মে মাসে দেশে ৮৬ নারী ও শিশু হত্যা: এমএসএফ

৪ দিন আগে
মে মাসে দেশে ৮৬ জন নারী ও শিশুকে হত্যা করা হয়েছে, যা গত মাসের তুলনায় ১৭টি বেশি। এ মাসে ধর্ষণের ঘটনা ৫৯টি, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ১৬টি, ধর্ষণ ও হত্যা ৫টি।

মে মাসের ‘মানবাধিকার পরিস্থিতি মনিটরিং’ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায় মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। বিভিন্ন পত্রিকার তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রতি মাসে এমএসএফ এই প্রতিবেদন তৈরি করে।


শনিবার (৩১ মে) সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংস্থাটি।


প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়ার কথা, তা দৃশ্যমান হচ্ছে না। ফলে নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা ঘটছে, যা জাতীয় জীবনে অন্যতম প্রধান উদ্বেগ হিসেবে দেখা দিয়েছে।


মে মাসে দেশে নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা, যেমন: ধর্ষণ, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, যৌন হয়রানি একই ধারাবাহিকতায় চলছে, আত্মহত্যা বেড়েছে, বেড়েছে হত্যার ঘটনা। পারিবারিক সহিংসতা ও শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা গত মাসের তুলনায় কিছুটা কমলেও তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
 

আরও পড়ুন: স্কুলছাত্রীকে অপহরণের পর ধর্ষণ, ইউএনওর ড্রাইভার গ্রেফতার


এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, মে মাসে ৩৬৮টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, যা গত মাসের তুলনায় মাত্র ৬টি বেশি, গত মাসে এর সংখ্যা ছিল ৩৬২। এ মাসে ধর্ষণের ঘটনা ৫৯টি, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ১৬টি, ধর্ষণ ও হত্যা ৫টি। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৬ জন প্রতিবন্ধী কিশোরী ও নারী।


এতে আরও বলা হয়, এপ্রিলের তুলনায় মে মাসে গণপিটুনি, হত্যা, আত্মহত্যা, অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার, সাংবাদিক নির্যাতন, সীমান্তে পুশ ইন, পুলিশের ভয়ে পালাতে গিয়ে মৃত্যু, সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন, রাজনৈতিক সহিংসতা এবং সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা ও আসামির সংখ্যা বেড়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের এই ঘটনাগুলো ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় এমএসএফ গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।


মে মাসে পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। কারা হেফাজতে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। রাজনৈতিক সহিংসতার ৫৪টি ঘটনায় শিকার হয়েছেন ৩৫৯ জন। তাদের মধ্যে ৮ জন নিহত এবং ৩৫১ জন আহত হয়েছে।


আহতদের মধ্যে ৯ জন গুলিবিদ্ধ এবং নিহতদের মধ্যে বিএনপির অন্তর্দ্বন্দ্বে একজন কিশোরসহ ছয়জন, আওয়ামী লীগের অন্তর্দ্বন্দ্বে একজন কিশোর এবং আওয়ামী-জামায়াত সংঘর্ষে জামায়াতের একজন নিহত হয়েছেন। এ মাসে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ওপর দুষ্কৃতকারীদের হামলার ২০টি ঘটনা ঘটেছে এবং এসব ঘটনায় ১৬ জন আহত ও ৫ জন নিহত হয়েছেন।


নিহতদের মধ্যে চারজন বিএনপি এবং একজন আওয়ামী লীগের নেতা ও সমর্থক। এ ছাড়া দুজন আওয়ামী লীগের কর্মী রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে নিহত হন।
 

আরও পড়ুন: বিয়ে বাড়িতে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ, ধর্ষণের পর শিশু হত্যায় গ্রেফতার ৩


এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মে মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সহিংসতার ঘটনায় ১৬টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামির তালিকায় সুনির্দিষ্টভাবে নাম রয়েছে প্রায় ১ হাজার ৭২ জনের। সেই সঙ্গে অজ্ঞাতনামা আসামির সংখ্যা ২ হাজার ৪০০ জন। সারা দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সরকারের পতন-সংক্রান্ত বিভিন্ন মামলায় নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের ৪২২ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপারেশন ডেভিল হান্টে গ্রেফতার হয়েছেন ৩২ জন এবং সারা দেশে পুলিশের বিশেষ অভিযানে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত এবং অন্যান্য মামলায় গ্রেফতার হয়েছে ২৪ হাজার ৭ শত ৩৩ জন।
 

মে মাসে ৪১টি ঘটনায় ১০১ জন সাংবাদিক দেশের বিভিন্ন জেলায় পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় নানাভাবে হামলা, আইনি হয়রানি, হুমকি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। সাইবার নিরাপত্তা আইনে এ মাসে চারটি মামলা হয়েছে। মামলাগুলোতে অভিযুক্ত হয়েছেন সাতজন। মে মাসে বিভিন্ন পর্যায়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনের ১১টি ও জাতিগত সংখ্যালঘু নির্যাতনের চারটিসহ মোট ১৫ ঘটনা ঘটেছে।


প্রতিবেদনে বলেছে, মে মাসে শুরু হওয়া ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) কর্তৃক পুশ ইন কার্যক্রম বাংলাদেশে সীমান্তবর্তী নাগরিকদের জনজীবনে আতঙ্ক ও ভীতি সৃষ্টি করে এক ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। সীমান্তে বিএসএফর ছোড়া গুলিতে দুজন নিহত হয়েছে।


মে মাসে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মোট ৫৫টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে, যা অনাকাঙ্ক্ষিত এবং নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ। অন্তত ৩৪টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে, যেখানে ৭ জন নিহত ও ৩৮ জন গুরুতর আহত হয়েছে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন