান্তে বিএডিসি সার গুদাম ও যমুনা অয়েল কোম্পানী লিমিটেড ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।


মেঘনা নদীর পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত ভৈরব বিএসডিসি’র গুদামের সহকারী পরিচালক শিপন চন্দ্র সরকার বলেন, ‘গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর মেঘনার আকস্মিক ভাঙনের কারণে বাড়িঘরসহ তাদের প্রতিষ্ঠানের একাংশ নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এবারো বর্ষা মৌসুমে ভাঙন আতঙ্কে আছেন তারা। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদীতে গভীরতা সৃষ্টি হয়ে পাড় ভেঙে যায়। এখন আমরা শঙ্কায় আছি আমাদের এই বিএডিসি খাদ্য গুদাম যেকোনো সময় ভাঙনের সৃষ্টি হতে পারে। আমরা এ বিষয়টি আমাদের উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আমরা চাই, যেন এই ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।’

 

একাধিক ড্রেজার দিয়ে মেঘনায় কাটা হচ্ছে বালু। ছবি: সময় সংবাদ 


একই পাড়ের যমুনা অয়েল কোম্পানী লিমিটেডের ডিপো ইনর্চাজ মতিউর রহমান বলেন, ‘এখানে প্রায় সময় নদী শাসনের জন্য বালু উত্তোলন করা হয়। কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের কারণে, নদীর গতিপথ পাল্টে গিয়ে নদীর পাড়ে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এই ভাঙনে আমাদের যমুনা অয়েল কোম্পনী লিমিটেডসহ সরকারি প্রতিষ্ঠান ঝুঁকিতে রয়েছে। যদি এই বালু উত্তোলনের ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয়, তাহলে আগামী বর্ষায় এই প্রতিষ্ঠানগুলো ভাঙনের কবলে পড়বে।’


এ ব্যাপারে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের যে চর কাটতে বলা হয়েছে একটি কাটিং ড্রেজার দিয়ে সে চর কাটা সম্ভব না। সে জন্য দুই তিনটা ড্রেজার লাগে। সারা দেশে যেভাবে চলে আমরা সেভাবেই কাজ করছি।’ 


তিনি আরও বলেন, ‘আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার হচ্ছে বাংলাদেশের সম্পদ। এই সম্পদকে রক্ষা করার জন্যই মেঘনার চরটিকে কাটানো হচ্ছে। চরকে সুন্দর করার স্বার্থে এবং আমাদের জেলার স্বার্থে যতটুকু সহনশীলতার মধ্যে থাকা যায় এবং নদীর পাড়ে যেন কোনো ক্ষতি না হয় সেভাবেই আমি চর কাটছি।’

আরও পড়ুন: অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে ৩ জনের কারাদণ্ড

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ও জেলা বালু মহাল কমিটির সদস্য মনজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের যে মাটি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা আইন আছে, সেখানে বলা আছে, অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের কোনো সুযোগ নেই। নদীতে যদি ড্রেজার দিয়ে পরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে কোনো প্রভাব পড়ে না। কিন্তু যখন বাংলা ড্রেজার অর্থাৎ চুষা ড্রেজার দিয়ে এক জায়গা থেকে গভীরভাবে বালু উত্তোলন করা হয়, তখন গর্ত ভরাটের জন্য নদীর পাড় থেকে মাটি বা বালু সরে আসে। তখনই নদীর পাড়ে ভাঙনের সৃষ্টি হয়।’


ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, ‘আশুগঞ্জ সার কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, একটি কারণে সেটি হচ্ছে। তাদের যে নদীর চ্যানেল রয়েছে, সেখানে একটি চর জেগেছে। সে চর অপসারণ না করলে জাহাজ ডুকতে পারে না। সেটি নিয়ে অনেক লেখালেখির পর ভূমি মন্ত্রণালয় আমাদেরকে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছে। সে আলোকে আমরা আইনের ৭ ধারার বলে একটি প্রতিষ্ঠানকে চর কাটার জন্য লিজ দিয়েছি। এখন আমরা খবর পাচ্ছি, যে স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছি, তারা সেখান থেকে বাইরে গিয়ে বালু উত্তোলন করছে। আমরা তাদের সতর্ক করেছি এবং মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছি। যারা ঠিকাদার তাদের বলা হয়েছে, যদি তারা অনিয়ম ঘটায় তাহলে তাদের চুক্তি বাতিল করা হবে।


প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ইজারার নামে প্রতিদিন মেঘনা নদী থেকে গড়ে অন্তত ২০ লাখ টাকার বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন